somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুলের কানে গুনগুন

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অভিমানী প্রিয় ফুল,
তোমরা কি ভুলে গেছো আমার ঠিকানা? সেই যে ধুলায় লুটানো এত্তগুলো গোলাপ! হ্যাঁ, তোমাদের সাথেই কথা বলছি। তোমাদের দীর্ঘশ্বাসেই কি অভিশপ্ত আমার বাতাস? আচ্ছা, বলো তো! -
গোধূলীর নিঃস্তব্ধ রাস্তায় আচমকা কোন ছেলে পথ রুখে দাঁড়ালে ভয়ে বুঝি কিশোরীর বুক কাঁপে না!
ধুর ছাই! সেই ভীতুর ডিম কিশোরটাও তো হাতের মুঠোয় তোমাদেরকে গুঁজে দিয়ে একলাফে দৌঁড়ে পালালো!
তো, সে কি সাঁঝ বেলার ভুত নাকি হৃদয়ে প্রেম লুকানো প্রেমিক, এত কম সময়ে কে-ই বা চিনবে বলো?
মুখটাইতো দেখা হয়নি সেদিন। শুধু মনে আছে ছোট্ট একটু আলতো হাতের স্পর্শ আর বুকের ভেতর বিদ্যুৎ চমকের মতো মৃদু একটা কাঁপন!
ওমা! হৃদ কাঁপন থামার আগেই তো টুপ করে ছেলেটা গায়েব! ভয়ে তো ফুলগুলো সেখানেই ফেলে দিলাম সেদিন!
বাবা রে! এমন তিন সন্ধ্যায় বাবলা গাছের ভুতটা যদি শ্যাওড়া গাছের পেত্নীটাকে ফুল দিতে যাওয়ার পথে আমায় দেখে এভাবে পালিয়ে থাকে! তাহলে তো ভোর রাতে পেত্নী ঠিক ঠিক আমার ঘাড় মটকাবে! না, না, বাবা! নিকুচি করি তেমন ফুলের!

তবে ভোরবেলাতে মনটা খুব কেমন করেছিলো জানো!!!
যখন মেইন গেটের পাশে এতগুলো ছেঁড়া গোলাপের পাপড়ি দেখে বাসার সবাই হাসাহাসি করছিলো। সবে তো মাত্র ক্লাস সিক্স! তাই আমাকে বাদেই সন্দেহের তীরগুলো এর ওর দিকে ঘুরছিলো। আমি শুধু টুথব্রাশটা হাতে নিয়ে পায়চারী করছিলাম পাপড়ি ছড়ানো জায়গাটায়। তখনো সেখানে পড়ে ছিলো ফোঁটা ফোঁটা রক্তের মতন এক গুচ্ছ গোলাপের লাল পাঁপড়ি। তেমন একটা কুড়িয়ে নিতেই চোখে পড়লো একটুকরো সিগারেটের ছেঁড়া মোড়কে গোঁটা অক্ষরে লেখা ছোট্ট একটা নাম - িMথE।

কেউ দেখে ফেলার আগেই যতটা দ্রুত সম্ভব হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেললাম কাগজটা।
এরপর কত রাত যে ভীরু বুকে কাগজটা ছুঁয়েছি! তোমাদের আছে সে খবর!
অভিমান করেছিলে বুঝি?
সত্যিই, তোমাদেরকে তখনো ভালোবাসিনি আমি। ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়নি সেই হরিণের মত দ্রুতবেগে পালানো কিশোরটিকেও! শুধু আজও মনে গেঁথে আছে ছেঁড়া কাগজে লেখা বিভিন্ন বর্ণ, সংখ্যায় গোটা গোটা অক্ষরের একটি নাম - িMথE।
আমাকে ক্ষমা করে দিও অভিমানী গোলাপের ছিন্ন ভিন্ন লাল পাঁপড়ির দল।

পারলে তুমিও আমায় ক্ষমা করে দিও বকুল ফুল।
তোমার নামের সাথে জড়িয়ে রেখেছি শুকনো স্মৃতির সুগন্ধ। মনেপড়ে রাম কৃষ্ণ মিশনের সেই মায়াবী বকুল তলা। ঝিরঝির বাতাসে ঝরে পরা একটি, দুটি, শত সহস্র ফুল। অলস বৃষ্টির মতো টুপটাপ করে সারাক্ষণ ঝরতো শরীরে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে জড়ো হতো কখনোবা এলোমেলো চুলের ভাঁজে ভাঁজে। কতদিন দেখেছি! তার দৃষ্টির উম্মত্ততা খেলা করেছে আমার অগোছালো খোলা চুলে।
কতবার কথা বলায় ছেদ ধরিয়ে চলেছে চুল থেকে ফুল তাড়ানো আঙ্গুলের শৈল্পিক খেলা! মনেপড়ে! একবার,সে আমায় দিয়েছিলো তিনটে পকেট ভর্তি কুড়ানো বকুল সুধা! কড়া ঘ্রাণে, দমকে ওঠা হাঁচির-ই বা সাধ্য কি ছিলো সে বকুলকে অবহেলার!

তবে তুমি কি জানো প্রিয় ফুল?
ভুলের তাড়া কখনো সখনো ফুলের সুগন্ধকে করে তোলে ম্লান। সযতনে পোষা বহু বছরের বকুলসুধাকেও একদিন ফেলে দিয়েছিলাম তাই চরম অভিমানে। আর কেউ না জানুক বকুল, তুমি তো জানো! কতটা ভালোবাসায় তোমাকে ধারণ করেছিলাম মনেপ্রাণে।
আমায় তুমি ভুল বুঝোনা বকুল...।

মনে পড়ে সেই শেষ গোলাপটির কথা।
ভালোবাসা দিবসে পরমেশ্বরের কাছে আকুতি ছিলো আমার। আর সবার মতো একটি ফুলও কি পাওনা ছিলাম না আমি! সে এনেও দিয়েছিলো একটি স্নিগ্ধ সতেজ গোলাপ। ফুলটাকে অনুভবের আগেই যেন কাঁটার স্পর্শ টের পেলাম জানো!
- "আজকের দিনে গোলাপের যা দাম! উফ্!
একচুয়েলি তোমার মত মানুষদের জন্যই এসব উপলক্ষ নিয়ে এতসব ফালতু বাড়াবাড়ি!"

কারো বিরক্তমাখা মুখের পাশে তোমার সৌন্দর্যও যে কতটা মলিন হতে পারে, তুমি কি খেয়াল করেছো কখনো? ভালোবাসার এমন দিনে প্রিয়জনের সাথে বিরক্ত হতে হয় বুঝি! আর, দামটাই বুঝি সব? আমার সাধ, আমার আহ্লাদ! খুব বেশি বিরক্ত হয়ে থাকলে, কেন নিয়ে এলে ফুল???
সেদিন আর ফুলকে নয়, কোন এক বিনিয়োগকে জিইয়ে রাখলাম ফুলদানীতে। একেকটা ঝরা পাপড়ি যেন একেকটা লস প্রজেক্ট।
এক দিন, দুই দিন...।ধীরে ধীরে একটা একটা পাঁপড়ি ঝরিয়ে তুমুল লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে নিঃস্ব হলো গোলাপটা। খুব মিলে গেলো সেই নিঃস্ব তোমাতে আর আমাতে, মনে পড়ে তোমার?
গোলাপটা চলে যাবার আগে কানে কানে আমায় বলেছিলো, 'তুমিই তো এক পরিপূর্ণ ফুল!'
আর অভিমানী আমি ফিসফিসিয়ে বলেছিলাম, নাহ্, আমরা দুজন মিলেই মস্ত এক ভুল।

এক বছর, দুই বছর করে তিন, চার, পাঁচ...
হাওয়াতেই মিলেই গেল আমার ফুলের আজন্ম সাধ!
তারপরও কোন কোন বসন্ত বা বৈশাখে! নির্লজ্জের মত খুব সাধ হয় বেলী ফুলের মালার। আর হবেই বা না কেন! রমনীরা সবাই যেভাবে খোঁপায় তারার ফুল গুঁজে দিয়ে ঘুরে ফিরে আশেপাশে! আমারও তো মনে পড়ে যায়,এখনো কিছু চুল অবশিষ্ট আছে মাথায়। যা দিয়ে দিব্যি একটা খোঁপা গেঁথে ঢেউ তোলা যাবে বেলীর ঝর্ণা ধারায়।

মালা হাতে সে কখনে আসেনি প্রিয় ফুল আমার,
তাইতো তোমরা দিনকে দিন চলে গেলে আমার স্পর্শের অনেক বাইরে।
এমন করেই একসময়, তোমাদের ভুলে গেলাম আমি!
শুধু শাদা কাগজে নীল কালি কলমে অপেক্ষার আঁচড়ে তার জন্য লিখে রাখলাম -
'ও- মোর প্রিয় সখা,
ফুল বিনা হায়!
সাধ্য কি তোমার, বুঝবার!
প্রিয়ার চুলে ফুলের ঘ্রানে লুকানো মাদকতার।'
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৩৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×