(১)
অপলা,
আজ বিকেলে বারান্দায় এসো,
সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে তোমার এই বেলায়
খুব বেশি সময় নিব না আমি।
দেখেছ তো আকাশে কেমন মেঘ করেছে?
তুমি বারান্দায় এলে তবে
মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে নামবে তোমার আঙ্গিনায়।
তোমার পৃথিবীর লোহার শাষনের ফাকে
দু'হাত একটু বাড়িয়ে দিয়ো,
আমার আমি বৃষ্টি হয়ে তোমার হাত ছুঁয়ে
তারপর হারিয়ে যাবো ভূমির একাকিত্বে।
ক্ষণিকের তরে যদি ধরে রাখতে চাও
তবে তোমার জন্য বলছি আবার -
অধরা আকাশের মেঘ হয়ে নয়,
তোমার পা স্পর্শ করে দিতে পারা সীমানায়ই
আমার এ জীবনের সমাপ্তি, আমার পূর্ণতা।
(২)
কোন রাস্তায় হঠাৎ দেখা পথিকের মুখের
অম্লান হাসির অাতিথেয়তা আমি চাই নি,
কেউ একজন বিস্ময়ভরা কন্ঠে বলে উঠবে -
আরে আপনি! এত দিন পর কোথা থেকে?
না, সে প্রত্যাশার মাত্রা সংযত রেখে শুধু চেয়েছিলাম
কোন বিষণ্ন মানুষ আমার মাঝে খুঁজে পাক
তার প্রিয়জনের মুখের আদল।
তারপর আমি অনায়াসেই বলতে পারতাম -
আপনাদের হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসার ছায়া ছেড়ে
হারিয়ে যাওয়া আমার জন্য হয়তো সহজ নয়।
অথচ, তোমাদের স্বপ্নময় শহরে
আমি শুধু রোদের উত্তাপটুকুই পেয়েছি।
ক্ষণিকের তরে দাড়ানোর ছাউনীর যে পর্যাপ্ততা
তা বোধ করি ফুরিয়ে গেছে বহু আগেই।
তোমাদের পথের লাইটপোস্টের আলোতেও নিজেকে হারিয়েছি,
আর যে যখন পেরেছে শুধু ঠকিয়েছে মিথ্যা বাহানায়।
তবুও কোন অভিযোগ করি নি কোন দিন,
উচ্চারণ করি নি অভিশাপের অস্পৃশ্য শ্লোক,
কারন
যে চোখের দৃষ্টিসীমায় জড়িয়ে থাকে শুধু অপেক্ষা
সে চোখের জমিনে অভিযোগ থাকতে নেই।
(৩)
দীর্ঘ অপেক্ষা আর অন্ধকারের দেয়াল মেপে
অথবা স্বেচ্ছা নির্বাসণের অভিমানী কান্নায়
কি জানি কোথাকার জীবন কোথায় গেছে বয়ে,
আয়নায় নিজেকে দেখে হঠাৎ নিজের মনে চমকে উঠি,
না, এই তো আমি নই।
এই প্রতিচ্ছবির অবয়বে কি নিদারুন ক্লান্তি,
কালোর নিষ্ঠুরতায় ভেঙ্গে পড়া চোখের দু'কূল
আছড়ে পড়া সন্ধ্যার ঝড়ের তান্ডব রেখা।
আমি চেয়ে থাকি নিজের চোখে চোখ রেখে
সম্মূখে সযত্নে দাড়িয়ে যাওয়া খানিক অবকাশে।
...
...
এখনি ডাক পড়বে আবার হয়তো
অন্তহীন অপেক্ষার অন্ধকারের নির্জনতায়,
শেষবারের মতো তাই দেখে নেই নিজেকে
যেন আবার কোন এক প্রহরে নিজের বদলে যাওয়া অস্তিত্বকে
চিনে নিতে পারি সহজে আপন ভেবে।