ব্রাম স্টোকার একবার স্বপ্নে দেখেছিলেন যে অক্টোপাসের মতো দেখতে একটি প্রাণী তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, তার ঘাড়ে শ্বদন্ত বসিয়ে রক্ত চুষে খাচ্ছে। স্বপ্ন দেখে ধরফর করে উঠে বসেই তিনি লেখা শুরু করে দেন, কারণ স্বপ্নের স্মৃতি মানুষ সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভুলতে থাকে। এই স্বপ্নের সারাংশ থেকেই স্টোকার ড্রাকুলা গল্পটির প্লট দাড় করিয়েছিলেন এবং টানা পাঁচ বছর পরিশ্রম করে, বিভিন্ন বই পত্র, মিউজিয়ামের নথি ঘেঁটে এবং স্থানীয় রূপকথা ইত্যাদি একসঙ্গে করে বিখ্যাত "ড্রাকুলা" বইটি লিখেছিলেন। দুঃস্বপ্ন থেকে গল্প লেখার এই ধারণাটি আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমি নিজের কিছু দুঃস্বপ্নকে পরিমার্জিত করে কয়েকটি গল্প লিখেছি। ভাবছি, ধারাবাহিক ভাবে, বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন দুঃস্বপ্ন নিয়ে লিখব। তবে বলে রাখি, এই লেখাগুলো আমি ঘুম থেকে উঠে লিখিনি, ঘুম থেকে উঠে এক-দুই লাইনে টুকে রেখেছি, পরে ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিনতে লিখেছি।
কুকুরের ডাক
১.
বান্ধবীর বিয়ে হতে রাত করে ফিরছিল তিতলি, সঙ্গে ওর বড় ভাই শিমুল। রাস্তার বিপরীত দিক থেকে ছুটে যাচ্ছিল একটা কুকুর। দেখতে কেমন বিদঘূটে, কালো লোম গুলো কেমন যেন অশরীরী। তিতলির পাশ দিয়ে যাবার সময় এতটাই গা ঘেঁষে যাচ্ছিল যে, তিতলি প্রায় আঁতকে উঠে পাশে সরে যাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সরে যেতে পারেনি সে, কুকুরটার একটা পা ওর পায়ের পাতার উপর দিয়ে ঘঁষা লেগে চলে গেল, কুকুরের ধারালো নখের আঁচড়ে বেশ একটা ক্ষত তৈরি হলো জায়গাটাতে। আর্তনাদ করে উঠল তিতলি। শিমুল উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? তিতলি জবাব না দিয়ে প্রবল যন্ত্রণায় চেপে ধরল ক্ষতটা। কুকুরটা মুহুর্তে থমকে গিয়ে তিতলির দিকে তাকাল। কি ভয়ংকর চোখ কুকুরটার! এক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকেই আবার ছুটে গেল, যেদিকে যাচ্ছিল।
২.
ঘরে ফেরার পর ক্ষতটা এ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে ব্যান্ডিজ করে দিল তিতলির মা। তার চাচা ডাক্তার, সে কিছু ওষুধের নাম দিল, সেগুলো খেতে বলল তিতলিকে। ব্যাথা কমে গেলেও কুকুরের ভয়ার্ত চোখের দৃষ্টি ভুলল না তিতলি।
৩.
সেই ঘটনার পর তিন মাস কেটে গেছে। এখনো ক্ষত সারেনি তিতলির। যেমন ছিল, তার চেয়েও দগদগে হয়েছে। বেশ ক’জন বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে সে, ওষুধও খাচ্ছে, কিন্তু ক্ষত মোটেও কমছে না। প্রায় রাতে সেই কুকুরের ভয়ার্ত দৃষ্টি মনে পড়ে তিতলির।
৪.
আরো এক সপ্তাহ পরের কথা, প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে আজ তিতলির পায়ে। সে নিজেও জানে না, কেন এত ব্যাথা হচ্ছে, কেনই বা সেরে যাচ্ছে না। জলাতঙ্কের টিকাও সে নিয়েছে, কিন্তু কিছু হচ্ছে না কিছুতেই। তার উপর, ব্যাথার জায়গাটা যতটা না যন্ত্রণা দিচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে চুলকানি। খুব চুলকাচ্ছে জায়গাটা, কিছুক্ষণ পর পর অদ্ভুত রকম কামড় দিচ্ছে ভিতর থেকে। সেই রাতে শেষমেষ ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে হলো তিতলিকে।
৫.
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিতলি আবিস্কার করল, তার ক্ষত প্রচন্ড রকম চুলকাচ্ছে, অবিশ্বাস্য রকম চুলকাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়, কেমন একটা বিদঘূটে মোচড় দিচ্ছে তিতলির পায়ে। সে দ্রুত উঠে বসে নিজের পায়ের উপর ঝুঁকে পড়ল ক্ষতটা দেখার জন্য। দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না সে! তার পায়ের ভেতর ক্ষত হতে একটা জীবন্ত শতপদী বের হয়ে আসছে, অর্ধেক বাইরে সেটার, অর্ধেক ভেতরে। একটু একটু করে বেরোচ্ছে।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার দিল তিতলি!
৬.
কোন ওষুধে কাজ হচ্ছে না, প্রতি ২-৩ মাস পরপর অদ্ভুত অদ্ভুত শতপদী পোকা বেরোচ্ছে, এমন ভয়ংকর কেস কোন ডাক্তার কখনো পায়নি। ক্ষতটাও বড় হয়ে চলেছে দিন দিন। ক্ষত যত বড়, শতপদীও ততো বড়। তাই শেষমেষ বাধ্য হয়ে পা-টা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল ডাক্তাররা।
৭.
অপারেশনের দিন ডাক্তাররা ভয়াবহ চমকে গেল, চিৎকার দিয়ে উঠল একজন নার্স। কারন তিতলির কাটা পা থেকে শুধু শতপদী আর শতপদী বেরোচ্ছে। অপারেশন থিয়েটার ছেঁয়ে গেছে শতপদীতে! নার্সের চিৎকার ছাপিয়ে, দূরে কোথাও কুকুরের ডাক শোনা গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১৬