একটা সীমানাহীন মেঘকালো রঙের প্রান্তরে, একা , খুব একা কোনো নির্জন দ্বীপ আঁকলাম। না, দ্বীপ না। বরং একটা মানচিত্র আঁকি। মানচিত্রের মুখ বরাবর আরেক প্রান্তে আঁকি একটা গর্ত। এই গর্তকে অনেকভাবেই কল্পনা করা যেতে পারে। কেউ হয়ত একে বলতে পারে কোনো গুহা কিংবা খাঁদ অথবা আগ্নেয়গিরির কৃষ্ণ জ্বালামুখ। মানচিত্রের অবয়বে হয়ত রঙের আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে বালিকার আর্ত চিৎকার, ব্যর্থ প্রেমের ঈষৎ ঝাপসা বিষাদনূপুর কিংবা আরও কয়েক প্রস্থ রং চড়ালে হয়ত মনে হতে পারে মোহন ফাঁদে আটকা পড়া একটা খাঁচাসমেত পাখি দোল খাচ্ছে। মুখোমুখি থাকা গর্তটার একপাশে এঁকে দিলাম বিচিত্র ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে দু’ হাত প্রসারিত করে রাখা একটা ঘুমপুতুল।
ধীরে ধীরে মানচিত্রে গুপ্ত হত্যার স্কেচ বাড়ে, লুণ্ঠন আসে, যোগ হয় করোটির সংখ্যা, মন্দিরের ঘণ্টা। সে সময় কিছু মেঘ উড়ে উড়ে গেলে মানচিত্রটার কিছু অংশ ভিজে যায়। এসবে অবশ্য ঘুমপুতুলের ঘুম ভাঙ্গে না। হয়ত মিষ্টভাষী কোনো জাদুকরের মায়া-অভিশাপের গোপন চুম্বনে পুতুলটা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে মেঘ-আগুনে দগ্ধ হয়ে! তখন তার প্রসারিত দু’হাতের মাঝে একটার, অর্ধেকটা ভেঙে পড়ে। ভাঙা হাত থেকে খসে পড়ে পাঁচটি আঙুল। আমি সেখানে গাঢ় কালচে খয়েরী ধরণের রং লাগিয়ে দেই। দেখে মনে হয় গুহামুখে দাঁড়িয়ে থাকা পুতুলটি শতাব্দীর ক্রুশবিদ্ধ এক উদাহরণ যেন !
অবশ্য তখন না চাইলেও ক্রমশ গুহামুখ বা গর্তটায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে কামুক চুমু, যদিও সেখানে ছলনাকে উহ্য রাখা হয়। চিকিৎসার অযোগ্য কোনো অসভ্যতার চর্চা শুরু হবার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় ইতিমধ্যে। সেখান থেকে অনুরণিত হতে থাকে প্রেমিকার অভিশপ্ত হুমহুম প্রেত হাসি।
এই যে একটা কাহিনীচিত্র আঁকা হল – একটা মানচিত্র, একটা আগ্নেয়গিরির কৃষ্ণ জ্বালামুখ বা গুহা, ঘুমপুতুল ইত্যাদি – এর অন্তরালে হয়ত আঁকা আছে কোনো বিবর্তন, আছে দীর্ঘদিনের চর্চা। শতাব্দীর সর্পিল পথ – সে যে ভীষণ পিচ্ছিল ! এ কারণেই স্বাধীনতা ধীরে ,খুব ধীরে তার ক্লান্ত পাপড়ি মেলে ধরে।
শেষ পর্যন্ত আরও কোনো এক আরম্ভের জন্য উদাসীন , গম্ভীর পাতাছেঁড়া মানচিত্রটা গন্ধরাজ বুকে নিয়ে ডানা মেললে ঘুমপুতুলটা আঁকড়ে ধরতে চায় মানচিত্রের ন্যূনতম শেষপ্রান্তটুকু।