প্রশ্নঃ অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া বা অংশ গ্রহণ করা কি বৈধ?
উত্তরঃ অন্য ধর্মের অনুসারীদের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া বা অংশ গ্রহণ করা কোন মুসলিমের জন্য স্পষ্টত: বৈধ নয়। অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানসমূহে যেসব নিয়ম-অাচার পালন করা হয় সেগুলো ইসলামের আলোকে সাধারণত: কুফর ও শিরক মিশ্রিত যাতে অংশ নেয়া বা উপস্থিত হওয়া মুসলিমদের ঈমান বা বিশ্বাসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাছাড়াও অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অশ্লীলতার ছাড়াছড়ি ও নারী-পূরুষের অবাধ মেলামেশা লক্ষ্য করা যায় যা কোনভাবেই মুসলিমদের সংস্কৃতির সাথে যায় না।
আজকাল কারো কারো মুখে একটি শ্লোগান শোনা যায়ঃ "ধর্ম যার যার উৎসব উৎসব সবার" । এটি ইসলাম সম্মত কথা নয়। বরং এটি একটি বিভ্রান্তিকর স্লোগান; বরং এটি মুসলিমদেরকে কুফরী, শিরক ও অশ্লীলতার মধ্যে ঠেলে দেয়ার একটি সুক্ষ কৌশল ও গভীর ষড়যন্ত্র। ইসলামের দৃষ্টিতে "ধর্ম যার যার উৎসবও তার তার"।
"ধর্ম যার যার উৎসব উৎসব সবার" এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বিরোধী কথা। অমুসলিমরা যেমন আমাদের মসজিদে আমাদের সাথে নামাজ পরবেনা, ঈদের নামাজে শরিক হবে না, হজ্জ্ব করবে না তেমনি মুসলিমরাও অমুসলিমদের সাথে কুফরী ও শিরকপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে শরিক হবে না, পূঁজা-অর্চনা করবে না। এটাই স্বাভাবিক। এটি ধর্ম বিশ্বাসের স্বাতন্ত্র্য ও যার যার বিষয়।
ইসলামের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেয়ার স্বার্থে মক্কার কাফিরেরা রাসূল সা. কে এমন ধরণের একটি সমঝোতামূলক প্রস্তাব দিয়েছিল। এ প্রস্তাবের মূল কথা ছিল, রাসূল সা. যদি কাফির-মুশরিকদের কিছু ধর্মীয় আচার মেনে নেন তাহলে তারাও ইসলামের কিছু ধর্মীয় আচার মেনে নিবেন। রাসূল সা. তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটেই সূরা কাফিরুন অবতীর্ণ হয়েছিল যার শেষাংশে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ "(হে নবী আপনি বলুন) আমি তার ইবাদত করি না যার ইবাদত তোমরা কর এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি, এবং আমি তার ইবাদতকারী নই যার ইবাদত তোমরা করেছ এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও যাঁর ইবাদত আমি করি, তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন এবং আমার জন্য আমার দ্বীন" (সুরা কাফিরুন, আয়াতঃ ২-৬)।
ঈমাম ইবনুল কায়্যিম রা. বলেনঃ মুশিরকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশ নেয়া বা উপস্থিত হওয়া মুসলিমদের জন্য বৈধ নয় - এ বিষয়ে আলেমগনের মধ্যে একমত্য রয়েছে। বিভিন্ন মাযহাবের ঈমামগণ তাদের গ্রন্থসমূহে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
ঈমাম বায়হাকী সহীহ সনদে উমর বিন খাত্তাব রা. হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি (উমর রা.) বলেছেনঃ " ধর্মী অনুষ্ঠানাদি চলাকালীন সময়ে তোমরা মুশিরিকদের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করো না, কারণ তখন তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়" (আহকামু আহলিয্ যিম্মাহ, ১/৭২৩-৭২৪)।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রা. বলেনঃ অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির সাথে সাদৃশ্য পোষন করা বা তাদের অনুকরণ করা বৈধ নয়। খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, আগ্নি প্রজ্জ্বলন, পূঁজা-অর্চনা, উপহার বিনিময়, কোন কিছুর ক্ষেত্রেই তাদের সাথে শরীক হওয়া বা তাদের অনুসরণ করা বৈধ নয়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মাজমু ফাতাওয়া, ৩২৯/২৫)
ইসলামের দৃষ্টিতে যা পাপ ও সীমালঙ্ঘন এমন কোন কাজে কোনভাবে সাহায্য করা মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। তবে ইসলামে প্রতিটি জাতি-ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা স্পষ্টভাবে স্বীকৃত এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয় এমন কিছুতে জড়িত হওয়া কোন মুসলিমের জন্য স্পষ্টত: হারাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৬