আমার বন্ধু রাসেল। চেহারা দেখতে টম ক্রুজের মতো হলেও ছবি তুলতে বললেই সে আর এই দুনিয়াতে নাই। বেচারার ই বা কি দোষ? ছবিতে তার চেহারার যে প্রতিচ্ছবি আসে তাতে আজকাল মান বাঁচানো দায়। আর আশেপাশের ঘাটুবাবু / লাটুবাবুদের চেহারা বা চেহারার অভিব্যাক্তি যেমন তেমন হলেও ছবিতে এক্কেবারে টম ক্রুজ কিংবা আমাদের জলিল বন্ড ফেইল।
শুধু রাসেল ই নয়, এমন অনেকেরই এই ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে যে তারা বাস্তবে যতটা সুন্দর ছবিতে ততোটা সুন্দর দেখায় না। তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। নিজের যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনাগুলোর লিখিত রুপ এবং ইন্টারনেটে খুঁজে খুঁজে প্রাপ্ত তথ্যের সমন্বয়ে এই লেখাটি কিছু ভালো ছবি পেতে সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস করছি।
-) আয়না হতে পারে আপনার সব চেয়ে ভালো বন্ধু। আয়নার সামনে গিয়ে হাসুন এবং বের করুন কোন হাসিটাতে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে অথবা ফোন বা ক্যামেরা দিয়ে নিজেই হাসি দিয়ে ছবি তুলতে থাকুন আপনার সিগ্নেচার স্মাইলটি খুজে না পাওয়া পর্যন্ত আর পরবর্তীতে যখনই ছবি তুলবেন আপনার সিগ্নেচার স্মাইলটি দিতে ভুলবেন না যেন।
-) মুখ থেকে কিছুটা নীচের পজিশনে ক্যামেরা রেখে কোন ছবি তুলে দেখবেন আপনার চেহারার সৌন্দর্যটাই ধরা পড়েনি ঠিকমতো। এর কারণ খুব সোজা, যখনই তেমন পজিশনে ছবি তোলা হয় তখন নাক এবং থুতনির আকার ক্যামেরার লেন্সে খুব বড় হয়ে ধরা পড়ে। এই সমস্যা এড়াতে ক্যামেরা সবসময় নিজের মুখ থেকে একটু উপরের দিকে রেখে ছবিটা তুলবেন। ছবি সুন্দর আসবে।
-) ছবি তোলার সময় একটি কথা মাথায় রাখবেন যে পেছন থেকে আপনাকে কেউ দেখছে না, সুতরাং পেছনের সব চুল সামনে আনুন। এতে করে চুল আরও ঘন দেখাবে এবং ছবিও সুন্দর আসবে আর স্টুডিও ফটোশুটের ক্ষেত্রে ড্রেস যদি ভালো মতো ফিট না থাকে তাহলে ড্রেসের পেছনে ক্লিপ লাগিয়ে নিজের পছন্দমত ফিট করে নিন ( শুধুমাত্র আপুনিদের জন্য এটা প্রযোজ্য)।
-) ছবি তোলার সময় ক্যামেরার সামনে একেবারে সোজাসুজি হয়ে দাড়াবেন না। এতে আপনার মুখের ও শরীরের সমস্যাগুলো সরাসরি প্রকাশ পাবে এবং ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনে একটা কনফিউজ্ড লুক আসবে। ক্যামেরার সামনে সরাসারি দাড়ালে আপনার কাঁধ ছবিতে যতোটা চওড়া দেখা যাবে একটু আশপাশে এঙ্গেল হয়ে দাড়ালে তার চেয়ে কম চওড়া মনে হবে।
-) আপনার চোখের দৃষ্টি যদি সরাসরি ক্যামেরার দিকে না দিতে চান তবে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকার মুহূর্তে আপনার চোখের মনি/তারা এমন ভাবে রাখবেন যেন ক্যামেরার ফ্রেমে চোখের সাদা অংশের আধিক্য না দেখা যায়। এতে আপনার অভিব্যাক্তিতে ফ্যাকাশে ভাব চলে আসবে।
-) আপনি যদি আপনার ডানপাশ/ডানপার্শ্ব বা বামপাশ/বামপার্শ্ব থেকে ছবি তুলতে চান এবং আপনার হাতের উপর অংশ যদি খুব বেশী দৃশ্যমান হয় তবে এক্ষেত্রে আপনার হাতটি শরীরের সাথে খুব বেশী চেপে না রেখে সামান্য ভাবে আলতো করে রাখুর। যখনই আপনি আপনার হাতটি শরীরের সাথে চেপে রাখবেন কিংবা জড়ো করে রাখবেন, আপনার হাত তখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশী মোটা মনে হবে।
-) ছবি তোলার ক্ষেত্রে আপনার দাঁড়ানোর স্টাইলটাও কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি যেটি ফলো করা হয় সেটি হচ্ছে এক পায়ের সাথে আরেক পা কিছুটা আড়াআড়ি করে রেখে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দেয়া। এতে করে দাঁড়ানোর ভঙ্গিটাও সাবলীল হয় এবং ছবিতেও সুন্দর দেখায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পা দুটি যেন খুব বেশী আড়াআড়ি করে রাখা না হয়। এতে দাড়ানোর ব্যাপারটা ই দৃষ্টিকটু মনে হবে।
-) অনেকেকেই দেখা যায় দুই হাত সমান করে দাঁড়িয়ে যান ছবি তুলতে। এতে আপনার চেহারায় একটা বোকা ভাব তো চলে আসেই সাথে সাথে ছবিতে শরীরের আকারটাও বোঝা যায় না ঠিকমতো। তাই ছবি তোলার সময় হাত দুটো শরীরের সাথে সমান করে না রেখে একটু দূরে রাখুন বা হাত কোমরে রেখে নিজের স্টাইলে পোজ দিন। কোমরে হাত রাখলে হাতের আঙুল গুলো ছড়িয়ে রাখবেন না। এতে করে ছবিতে নিজের চাইতে আঙুলগুলো বেশি দৃষ্টিগোচর হবে।
-) ডাবল চিন জনিত সমস্যার কারনে অনেক সুন্দর ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ও ছবিতে দৃষ্টিকটু মনে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার মুখটি সোজাসুজি রাখেন তবে ক্যামেরাটি সামান্য উপরে নিয়ে এবং তা থেকে ছবি তুলে ডাবল চিনের সমস্যা এড়াতে পারেন।
-) আপনার নাক বরাবর সরলরেখা থেকে আপনার চোখের চাহনী যেন খুব বেশী বাঁকা বা over-rotat না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন। এরকম অতিরিক্ত বাঁকা চাহনীর কারনে ছবিতে আপনার অভিব্যাক্তি কুটবুদ্ধি সম্পন্ন ও মনে হতে পারে ।
-) একটা ব্যাপার নিশ্চয় আপনি লক্ষ্য করেছেন যে আপনার মুখমন্ডলের ভিন্ন ভিন্ন পার্শ্ব থেকে ভিন্ন রকম লুক আসে। এই যেমন: আমার ডানপার্শ্ব থেকে বামপার্শ্বের ছবি অনেক বেশী জীবন্ত ও সাবলীল আসে। এর কারন ও বিভিন্ন রকম হতে পারে। হয়তো মুখমন্ডলের কোন এক পার্শ্বে আপনার সুন্দর এটা তিল আছে যা আপনার অভিব্যাক্তিতে একটা ইতিবাচক ও ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে। আবার কারো কারো হয়তো মুখমন্ডলের কোন পার্শ্বে বিভিন্ন ধরনের স্পট আছে যা সে ছবিতে লুকাতে চাইবে। তাই আপনি ই খুঁজে বের করুন আপনার সাবলীল ফেুসয়াল সাইড এবং সে অনুযায়ী ছবি তোলার সময় সে দিকটিকে প্রাধান্য দিন।
সবশেষে যে কথাটি বলতে চাই তা হলো ক্যামেরার সামনে আপনার অভিব্যাক্তি যেন একদম ন্যাচারাল হয়। ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছেন - এমন কৃত্রিম ভঙ্গী যেন না দেখা যায় সে দিকটি খেয়াল রাখুন । আর হ্যা, ক্যামেরার সামনে দাড়ালেই মন থেকে হাসবেন। হাসি না আসলে আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া মজার কোন ঘটনা ভেবে হাসুন। মনে রাখবেন, ন্যাচারাল একটি হাসি হাসি মুখ ই সুন্দর ছবি/ফটোর আসল রহস্য।