আমি সবসময়ই বায়োমেট্রেক সিম রিজেষ্ট্রেশনে বিদেশি মুনাফাখোর কোম্পানিগুলোর হাতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণের কর্তৃত্ব, স্পর্শকাতর তথ্যগুলো গ্রহণ ও সংরক্ষণের অধিকারের বিরোধিতা করেছি, একাধিক পোষ্টও দিয়েছিলাম।
অবৈধ সিম কার্ড ব্যবহার রোধে শুরু থেকে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, তার অধিকাংশই সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সম্ভবত এর ব্যাপকতা কেউ অনুধাবন করতে পারেনি।
সরকারের ব্যার্থতার মধ্যে অন্যতম ছিল, সিম কার্ড সহজলভ্যতা এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় বিনা মূল্যে ফুটপাতে বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
দ্বিতীয়টি হলো, সিম কার্ড অ্যাকটিভেশনে সরকারের বা বিটিআরসির নিয়ন্ত্রণ না রাখা। ফুটপাত থেকে সিম কার্ড কিনে তখনই তা সচল করা হচ্ছিল। যার ফলে সিম কার্ড ব্যবহার করে অপরাধ করার পথটি পরোক্ষভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বললে ভুল হবে না। তৃতীয়টি হলো, মুঠোফোন অপারেটরদের যতেচ্ছ ভাবে সিম কার্ড বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহক বৃদ্ধির কৌশল। এর মাধ্যমে অবৈধ VOipরা টোকাই, হতদরিদ্র মহিলার নামে ১৬ হাজার সিম কিনে নিরাপদে ব্যাবসা চালিয়ে গেছে।
আমার জানা মতে আমাদের বেশিরভাগ NID ত্রুটিষুক্ত, আমার নিজেরটা্ পিতার নামে বানান ভুল, বউয়ের টাও একই অবস্থা।
২০০৮ এ সরকার যখন ভোটার আইডি বা NID জাতীয় পরিচয়পত্র যখন করা হলো, তখন কিন্তু শুরুতেই তৃতীয়পক্ষের হাতে এর ডাটাবেইজ হস্তান্তর করতে চায় নি সরকার। কারণটুকু খুবই সঙ্গত... জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা। যদিও অনেক পরে ছাড় দেয় মোবাইল কম্পানি, বিকাশ মোবাইল ব্যাঙ্কিং ইত্যাদির কারনে।
আমাদের দেশে নাগরিক পরিচিতির জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিভিন্ন কাজে পাবলিক তথ্য সংগ্রহ করে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন ভাবে, এসব সংস্থা ডাটা সংগ্রহের সময় কখনোই অন্য সংস্থার ডাটা মিলিয়ে দেখে না। তাই সবার নামেই গোজামিল, বানানে ভুল, পিতার নামে মাতা, জন্মতারিখ উল্টাপাল্টা,
১। আদমসুমারির ডাটা,
২। ইপিআই টিকাদান, জনস্বাস্থ ডাটা
২। সিটি কর্পরেশনের হোল্ডিং ডাটা,
৩। ভোটার আইডি বা NID জাতীয় পরিচয়পত্র।
৪। MRP পাসপোর্ট।
৫। ড্রাইভিং লাইসেন্স।
৬। জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট।
অন্তত NID, MRP, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জন্মনিবন্ধন, এই ৪ টি পরিচয় পত্র সমন্নিত অর্থাৎ একই ডাটা থাকা উচিত।
সময় বেশী লাগলেও এসব ত্রুটিমুক্ত করে এর যে কোন একটি মারফত সিম ভেরিফাই/বিক্রি করা যাতে পারে।
সিম ও সেট একজনকে দু-তিনটির বেশী অনুমতি না দেয়াই উচিত।
সিম ও সেট একসাথে নিবন্ধিত না হলে সরকারের মুল উদ্দেস্য সফল হবে না।
সিম ক্রয়ের সময়ই সেট/ডিভাইস নিবন্ধন করতে হবে, বা QR কোড বা ভিন্ন এক্টিভেশন কোড মারফত গ্রাহক নিজেই নিবন্ধন করবে। সিমগুলোর সাথে সেট সমন্নিত করতে হবে, অর্থাৎ একব্যক্তির সিম অন্যকেউ বা ভিন্ননামে নিবন্ধিত সেটে কাজ করবে না। সেট হস্তান্তর/বিক্রি করলে ক্রেতার সিমের মাধ্যমে পুননিবন্ধন করতে হবে। সেট/ডিভাইস IMEI নম্বর ITU সমর্থিত একটি ইউনিক নম্বর। সিম-সেট সমন্নিত ভাবে নিবন্ধিত হলে ডুব্লিকেট চাইনিজ ডুব্লিকেট IMEI বা জিরো IMEI র দৌরাত্ত্ব বন্ধ হয়ে যাবে। প্রচলিত ভিওআইপি সিষ্টেমে শত শত সিম লাগানো, এতে কোন হ্যান্ড সেট ব্যবহৃত না হলেও ভিন্ন কৌশলে একটি IMEI থাকার কথা, তা না হলে বাংলাদেশী মোবাইল অপারেটর সিম কাজ করার কথা না।
এভাবে সিম ও সেট নিবন্ধনে মোবাইল চোর ও VOIP মেসিনগুলো অকার্যকর করা সম্ভব।
সিম ভেরিফিকেশনের কাজটি করবে সরকারের পক্ষে বিটিআরসি। বা সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে যে কোন মোবাইল কম্পানীও করতে পারে। সেটা করতে হবে NID / passport / Driving licence / জন্মনিবন্ধন, এই চার রকম ডকুমেন্ট যেকোন একটি মারফত। ভেরিফিকেশনে গরমিল পাওয়া গেলে সংশোধনের সুযোগ রেখে সিম কার্ড সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আর একজন ব্যক্তির নামে একই অপারেটরের দুটির বেশি সিম নিবন্ধন দেওয়া ঠিক না, (দিয়েছে ২০টি) একজনকে ২০টি সিমের অনুমতি দিলে একজন টোকাই বৈধভাবেই একশতটি সিমের মালিক হতে পারে, এতে সরকারের মুল উদ্দেস্য ব্যাহত হবে, অবৈধ voip র বৈধ প্রসার হবে। টেলকমের কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারের নিয়ন্ত্রন ১০০% বিটিআরসির থাকতে হবে।
বায়োমেট্রিক আংগুল ছাপ .. সিম রি-রেজিষ্ট্রেশনের যে মহাযজ্ঞ চলছে এর খরচেই আমাদের NID ত্রুটিমুক্ত করা যেত। সিম ও সেট রেজিষ্ট্রি হয়ে বিপদমুক্ত হত রাষ্ট্র।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৫৬