অনেকদিন পর আবার নিজের মুখোমুখি!
ভুল বললাম হয়তোবা।নিজের মুখোশটা তো ঘরে ফিরে রোজ নতুন করে বদলাচ্ছি, চেহারায় এঁটেও নিচ্ছি। এটাই কি লেখকদের ধর্ম?এভাবে " লেখকদের" বলে জেনারালাইজড করাটাও ঠিক হচ্ছে না হয়তোবা। যেসব আমরা সামনাসামনি কাউকে বলতে চাই না বা লোকসমাজের সামনে স্বীকার করতে চাই না সেগুলোই " হয়তোবা" শব্দের বেড়াজালে আটকে দিয়ে সম্ভাবনা পথকে উন্মুক্ত রাখতে চাই। তা না হলে আমি সুপর্ণাকে কেন চারুলতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই না? লেখক চারুলতা কিংবা ব্যক্তি সুপর্ণা বা নিখিল একই দেহধারী হলেও ক্যানো লেখক সমাজে বা জনসম্মুখে ভিন্ন ভিন্ন ইমেজ তৈরি করেছি?
যাকে ভুলতে পারি না, যার বুকের ওপর দিয়ে নিঃশব্দে বয়ে চলে বিষণ্ণ সন্ধ্যার আলেয়া কিংবা নিঃসঙ্গ অরণ্যের ভেজা ঘাসফুল, তার কথা সুপর্ণা ক্যানো লিখে নেয় বর্ণচোরা রঙে !
বিকেলগুলো এখন অন্যরকম, চেনা রাস্তায় ঘোরা নরম রোদের ডিগবাজির মত। চোখে চোখেই কথা শেষ হয়ে যায় ছুঁয়ে দেখার তৃষ্ণা ফুরোবার আগেই।
চারুলতা, নিখিল বা সুপর্ণা হয়তো মিশে থাকে কোনো অনন্ত ছায়ায়। কারো কবিতার বইয়ের রিভিউতে হয়তো সে বা তারা লিখে দেয় -
" এক কবির কবিতার বই বেরিয়েছে বিগত ছয় বছরের মত এবারো। আমি প্রতিটা পাতাই ওল্টাই প্রেম, কাম বা নারীর গন্ডি ছেড়ে ভিন্ন কোনো কবিতা পড়বার খোঁজে। ক্যানো কোনো কোনো কবির এত সরাসরি সবকিছুর প্রতিই ইংগিত!
কবিতা মানে শুধুই কবিতা নয়, কবিতা একেবারেই ভিন্ন কিছুকে বোঝায় যার আবেদন থেকে যাবে বহু বহুদিন অথবা আমৃত্যু! প্রেম শ্বাশত ; প্রেম সুন্দর। প্রেম দহনের। কিন্তু প্রতি লাইনে লাইনে সেই কবির কবিতার ঝংকারে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি।
আমি এর বাইরের কিছু পড়তে চেয়েছিলাম, অদৃশ্যকে ছুঁতে চেয়েছিলাম। দৃশ্যমান নারীর যোনি আর স্তনের চেয়েও আরো কোনো সৌন্দর্যের বন্দনাকে প্রিয় সংগীতের মত শুনতে চেয়ে আমি অস্থির হয়ে উঠি। নগ্নতায় আমি সৌন্দর্য খুঁজে পাই না। এসব নগ্নতার বর্ননা, বুকের ভাঁজ আর গিরিখাত না যেন উপত্যকারর জটিল বর্ণনা পড়ে আমার ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে।
রাত্রির রং, বর্ষার গন্ধ, বসন্তের সুরভীকে ছাড়িয়ে আরো অতৃপ্ত কোনো সৌন্দর্যের খোঁজে প্রিয় শুন্যতাকে নিয়ে চেনা, না-চেনা সৌরভের যুগলঘরে ভেজা পাঁপড়ির জল রঙ এ মেঘমল্লার ক্যানভাস হতে ইচ্ছে করে। তাই আমি আমার চোখজোড়া কবিতার বই থেকে খুলে রাখি। চোখবিহীন আমার চোখের কোটরকে পাথর মনে হয়। পাথরের অনুভব গাঢ় ঠান্ডা। হাওয়ায় হাত ডুবিয়ে ডুবিয়ে আমি অন্ধের মত পথ চলি প্রিয় শুন্যতার পথে।
শুন্যতার রঙও কালোই হয় গভীরতার পরিমাপে।"
সমাপ্ত
নোট - এই লেখাটি এবারের বইমেলায় নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের " মুক্তগদ্য" এর ৬ষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত। লিটলম্যাগ কর্ণারের প্রকাশ, কবিতা বাংলা আর কবিতার রাজপথের টেবিলে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রচ্ছদ - বিধান সাহা
অলঙ্করণ ও অঙ্গসাজ - সম্পাদক
মূল্য - ৩০ টাকা
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩