চার বছরের ছোট শিশু সানিম। সম্পূর্ণ নাম মাহাদি হাসান সা্নিম। বাবা একজন কৃষি বিজ্ঞানী। হয়তো মনে মনে স্বপ্ন দেখেন ছোট শিশুটি বড় হয়ে বাবার মতো বিজ্ঞানী হবে।দেশের সেবা করবে। গতবছরে ছেলেকে স্কুলে দিয়েছিলেন।শিশুটি বাবা-মা এর একমাত্র সন্তান। তাই আদরটাও ছিল একটু বেশি।লেখা-পড়া-হাসি-খেলার মধ্যে শিশুটির দিন কাটছিল। হঠাৎ একদিন শিশুটির হাসি-খেলা-স্কুল সব বন্ধ হয়ে গেল। শিশুটি কঠিন হৃদরোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম "পালমোনারি এট্রেশিয়া" । এদেশে এ রোগের চিকিৎসা নেই। কম খরচে ভারতের বেঙ্গলরে চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু তাতেও খরচ হবে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। মধ্যবৃত্ত পরিবারের পক্ষে এ ব্যয়ভার বহন একেবারেই অসম্ভব।
সানিমের বাবা মোঃ হাসানুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে বাঁধনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাঁধনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ফজলুল হক হলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সংগঠনটি ব্লাড ডোনেশন নিয়ে কাজ করে।কোন মূমুষু রোগির রক্তের প্রয়োজন হলে ডোনার সংগ্রহ করে ছুটে যেতেন রোগীকে বাঁচাতে। কর্ম জীবনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষি পরমানু গবেষনা কেন্দ্রে। দেশকে ক্ষুধামুক্ত করতে নিরলস গবেষনা চালিয়ে যান। কিন্তু আজ নিজের আদরের সন্তানের জীবন রক্ষায় চোখে শুধু অন্ধকার দেখছেন। এ লড়াইয়ে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
এগিয়ে আসলেন সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত অনেক শুভাকাঙ্খী। তারা সানিমের জন্য ডিজিটাল যুদ্ধে নামলেন।
কয়েকজন ব্লগ লেখে সানিমের জন্য সহযোগীতা চাইলেন।
View this link
View this link
View this link
View this link
অনেকেই তাদের ফেসবুক একাউন্টে স্টেটাস দিলেন। মোবাইল ফোন, ই-মেইলে অনেকের কাছে পৌছে গেল সাহায্যের আবেদন। অনেকেই সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। মোঃ হাসানুজ্জামানের মোবাইল নম্বর বিকাশ করা হল এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকে অনলাইন একাউন্ট খোলা হল।
Apollo Hospitals এর রিপোর্ট।
বেঙ্গলরের একটি হাসপাতাল কতৃপক্ষের পত্র
প্রচারনার কয়েকদিনের মধ্যেই (১৮ মার্চ) ফেসবুকে "সানিমের জন্য ভালবাসা" নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়। তারপর যুদ্ধের গতি বদলে যায়। প্রথমে কয়েকজন গ্রুপে যুক্ত হয়।তারা তাদের পরিচিতদের গ্রুপে যুক্ত করে। তারা আবার তাদের পরিচিতদের। তিন গোয়েন্দার ভুত থেকে ভুতে। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিচ্ছিন্ন ভাবে যারা কাজ করে যাচ্ছিলেন তারা গ্রুপে একই প্লাটফরমে চলে আসলেন। কাজের মধ্যে দেখা দিল চমৎকার সমন্বয়। বিভিন্ন জেলা, প্রতিষ্ঠানে কারা কাজ করবে তা ঠিক করা হল। বাংলাদেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলা হল। চীন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানসহ অসংখ্যদেশে ফেসবুক যোদ্ধারা বীরের মতো যুদ্ধ করে যাচ্ছে। শুরু হল ব্যপক ক্যাম্পেইন। দেশে বিদেশে মহানুভব মানুষগুলো সাহায্যের হাত বাড়ানো শুরু করলেন। প্রথম সাহায্য আসে ২০ই মার্চ। টঙ্গির স্কুলের এক ছোট মেয়ে বিকাশে ১০০ টাকা প্রেরন করে একটি মহৎ কাজের শুভ সূচনা করে।
ক্যাম্পেইনঃ
ফেসবুকে প্রতিদিন গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়তে লাগল। প্রতিদিন অসংখ্য স্টেটাস ও কোমেন্টে গ্রুপের ওয়াল ভরে গেল। কে কতো তহবিল সংগ্রহ করল প্রতিদিন তার আপডেট দেওয়া শুরু হলো। বাংলাদেশ কৃষি পরমানু গবেষনা কেন্দ্রে(BINA) এর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি তাদের একদিনের বেতন সাহায্যের তহবিলে জমার ঘোষনা করল। বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইন্সটিটিউটের (IRRI) মহাপরিচালক সানিমকে সাহায্য করার জন্য অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার টাকা সানিমের চিকিৎসায় প্রেরণ করলেন।
মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট এর বিজ্ঞপ্তি
ফেসবুকে আবেকঘন অনেক পোস্ট, কমেন্ট আসল।
একজন লেখলেন, “আসুন এবার বাচ্চার জন্মদিনটা ঘটা করে পালন না করে বা বাচ্চাকে ১ টা দামি খেলনা না কিনে দিয়ে এই টাকাটা আমরা সানিমকে দেই।ওকে আমরা বেশি বেশি ভালবাসা দেই”
আরেকজন লেখলেন, “ব্যাক্তিগত ভাবে আমি সানিম কে চিনি না কিন্তু নারী হিসেবে নিজের ভিতর যে মাতৃত্ব বোধ আছে তার জন্যই আজ আমি সানিম কে চিনেছি আর ভাবছি তার মার কথা কি কষ্টই না হচ্ছে তার নিজ সন্তানের কষ্ট দেখে ...কিছু করতে না পারুন অন্তত তার জন্য দোয়া করুন সৃষ্টি কর্তা যেন তাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেন...........ভালবাসা তোমার জন্য.....”
গ্রুপের আরএক সদস্য লেখলেন, “এত সুন্দর হাসিমাখা ছোট্ট এই মুখখানি আর তার চারপাশের সবাইকে ভালবাসায় ভরিয়ে রাখতে পারবে না!!! এটা যে ভাবতেও কষ্ট হয়!!! মাত্র ৪ বছর বয়স সামিনের। সে আক্রান্ত "পালমোনারি এট্রেশিয়া" নামক মারা্ত্বক হৃদরোগে। তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু তার পরিবারের সামর্থ্য নেই এত টাকা সংগ্রহের।আমরা এখানে সমবেত হয়েছি সামিনের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের উদ্দ্যেশে। আশাকরছি আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সামিন আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।কি বন্ধুরা! আমরা কি পারবনা ?মায়াময় এই পৃথিবীটাকে আরও ভালো করে দেখার জন্য ৪ বছরের সানিমের দিকে আসুন দুহাত বাড়িয়ে দিই...”
সানিমের স্নেহময়ী মা লেখলেন, “ আমার সানিমের জন্য সকলের ভালবাসা দেখে সত্যি আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না।আল্লাহ যেন আমার সানিমকে ভাল করে দেন।আর সবার কাছে আমি যে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাব বুঝতে পারছি না”
জবাবে অনেকে অনেক কিছু লেখলেন। একজন লেখলেন, “সানিম শুধু আপনার নয়। সানিম আমাদের সবার। আপনি একদম চিন্তা করবেনা। এতো মানুষের দোয়া ও ভালবাসার বৃথা যেতে পারে না। সানিম সুস্থ হয়ে যাবে। ইনশাআল্লা।”
গ্রুপের আর একজন লেখলেন, “আপু আপনি চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। সামিন এখন শুধু আপনার একার সন্তান নয়, সামিন এখন আমাদের সবার সন্তান। প্রতিদিনই আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে সামিন আমার কে হয়? আমি উত্তরে বলি সামিন আমাদের সন্তান। সারা দুনিয়া জুড়ে সামিনের শুভাকাঙ্খিরা কাজ করে যাচ্ছে, এত্ত্ব মানুষের দোয়া, এত্ত্ব মানুষের ভালবাসায় ইনসআল্লাহ আমাদের সামিন সুস্থ হয়ে উঠবে।”
আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর সবকিছু যান্ত্রিক হয়ে যায় নি। পৃথিবীতে এখনো ফুল ফুটে, পাখি গায়, সূর্য আলো দেয়, চাঁদ জোসনায় ভরিয়ে দেয়। মানুষের মধ্যে মানবতা আছে, আছে ভালোবাসা ।
সানিমের জন্য এই যুদ্ধ প্রথমে আসম যুদ্ধ মনে হয়েছিল। চোখে শুধু অন্ধকার দেখেছিলাম। এখন আলো দেখতে পাচ্ছি। এ যুদ্ধে অনেক যোদ্ধা তৈরী হয়েছে, তারা বীরের মতো লড়ছে। আমাদের আরো যোদ্ধা দরকার। এ যুদ্ধে আপনি শরীক হবেন কি? আপনার সামান্য অবদান আমাদের এ যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করবে। সানিমের জন্য ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিন। যুদ্ধে নিজে অংশগ্রহন করুন অন্যকে অংশগ্রহন করতে বলুন। এ লেখা ফেসবুকে শেয়ার করুন অন্যকে শেয়ার করতে বলুন।
শেষ করব প্রখ্যাত গায়ক আব্দুল জব্বারের একটি গানের কলি দিয়ে।
“মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি।”
এ যুদ্ধ আমার, এ যুদ্ধ আপনার, এ যুদ্ধ সবার। এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
সহায়তার জন্যঃ
Account Name- Md. Hasanuzzaman
Saving Account No.- 156.101.119461
Dutch bangle Bank Limited
Mymensingh.
For foreign donor, Need a SWIFT code. please see the code: DBBL BD DH100
অথবা বিকাশ করুনঃ 01712242797
যোগাযোগঃ
Md. Hasanuzzaman
Scientific Officer
Bangladesh Institute of Nuclear Agriculture(BINA)
Mymensingh.
Mobile: 01712242797
E-mail: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:১২