প্রশ্ন- ২ঃ আরবী ব্যতীত কুরআনে কারীমের কেবল বাংলা অর্থ-ব্যখ্যা পড়লে কল্যান ও সওয়াব হবে কি?
উত্তরঃ প্রিয় প্রশ্নকর্তা, আপনাকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক আলেম নামধারী ব্যক্তি ও দ্বীনের দাওয়াত প্রচারকারী মাতৃভাষায় কুরআান চর্চার বিষয়ে এমন ধরণের মতামত প্রকাশ করছেন যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত নয়। তারা বলে বেড়াচ্ছেন যে, কেবল বাংলা ভাষায় কুরআন অধ্যয় করা হলে কোন সওয়াব হবে না এবং এতে কোন ফায়দা বা উপকার নেই। তাদের এই কথা যেমন সহীহ নয় তেমনি তাদের এহেন বক্তব্য মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের শিক্ষা উপলদ্ধি করা থেকে দুরে ঠেলে দিচ্ছে।
উপরি উক্ত প্রশ্নের বিষয়ে প্রথমত: আমাদের জেনে রাখা ভাল যে, পবিত্র কুরআনে কারীম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা অবতীর্ণ করেছেন সমগ্র মানবজাতির হেদায়াত বা পথনির্দেশনার জন্য এবং এর দ্বারা মানুষকে আদেশ/উপদেশ/পরামর্শ প্রদান করা ও সতর্ক করার জন্য। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ...
অর্থঃ রমযান মাস হল তা যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে মানুষের জন্য পথনির্দেশিকা, সঠিক পথের স্পষ্ট প্রমাণ ও ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) হিসেবে...
মহান আল্লাহ পাক আমাদের কি ব্যপারে আদেশ করেছেন, কোন কোন বিষয়ে সতর্ক করেছেন সেগুলো যদি আমরা বুঝতেই না পারি, তাহলে পবিত্র কোরআন পাঠের কি আদৌ কোন তাৎপর্য থাকে ? প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক কেবল পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের জন্যই নয়, বরং তাঁর আদেশ নিষেধ সম্পর্কে অবগত হওয়া আর বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটানোর জন্যই আমাদের মাঝে পবিত্র কোরআন প্রেরণ করেছেন ।
আর এই কুরআন থেকে পথনির্দেশনা পাওয়ার নিমিত্তে কুরআনের মর্ম উপলদ্ধি করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরী। এ কারণেই আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক রাসূলকেই তার সম্প্রদায়ের ভাষায় প্রেরণ করেছেন যাতে সে তাদের জন্য (অবতীর্ণ কিতাব) স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে (১৪-সূরা ইবরাহীমঃ ৪)।
তেমনিভাবে পবিত্র কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে আরবী ভাষা-ভাষী মানুষ সহজেই কুরআন উপলদ্ধি করতে পারে এবং তদনুযায়ী আমল করতে পারেঃ
"নিশ্চয় আমি এটিকে আরবী কুরআন হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, তোমার প্রতি এই কুরআন ওহী করার মাধ্যমে... " (১২-সূরা ইউসুফঃ২)
তাছাড়া আল্লাহ তা'আলা সমগ্র মানবজাতির জন্য এই কুরআনকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। কুরআন অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মত এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নয় যা সাধারণ মানুষ স্পর্শ করতে পারবে না অথবা যা অধ্যয়নের জন্য কোন ধর্মগুরুর কাছ থেকে দীক্ষা-শিক্ষা নেয়া বাধ্যতামূলক; বরং কুরআন থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করার বিষয়টি আল্লাহ তা'আলা সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
"আর অবশ্যই আমি কুরআনকে সহজ করে দেয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?" (৫৪-সূরা আল-ক্বামারঃ ২২)
সূতরাং মাতৃভাষায় কুরআন বুঝার অসামান্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সব মুসলিম যেহেতু আরবী ভাষা-ভাষী নন, কুরআন যেহেতু সমগ্র মানবজাতির হেদায়াতের পথনির্দেশিকা আবার সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য আরবী ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করা যেহেতু অসম্ভব সেহেতু কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার স্বার্থে মাতৃভাষায় কুরআন চর্চা করা এবং কুরআনের অর্থ্-ব্যখ্যা জেনে নেয়া অতীব জরুরী একটি বিষয়।
তাই এ কথা সহজেই অনুমেয় যে পবিত্র কুরআন বুঝার জন্য মাতৃভাষায় এর অর্থ-ব্যখ্যা পাঠ করা অত্যন্ত জরুরী ও সওয়াবের কাজ। তবে এ বিষয়টিও ভুলে যাওয়া যাবে না যে, পবিত্র কুরআন যেহেতু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ একটি কিতাব তাই তা যদি অর্থ-ব্যখ্যা না বুঝেও কেউ কেবল আরবীতে তেলায়াত করে তাহলেও সে সওয়াবের ভাগীদার হবে।
রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ
"যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার কিতাবের একটি হরফ (অক্ষর) পড়বে তার জন্য নেকী রয়েছে, আর সেই নেকী হল এর দশগুন। আমি এ কথা বলছি না যে, 'আলিফ-লাম-মীম' একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।"
সার কথা হল, পবিত্র কুরআনে কারীম অর্থ-ব্যখ্যা সহ অধ্যয়ন করা জরুরী এবং এটি একটি প্রভূত সওয়াবের কাজ। আবার অর্থ না বুঝে তেলাওয়াত করলেও সওয়াব হবে, তবে তা কুরআন নাযিলের যে মহান উদ্দেশ্য রয়েছে তার সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে আরবী আয়াত তেলাওয়াত সহ কুরআনে কারীমের অর্থ-ব্যখ্যা অধ্যয়ন করা সর্বোত্তম।
Email: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৩০