তত্ত্ব ১: পাত্র দেখা
পবিত্র রমজান মাসে মায়ের অবাধ্য হতে চাই নি বলে তার অনুরোধে এক ছেলের ( অন্য পরিচয় - পাত্র) সাথে দেখা করার জন্য বাসা থেকে বের হলাম। যেহেতু যখন-তখন কিছু খাওয়ার কোন উপায় নাই সে জন্য টাইম ও টপিক রাখা হলো ইফতার পর্ব। ওয়েল, কিঞ্চিত অপ্রস্তুত হয়েই নির্ধারিত রেস্টুরেন্টে উপস্থিত। তাও ভালো যে বাসায় গিয়ে কেউ পাত্রীর নাক, কান, গলা, চুল দেখার নাম করে শোপিস কেনার উপলক্ষ্য করবে না। তারচেয়ে বরং সম অধিকারের ভিত্তিতে একজন আর একজনকে দেখে এবং চিনে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এই অভিজ্ঞতার সব চেয়ে আলোচিত বিষয়টা পরিমার্জিত করে করে বলতে গেলে যে সারাংশ চলে আসবে তার সূত্রপাতই হয়েছিল আমার খুব সামান্য একটা প্রশ্নে। আমি ছেলেটাকে (পাত্র) ভদ্রতাবশত জিঞ্জাসা করেছিলাম: আপনি এখন কি করছেন? তারপর উত্তর এলো পর্যায়ক্রমে, এক অধ্যায় শেষে অন্য অধ্যায়ের সূচনাক্রমে। ছেলে বিদেশ ফেরত মানুষ। বিশাল অংকের কাঁচা টাকা হাতে। সেই টাকার বিশাল অংশ দিয়ে একটা টেক্সটাইল ব্যবসায় মন দিলেন। তারপর তার মনে হলো যে, উপার্জনের/আয়ের পথ শুধু একটা হলেই চলবে না, এতে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তায় ভাটা পড়তে পারে। তাই আরো কিছু টাকা দিয়ে ঢাকায় ৩টা দোকান কিনেন। যাক, এবার আর তাকে একটা আয়ের উপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে আর্থিক অনিশ্চয়তা হ্রাস পাবে। কিন্তু বিধিবাম। টেক্সটাইল ব্যবসায় তার পার্টনারদের বিশ্বাসঘাতকতায় ( মনে হয় নিজের অযোগ্যতায়) সেই বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার এখনও মামলাধীন। শুধু দোকান দিয়ে তো আর সংসার চলবে না। এবার ২টা বাস আর একটা ট্রাক কিনে নেন। সেই একই দূর্ভাগ্য, কোন এক বাসের স্টাফরা ঢাকার অদূরে গিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা করে তাদের যাবতীয় টাকা-পয়শা নিয়ে চম্পট। সেই গাড়ী উদ্ধার করতে গিয়ে যে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তাতে গাড়ী ব্যবসায় মন উঠে গেলো। এবার মনের দুঃখে সেই ২গাড়ী এবং ট্রাক দিলেন বিক্রি করে। এই পর্যায়ে এসে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। ডান দিকে তাকাচ্ছি তো বাম দিকে তাকাচ্ছি। মুক্ত বায়ু পাচ্ছি না মনে হয়। যাই হোক, প্রশ্ন যেহেতু করেছি তাই আমার উত্তরের শেষ না দেখে নিস্তার নাই। বাস গেলো, ট্রাক গেলো। টাকা নিয়ে তো আর বসে থাকলে চলবে না। আয়ের সঠিক পথ তো ধরতেই হবে। এবার জমি ব্যবসায় মন দিলেন। অতি উত্তম বুদ্ধি। কিন্তু শনির আখড়ার দিকে জমি কিনে আজও জমির আসল দলিল/দস্তাবেজ হাতে আসে নি। চেয়ারম্যান/মেম্বারের সাথে একাধিক বৈঠক করেও ফলপ্রসূ কোন কাজ হলো না। তাতে কি, এক জমিতে সমস্যা হলেও অন্য জমি তো ঠিক আছে। তা দিয়ে আয়ের বিকল্প পথ সৃষ্টি করা মনে হয় উনার কাছে কোন ব্যাপার না। উনার চেহারার অভিব্যক্তি কিন্তু তা ই বলে। আহারে, আমি যদি ওয়ারেন বাফেট কে সাথে করে নিয়ে আসতে পারতাম তবে তিনি যে এই অদম্য উদ্যোক্তাকে নিজের সার্থক সাগরেদ হিসেবে পেয়ে পিঠ চাপড়ে দিতেন, তাতে আমি নিশ্চিত। হোক না ব্যবসায়ে ব্যর্থ, তবুও তো Failure is the pillar of success সবার ই জানার কথা। এট দ্যা এন্ড অব দি প্রোগ্রাম, আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলতে থাকেন " আজ তো মাত্র ২য় রোজা গেলো। আরো আছে ২৭/২৮ রোজা। তাই এখনই বা আগামীকাল আপনার মতামত জানাতে হবে না। পুরু মাস ব্যাপি আপনাকে সময় দিলাম ভেবে দেখার জন্য এবং এর মধ্যেই আরো কিছু ছেলের দেখা অর্থাৎ বিকল্প সম্বন্ধ ভেবে, দেখে তারপর সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে ঈদের পর মতামত জানাবেন প্লিজ। আমি আপনার মতামতের জন্য পুরো রমজান মাস অপেক্ষা করবো। ওয়ারেন বাফেট, আপনি কই ???
তত্ত্ব ৩: কার্পণ্যতার অসাধারন সংজ্ঞা
আমার এক বন্ধু আমাকে প্রায়ই তার বাসায় দাওয়াত দেন। আমিও সামাজিকতার সহিত বরাবরই বলে আসছি যে কোন কাজে যদি তাদের এলাকার আশেপাশে যাই তবে তার বাসায় থানিকটা চক্কর দিয়ে আসবো। তারপর একদিন সত্যি সত্যি একটা কাজের প্রয়োজনে ওই দিকটায় গেলাম এবং সকালেই তা বন্ধুকে অবহিত করে রেখেছিলাম। সে তো মহা খুশি। খবর শুনেই আমাকে দুপুরের দাওয়াত দিয়ে রাখলো তার বাসায়। অবশেষে তার বাসায় গেলাম এবয় আমাকে খাবার খেতে দিয়ে সে নিজেও খাবার খেতে বসলো। আহারে, তখন যদি সেই খাবারের একটা ছবি তুলে আনতে পারতাম তবে আচ এতো কথা বলার প্রয়োজন পড়তো না। আমাকে আবার এতোটা অসামাজিক ভাবার কারন নাই যে অন্যর হাড়ির খবর কেন দিতে চাইতেছি। কারন হইল গিয়ে ওয়ারেন বাফেটের ব্যয় তত্ত্ব সামনে তুলে ধরা। সকালের রান্না করা হাফ প্লেট ভাত ( তাও আবার পানি পানি ওয়ালা) এর সাথে অতি সমান্য করলার ভাজি খেতে দিয়ে নিজেও ওই রকম কিছুই খাবার খাওয়া শুরু করলো। তার মাসিক আয় কত জানেন? অর্ধ লাখেরও অনেক বেশী। তার মানে হচ্ছে গিয়ে বেতন পাবার পর পুরো টাকাই ব্যাংকে জমা করে আসেন এবং জমা করতে গিয়ে যে দু'এক টাকা এদিক ওদিক হয় তা দিয়েই মাসের খরচ চালানোর চেষ্টা করেন। আমি কিন্তু আমার দিব্যদৃষ্টি দিযেই এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি।
তত্ত্ব ৪: কর্পোরেট ভালোবাসার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট
আমার এক ভার্সিটির বন্ধু আছে যার কাজই হচ্ছে একই সাথে এবং একই সময়ে একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক কন্টিনিউ করা। আমি বরাবরই তার এই ব্যাপারটায় বিরক্ত। একদিন আমাকে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলো। সাহায্য বলতে খুব বড় কিছু না। এক মেয়ে নাকি আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইবে অমল( ছদ্দনাম) গত চারদিন কোথায় ছিল। মেয়েটার কাছে আমার পরিচয় দিয়েছে বড় বোন বলে। দেখো অবস্থা, মেজাজ কই রাখি। এই জগন্য কাজ করতে পারবো না, পারবো না বলেও ওই শয়তানটাকে দূর করতে পারি নি। বাধ্য হয়ে রাজি হলাম এবং বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলাম " এভাবে একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে কি সুখ পাও?" আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলে দিল " শোন, একটা মেয়েকে আমি সত্যি সত্যি ভালোবাসলাম কিন্তু গ্যারান্টি কি তাকে আমার জীবনে পাবো? হয়তো মেয়েটার মন বদলে গেলো, অথবা মেয়েটার পরিবার সম্পর্কটিকে মেনে নিল না অথবা অন্য কোন তৃতীয় কারনও ঘটতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমি বেচারার উপায় হইবে কি? এতোটা বছর একজনের পিছনে ঘুরে যদি সবশেষে তাকে না পেয়ে দেবদাস হয়ে মদ নিয়ে ঘুরতে হয়, তার যুক্তি কি। তার চেয়ে একাধিক সম্পর্ক থাকলে কাউকে না কাউকে পাবো ই, ছ্যাকা খাওয়ার কোন রিস্ক নাই। আর তোমার মতো ওই একজনকে বছরের পর বছর ভেবে ভেবে দিন কাটানোতে কোন লাভ নাই। তাও আবার লস্ট প্রোজেক্ট।"
তত্ত্ব ৫: বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন
এটা মায়ের কাছ থেকে শুনেছি। আমাদের গ্রামে নাকি এক দাদী ছিল ( চাচতো দাদী) ছিল যার চিন্তা ভাবনাই হলো - ৪/৫টা ছেলে না হলে নাকি ঘরে আলো জ্বলে না। সে জন্য তার ছেলেদের পরিবারে কোন মেয়ে জন্মগ্রহন করলেই তিনি কান্না-কাটি শুরু করতেন। মেয়েরা বাবা-মার বৃদ্ধ বয়সে নাকি কোন উপকারে আসবে না। একাধিক ছেলে থাকলে একজন না একজন ঠিকই বাবা-মাকে দেখাশোনা করবে, বৃদ্ধ বয়সের জন্য বিনিয়োগ হবে। তবে উনার হয়তো জানা ছিল না যে " গঙ্গার মা সব সময় জল পায় না।"
তত্ত্ব ৬: লেখক এবং তাদের লিখতে পারার ক্যারিশমা
আমার মতো সাধারন পাঠকদের একটা বড় বৈশিষ্ট্যই হলো - কোন লেখা পড়ার পর যে ভালো লাগা, মন্দ লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হবে তা দিয়ে লেখককে বিচার করা। কেউ "মা-বাবা" নিয়ে আবেগঘন গল্প লিখে, প্রবন্ধ লিখে নিজে কান্না-কাটি করেন, আবার সেই লেখা পড়ে পাঠকদের চোখ কান্নায় ভেসে যায়। তখন ওই লেখককে কোন বাবা-মার হিরের টুকরো সন্তানও মনে হতে পারে। আমার কেউ যদি নিয়মিত শূণ্যতা/ হতাশা/ ছ্যাকা খাওয়া টাইপের গল্প বা কবিতা লিখেন তবে তার জন্য মনটা কেমন যেন আর্দ্র হয়ে উঠে। মনে হয় সে (লেখক) বুঝি সত্যিই একাকিত্বের সাগরে পড়ে আছেন। এমন করে দেখা যায়, যে মানুষটা দেশপ্রেম, ধর্মপ্রেম, মানবপ্রেম নিয়ে লিখে যান তারজন্যও ওই রুপ ইতিবাচক ধারনা তৈরি হয়ে যায়। হ্যা, ব্যক্তিগত কিছু উপাদান ( ভালোলাগা, মন্দ লাগা, দুঃখ, সুখ, একাকিত্ব কিংবা মতবাদ) অবশ্যই লেখনীতে ফুঠে উঠবে তবে তা আমার মতো সাধারন কারো জন্য প্রযোজ্য হবে যে কিনা কখনো কখনো কিছু একটা লিখে যায় অথবা লিখতে চেষ্টা করে। কিন্তু যারা সত্যিকারের তুখোড় লেখক, তাদের কে প্লিজ তাদের লেখার বিষয়বস্তুর সাথে মিলাবেন না। যে কোন ভাবের উপর লিখতে পারাটা হচ্ছে তাদের ক্যারিশমা যা আপনার আমার মশ্যে নেই। তাই তাদের লেখা পড়ে লেখার মানুষটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবেন না। আমি অনেক উদাহরন দিতে পারবো যাদের ব্যক্তিগত এবং মনুষত্ব্যবোধের সাথে তাদের লেখার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই। তাই আবারও বলছি: অসাধারন ভাবে লিখতে পারাটা হচ্ছে লিখকদের একটা ক্যারিশমা যার সাথে পাঠকের পঠিত অনুভূত উপাদান নিয়ে তাদের ( লিখকদের) বিচার না করাই উত্তম।
.......................................................
২য় তত্ত্ব সম্পর্কে যে কিছু বলি নি তা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো। এটা হলো তোমাদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট। আর হ্যা, পূর্ববর্তী কোন তত্ত্বের উদাহরনে যদি প্রশ্ন থাকে তবে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। আমি উত্তর দিব। আর তোমরা তোমাদের জীবন থেকে নেওয়া একটা ঘটনা তুলে ধরবে যা ওয়ারেন বাফেটের উক্ত ২য় তত্ত্বের উদাহরন হবে। এই অ্যাসাইমেন্টের মাকর্স হলো ১০। আশা করছি যে সব স্টুডেন্টরা মনোযোগ দিয়ে আমার পূর্ববর্তী উদাহরনগুলো শুনেছো, তারা সবাই ১০ এ কম পক্ষে ৮ পেয়ে যাবে। ওকে, আজকের মতো এখানেই ক্লাস সমাপ্ত।