“একমাত্র কুলীন ইংরেজরাই অসভ্য এবং নিচু জাতির শাসন করার দায় নিতে পারে।“
-ভারত শাসন বিষয়ে ইংরেজ কবি রুডিয়ার্ড কিপলিং।
“ভারতে বসবাসকারী প্রতিটি ইংরেজ কর্মচারী মনে করেন যে সে রাজার জাতের একজন। ঈশ্বর তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে শাসন করতে।“
-ইংল্যান্ডের সংসদে দেওয়া একজন আইসিএস অফিসারের বক্তব্য।
ট্রেড নট টেরিটরি এই বাণী নিয়ে ব্রিটিশ বনিকেরা লক্ষির আরাধোনা করতে ভারত বর্ষের মাটিতে পা রাখে। উত্তর/দক্ষিন আমেরিকায় ইংরেজ, ফরাসি, স্পেনিয়ার্ডসহ ইউরোপের অনেক জাতি রাজ্য দখলের যে কুখ্যাতি অর্জন করেন তাতে শক্তিশালী ভারতে “শুধু বাণিজ্য, ভূমি নয়” এই বাণী প্রচার ছাড়া তাদের অন্য কোন উপায়ও ছিল না। আয়তন, জনসংখ্যা, সম্পদ, শক্তি সবকিছুতেই ভারতবর্ষ গ্রেট ব্রিটেনের তুলনায় অনেক অনেক গুন বড়।ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এদেশের জিডিপি ওয়াল্ড ইকোনমির প্রায় ২৫%। ১৬০০ সালে আকবরের ট্রেজারীতে ১৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব জমা পড়ে(১৭০০ সালে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড)। অথচ ২০০ বছর পরে ১৮০০ সালে ব্রিটিশ ট্রেজারিতে রাজস্ব আয় জমা পড়বে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড। এদেশের রাজা মহারাজাদের একটু অনুকুল্য পেলেই তারা বাণিজ্যে ব্যপক সফল হতে পারে। এবং তারা সফল হলেন। ১৫৯৯ সালে লন্ডনে ১২৫ জন শেয়ার হোল্ডার ৭২ হাজার পাউন্ড ক্যাপিটাল নিয়ে গড়ে তুলেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।ভারতবর্ষ তাদের মেনে নিলেন। বাদশাহ জাহাঙ্গীর ফরমান জারি করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে কারবারের অনুমতি দিলেন। দিন দিন তদের কারবার বাড়তে লাগল। কারবারের নিরাপত্তায় আসল ব্রিটিশ সেনারা। এদেশের অনেক সেপাই কোম্পানির সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিলেন। ধীরে ধীরে কোম্পানি ভারতবর্ষে বিভিন্ন রাজ্যে রাজাদের বিরোধ এবং স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ল। বাণিজ্যের পথ সুগোম করতেই তারা বিভিন্ন পক্ষে/বিপক্ষে যোগ দিতেন। বাংলায় মসনদ দখলে ষড়যন্ত্রকারীরা কোম্পানির সহায়তা কমানা করে। পরের ইতিহাস সকলেরই জানা।সকলের অলক্ষে বণিকের মানদন্ড হয়ে উঠে রাজদন্ড। শুরু হয় রাজ্য বিস্তার। কোম্পানি বেনিয়ার পোশাক খুলে পরে নিল শাসকের পোশাক। কোম্পানির কর্মচারীরা আয়-ব্যয়ের জাবেদা খাতা ফেলে হয়ে উঠলো শাসনকর্তা।
১০০ বছর সবকিছু ঠিকমতো চলছিল। তারপর এলো ১৮৫৭ সাল। কোম্পানির সেনাবাহিনীর দেশি সেপাইরা বিদ্রোহ করে বসে। একেই বলে দুধ কলা দিয়ে কালো সাপ পোষা। কোম্পানির খেয়ে পরে(যদিও ভারত বর্ষের জনগনের রাজস্ব দিয়ে তাদের পোষা হতো) এখন পুতুল বাদশার আনুগত্য। আর কোম্পানির বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ভাতাভোগী বুড়া বাদশাও (বাহাদুর শাহ জাফর) সেপাইদের কোথায় নাচানাচি করছেন। নিমকহারামী আর কাকে বলে। কিন্তু সুষ্ঠ পরিকল্পনা, সমন্বয় ও নের্তৃত্বের অভাবে হেরে যায় দেশি সিপাহিরা। আবারো প্রতিষ্ঠিত হয় ইংরেজ শ্রেষ্ঠত্ব।
সিপাহী বিল্পবের (ইংরেজদের ভাষায় বিদ্রোহ) পরে কোম্পানির শাসন অবসান ঘটে শুরু হলো ব্রিটিশ রাজ শাসন। মহারানী ভিক্টোরিয়া হলেন ৩০ কোটি ভারতবাসির মহারানী। তার প্রেরিত রাজদূত বা ভাইসরয় সরাসরি ভারতবর্ষ শাসন শুরু করলেন। পৃথিবির এক পঞ্চমাংশ মানুষের ভাগ্য বিধাতা হলেন ভাইসরয় বা বড়লাটবাহাদুর। প্রায় স্বাধীন রাস্ট্র নায়কের মতো তার ক্ষমতা।
বিশাল ভারতবর্ষ শাসন ব্রিটেনের মতো ছোট দেশের জন্য সহজ বিষয় নয়। শাসক তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠিত হলো ইম্পেরিয়াল সিভিল সার্ভিস যা আই.সি.এস(Indian Civil service ) নামে ব্যপক পরিচিত। প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হতো অসাধারন মেধাবী যুবকদের।তারপর ২/১ বছর ব্রিটেনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কঠিন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাদেরকে যোগ্য শাসক হিসেবে গড়ে তোলা হতো। বিশ্বের যে কোন চাকুরীর তুলনায় সন্মানজনক বেতন দেওয়া হতো আইসিএস অফিসারদের। তাদের জন্য ছিল বিশাল বাংলো, সেবার জন্য ভৃত্য এবং আর অনেক সুযোগ সুবিধা। তাদেরকে প্রদান করা হয় অনেক অনেক ক্ষমতা। মানুষকে শাসন করতে পারতেন আবার বিচারও করতে পারতেন।এছাড়া এডভেঞ্চারপ্রিয় ইংরেজ জাতির জন্য বিশাল ভারতের বিস্তীর্ণ ও বিচিত্র পরিবেশের পরতে পরতে লুকিয়ে ছিল অ্যাডভেঞ্চারের প্রলোভন। গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিটি মেধাবী যুবক আই.সি.এস এ যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৮