কেউ কেউ চলে গিয়েও
রয়ে যায় ঘাসে; শিশিরের কান্নায়,
নাহয় স্বচ্ছ ফড়িং ডানায়।
আকাশে নেই, বাতাসে নেই...
নেই আর্ত চিৎকার কিম্বা নিগূঢ় নীল মৌনতায়।
দূর আকাশের সপ্তর্ষিমন্ডলের আহাজারিতে মন ভিজিয়ে
শূন্যতায় আঁকি তেমনই এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
আমাদের ছেড়ে তুমি কোথায় আছো জুঁথী???
যাবার সময় -
চলে গেছ দস্যুবেশে।
গৃহকর্তাকে নি:শেষ করে -
ঠিক যেভাবে সর্বস্ব লোটে দুর্ধর্ষ ডাকু সর্দার।
আড়চোখে একটিবারও ফিরে দেখনি
পেছনটায় কতটা লন্ডভন্ড!
তছনছ ঘর-দোর,
থমথমে গেরস্হালী,
শোকাহত গৃহকর্ত্রীর স্তব্ধ শূন্যদৃষ্টি।
মহাকালের কোল থেকে ছিনিয়ে নিতে
প্রতিমুহূর্ত তোমায় আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজি।
কোথাও নেই তুমি!
সবাইকে ধোঁকা দিয়ে
এভাবে কেমন করে পালিয়ে যেতে পারলে!
সবকিছু ছিনিয়ে,দস্যি ঘোড়া ছুটিয়ে
সকলকে নি:স্ব করে কেন চলে গেলে জুঁথী???
দিনশেষে খতিয়ান ভালো করে মিলিয়ে দেখ-
হিসেবের গড়মিলে কতটা হেরে গেছ তুমি!
নিয়ে যাবার ছল করে
সবকিছু ফেলে গেছ ভুলে।
হৃদপিন্ডের বিদীর্ণ অংশ ছাড়া
আমাদের আর কিছুই যে নেই তোমার সাথে।
শত সহস্র আবেগ ভাঙা কাঁচে পা মাড়িয়ে
আলতা রাঙা পায়ে হেঁটে গেছ দিগন্ত পেরিয়ে।
ছিন্ন ভিন্ন পাঁজরের হাড়গুলো
অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছো
ঘরের মেঝেতে, চলতি পথের বাঁকে।
বিদায়ী পদছাপে তারা প্রতিনিয়ত অনুসরণ করে
ঊষর হৃদয় থেকে তোমার সমাধীস্হল পর্যন্ত।
ফিরে এসে একবার ছুঁয়ে দাও আমায়!
সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি কিম্বা জাদুর কাঠিতে নয়;
তোমার বাঁশরী আঙ্গুলের সুরের লহরীতে
ঝংকার তুলে ফিরিয়ে দাও আমাদের প্রাণ।
দারুণ উল্লাসে পরস্পরকে জড়িয়ে
এসো উপভোগ করি বাক্সবন্দি মিলন সুখ-আনন্দ।
দোহাই লাগে!
আমাকে তুমি ছুঁয়ে দাও জুঁথী!
দমবদ্ধতার দাওয়াই হিসেবে অসাড় নীল ঠোঁটে
তোমার একটি হাসির দ্যোতনায় ভরে দাও অম্লজানের সুধা।
এরপর হাতে হাত রেখে
এসো একসাথে পেরোই মহাকালের দূর্ভেদ্য সেতু।
আমাকে তোমার সঙ্গী করে নাও জুঁথী!!!
ধরনীর বুকে তোমার স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে,
শোকে মুহ্যমান প্রিয়জনদের জীবন্ত লাশ বয়ে বেড়াতে,
বড্ড বেশি কষ্ট হয় আমার।
ছবিসূত্র : ইন্টারনেট।
*** জুঁথী আমার একমাত্র ছোটবোন। আজ থেকে নয় বছর আগের এই দিনে,আমাদের সবাইকে নিঃস্ব করে পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে।
সে নিষ্ঠুর দেশ দেখতে কেমন, কতদূরের পথ, ঠিকানা বা যোগাযোগ ব্যবস্হা কিছুই জানা নেই আমার। শুধু জানতে ইচ্ছা করে,সেখানকার অধিবাসীরা কি বিশ্বাস করে - চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮