এই লেখাটা ড, ইয়ূনুস কে নিয়ে। তার প্রসঙ্গে আসার আগে কিছু কথা বলা প্রয়োজন।
এই সরকার আর কিছু না হোক, একটা বড় জিনিস আমাদের শিখাইয়া যাইতেছেন, উহা হইল, সহস্র দূর্নীতির পরেও রাজনীতিবিদগন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। থুক্কু, ভুল কহিলাম, এইখানে 'রাজনীতিবিদ্গন' শব্দখানার পুর্বে 'আওয়ামী' শব্দখানা আবশ্যকতার সহিত অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে। কারন উহারা ব্যাতীত বাকি সবাই তো রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি... ইত্যাদি, ইত্যাদি...। তাহারা যা কহিবেন, উহাই ধ্রুব সত্য। তাহারা কহিবেন, 'পদ্মা সেতু নিয়ে কোন দূর্নীতি হয়নাই', তাহলে উহাকে ওহী ভাবিয়া আমাদিগের বিশ্বব্যাঙ্কের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধারে নামিয়া যাওয়া উচিত। তাহারা কহিবেন, 'রেল কেলেংকারীতে আমার কোন হাত নাই, সব আমার এপিএস এর চক্রান্ত', ব্যাস... পুলিশ, র্যাব, ডিবি, এন,এস,আই, সহ দেশের তাবত গোয়েন্দা সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেও উক্ত ঘটনায় তাহাদিগের কোন সংশ্লিষ্টতা খুঁজিয়া পাওয়া যাইবেনা।
একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই।রাজনীতিবিদরা দেশের কিছু তথাকথিত মান্য-গন্য ব্যাক্তিকে পোষা কুকুরের মতই পুষে থাকেন। উহাদের নাম 'বুদ্ধিজীবি'। সরকার পক্ষ আর বিরোধী পক্ষ, উভয় দলের এইরূপ কিছু বুদ্ধিজীবি রহিয়াছে, যাহারা আবার টেলিভিশনে পরস্পরের সহিত যুদ্ধ করিয়া বেড়ান। এই সকল বুদ্ধিজীবির কাতারে 'আত্মসৃষ্ট' পাঠকের পর্নোগ্রাফিক লেখার সমন্বয়ে ছাপানো একটি পত্রিকার সম্পাদক হইতে আরম্ভ করিয়া বিদেশী লেখকের লেখা আর হলিউডের কাহিনি টুকলিফাই করিয়া 'মৌলিক' সায়েন্স ফিকশনের সৃষ্টিকর্তা পর্যন্ত অনেকেই আসীন। তো সমস্যা হল, এক পক্ষ আবার আরেক পক্ষের বুদ্ধিজীবিদিগের সম্পর্কে সদা সত্য কথা বলিয়া তাহাদিগের মুখোশ উন্মোচনে তথপর...। এই পর্যন্ত সমস্যা ছিলনা, সমস্যা তৈরি হল অন্য একজন কে নিয়ে।
তার নাম ড, মুহম্মদ ইয়ুনুস। তিনি কোন দলের হয়ে কথা বলেন না, তাই মিডিয়ার হলুদিয়া পাখিরা কিছুদিন প্রচার করা শুরু করল, 'তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল খুলবেন।' কিন্তু ভুয়া খবর বেশিদিন ভাত পেল না। তারপর বলা হল কেন তিনি শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে নিশ্চুপ, কয়দিন পরে যখন আমাদের সামনে শাহবাগ আন্দোলনের সত্যিকার কাহিনী উন্মোচিত হল, তখন আমরা বুঝলাম 'প্রজ্ঞা' কি জিনিস। বর্তমান সরকার শুরু থেকেই এই বিশ্ববরেন্য ব্যাক্তির পেছনে কেন যেন আদা জল খেয়ে লেগেছে। কেউ কেউ বলে, 'আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগে নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি দেশ কে কলংকিত করেছেন'। আমি অবশ্য তাদের সাথে নই। আররে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কতগুলো ডিগ্রী আছে জানেন?? তিনি চাইলে কালকেই নোবেল কমিটি এসে এই বছরের সবগুলা নোবেল উনাকে দিয়ে যাবে। শুধু উনি মুখ ফুটে...না না, মুখ ফুটেও বলতে হবে না, ঘাড় টা একবার উপর-নীচে নাড়ালেই হবে...। যাই হোক, ইয়ুনুস সাহেব নোবেল বিজয়ী থেকে হয়ে গেছেন সূদখোর, আর গরীবের রক্তচোষা... এই ব্যাপারটা আবার আমাদের সরকারের একজন রবিনহুড মন্ত্রির একেবারেই পছন্দ নয়। ওই যে শুরুতে বললাম, আমাদের রাজনীতিকেরা সকল বিষয়ে সবার থেকে বেশি পারদর্শী...। সেই মাননীয় রবিনহুড বলেছেন যে ইয়ুনুস সাহেব অর্থনীতির স্বরে অ ও বোঝেন না, তিনি আসলে একজন রাজনীতিবিদ... (!!) স্যার, আপনার প্রোস্টেট খানা কি ইদানিং খুব বেশি ট্রাবল দিচ্ছে?? রাতে ঘুমাতে পারছেন না?? আপনার কথাটা নিজেকে গালি দেয়া হয়ে গেল না স্যার?? আই মিন, 'তুই খুব খারাপ, তুই মানুষ না, তুই আসলে একটা 'আমি''। আপনি কি সেরকম কিছুই মিন করতে চেয়েছেন?? স্যার আরো বলেছেন, 'তিনি রাজনীতিবিদ, কিন্তু রাজনীতিবিদের মুখোশ পরেন না।' আবারো বেফাঁস কথা বলে ফেললেন স্যার!! আপনারা মুখোশ পড়া সেটা আমরা জানি, কিন্তু তাই বলে এমন সরল স্বীকারক্তি!!!
স্যার, আপনাদের মত কিছু অপদার্থের জন্য আও্যামী লীগের অবস্থা যতটুকু খারাপ হবার কথা, তার চেয়ে তিন গুন খারাপ।দয়া করে চুপ করুন, অলরেডী তো ২০০১ এর মত ৬২ আসনে নেমে গেছেন, আর কথা বললে আপনাদের অবস্থা ২০০৮ এর বি,এন,পি-র মত ৩০ এ নেমে যাবে।
এবার ব্লগে আমার কতিপয় বন্ধুর কথায় আসি।উনারা ইয়ুনুস সাহেবের বর্তমান কাজকর্মে খুবই বিরক্ত। তাদের জন্য বলছি, আপনি একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, একেবারে শূন্য থেকে, তারপর শ্রম দিয়ে দিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান টা কে এমন একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে সেই প্রতিষ্ঠান টা বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছে। তারপর একটা স্টুপিড ইডিয়ট এসে আপনাকে আপনার-ই সেই প্রতিষ্ঠান্ থেকে জোড় পূর্বক বিতাড়িত করলো, আপনার কেমন লাগবে?? তার পরেও তিনি চুপ ছিলেন, কারন তিনি চেয়েছিলেন সব কিছুর বিনিময়ে সেই প্রতিষ্ঠান টাকে রক্ষা করতে। কিন্তু সেটাও তো জানোয়ার গুলো হতে দেবে না। এখন প্রস্তাব তুলেছে ১৯ টুকরো করারা!! ভাইয়েরা, আপনারা কখনো কোন সংগঠন করেছেন? আমি মেডিকেলে ছোট্ট একটা সংগঠন করতাম, সেটা আমার তৈরি করাও ছিলনা। তিন বছর কাজ করার পর যখন কিছু স্টুপিড এসে সেটা কে রাজনীতিকরন করতে চাইলো, তখন প্রাণপণ যুদ্ধ করেছি। পারিনাই, হেরে গিয়েছিলাম। সেই কষ্ট এখনো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। এটা আমার মত সাধারণ মানুষের অবস্থা। তাহলে সেই মানুষটার কথা চিন্তা করুন। তাকে তারই সংগঠন থেকে গলা ধক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হল, এখন সেই সংগঠন টা কেই ধ্বংস করে ফেলার পায়তারা চলছে। এর পরেও তিনি চুপ করে থাকবেন?? সেই শত্রুর পতন চাইবেন না?? এতেই রাজনীতির গন্ধ খুজে পেলেন?? পেয়েছেন ভাল কথা, শুনে রাখুন, ড, ইয়ুনুস যদি কখনো রাজনীতি তে আসেন, তাহলে সেটা এই দেশের রাজনীতির জন্য গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে সুখবর হবে। দয়া করে এই মানুষটা কে সব বিতর্কের উর্ধ্বে রাখুন। বাংলাদেশে রাজনীতিবিদের জন্ম হয় নর্দমায়, কাজেই কখনো তাদের অভাব হবে না, কিন্তু ড, ইঊনুস হাজার বছরে একজনই আসেন। এই মেধাটিকে যোগ্য সম্মান দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।