খবরঃ আমাদের ক্রিকেট এর রোলমডেল সাকিব আল হাসান আর সজীব ওয়াজেদ জয় একই মঞ্চে...
এই ঘটনায় কি হবে একটু চিন্তা করি আসুন...। দেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের মধ্যে এখনো দুইটি গোষ্ঠীর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেটের সাপোর্টার আর ভারতীয় ক্রিকেটের সাপোর্টার। একেবারে ১০০ ভাগ না হলেও কমবেশি ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এটা সত্যি যে পাকিস্তানের সাপোর্টাররা দেশের রাজনীতিতে বি,এন,পি + জামাত আর ভারতের সাপোর্টাররা আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করে (এই কথায় অনেকেই তীব্র প্রতিবাদ জানাবে আমি নিশ্চিত। আপু এবং ভাইজানেরা, আপনারা তর্কের খাতিরে তর্ক করতে পারেন, কিন্তু নিজের দিকে এবং নিজের আশেপাশের লোকজনের দিকে তাকালে কথাটার মাজেজা বুঝবেন। সো প্লীজ, যাহা সত্য, তাহা মানিয়া নিন, উহা যত উদ্ভটই হোক না কেন...)।
যখনি পাকিস্তান বা ভারতের খেলা হয়, আমরা দুইটা কথা খুব শুনি... ১, 'খেলার সাথে রাজনীতি মেলাবেন না'। এই মহান দর্শন সমৃদ্ধ বাণী কাদের মুখ থেকে আসে বলেন দেখি? জ্বী হ্যা, এইটা আসে পাকি সাপোর্টারদের মুখ থেকে। যেই দেশ আমাদের ৩০ লক্ষ্য মানুষকে একটিমাত্র যুদ্ধে হত্যা করেছে, তাদের সাপোর্ট করতে এইরকম কিছু দর্শন রেডি রাখা লাগে। খুন আর রেপের মামলাতে যেমন আসামীপক্ষের হয়ে লড়াই করার মত উকিলের অভাব এই দেশে হয়না, তেমনি এই দর্শন কপচানোর মত লোকের-ও দেশে অভাব নাই। ২, আরেকটা বাণী এর পাশাপাশি এখন শোনা যায়, এক নাম্বার বাণীর বিরোধীতা করে আরেক গ্রুপ বলে, 'খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবো না তো কিসের সাথে মিশাবো? যেই দেশ আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে খুন করেছে, তাদের কেউ কোন বিষয়ে সাপোর্ট করতে পারে, এটা ভাবতেই আমার ঘেন্না হয়।' এই বাণী তুলনামূলকভাবে নতুন, ছিয়ানব্বইএর আগে খুব একটা শোনা যেত না, এখন বেশ জনপ্রিয়। আমার ক্লোজ কয়েকজন জনপ্রিয় ফেসবুকিস্টের স্ট্যাটাসেও মাঝে মাঝেই এই ডায়লগ দেখি। মজার ব্যাপার, এই বাণী যেই মহৎ দেশপ্রেমিকদের মুখ থেকে নিঃসৃত হয়, তারা আবার ভারতের সাপোর্টার। স্বাধীনতার পর থেকে কোন প্রকার উস্কানী ব্যাতীত (পাকিস্তান তো তাও যুদ্ধের দোহাই দিয়েছিল, ভারতের আবার দোহাই দেয়ারো কোন প্রয়োজন নাই। তারা 'যেখানে দেখিবে বাঙ্গালী, তাহারে করিও গুলি' নীতিতে বিশ্বাসী।) ভারত আমাদের দেশের কত মানুষকে হত্যা করেছে, সেই হিসেব চাইলে যেন তাদের মূষঢ়ে না পড়তে হয়, সেজন্য পাল্টা অস্ত্র হিসেবে এই বাণীটির প্রয়োগে তারা বেশ ভালই দখল লাভ করেছেন।
এইবারে মূল কথায় আসি, যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম। আজকে সাকিব আল হাসানের মঞ্চে উপবিষ্ট হবার কারণে দেশের ক্রিকেটানুরাগীদের ভেতরে উক্ত বাণী দুইটার অদল-বদল হতে পারে। কাল থেকে পাকি + বি,এন,পি + জামাত সাপোর্টার রা (আই মিন যারা আগে বড় গলায় বলতেন, 'ক্রিকেটের সাথে রাজনীতি মিলাবেন না') হয়তো বলবেন, 'এই শালা সাকিব আওয়ামী লীগের চর, ভারতের দালাল, শালারে টীম থেকে বাদ দেয়া উচিত।'
অন্যদিকে ভারত + বি,এ,এল এর সাপোর্টারেরা মিনমিন করে তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, 'দেখুন, খেলার সাথে রাজনীতি মেলাবেন না, প্লীজ'
উহাদের এহেন উক্তি শ্রবনপূর্বক ব্যাপক লুলায়িত হইবার অপেক্ষায় রহিলাম...
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, ক্রিকেট খেলা একটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে সেটা শুধুই পজিটিভ সেন্সে। উদাহারণ আমাদের পাশেই আছে, ভারত এবং পাকিস্তান। শুধুমাত্র ক্রিকেট দিয়ে যে তারা কতগুলো যুদ্ধ আর কুটনৈতিক সমস্যার সমাধান করেছে, তা গুনতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। অপর দিকে রাজনীতি-ও ক্রিকেট কে প্রভাবিত করতে পারে, তবে সেটা শুধুই নেগেটিভ সেন্সে। এর উদাহারণ? ওই একই, ভারত আর পাকিস্তান। রাজনৈতিক কারণে যে কতবার এই দুই দেশের ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ হয়েছে, তাও গুনে শেষ করতে সময় লাগবে।
অতএব, 'রাজনীতির ভেতরে যত ইচ্ছে ক্রিকেট মেশান, আপত্তি নাই, শুধু ক্রিকেটের ভেতরে রাজনীতি মেশাবেন না, প্লীজ।' সাকিব, তামিম, মুশফিকদের যেই মঞ্চে ইচ্ছে উঠতে দিন, তাতে আমাদের রাজনীতির শুদ্ধিকরণ হলে আমরা খুশি-ই হব, কিন্তু মাফ চাই, দোয়া-ও চাই, তারেক রহমান আর সজীব ওয়াজেদ জয় কে জাতীয় ক্রিকেট দলে দেখতে চাইনা...