নেশার কবল থেকে মুক্তি পেতে হবে আগামী প্রজন্মকে
বিকৃত নেশার ট্যাবলেট ইয়াবা নামটি সবার কাছেই আজ সুপরিচিত। নেশার অনেক সামগ্রী আছে যেমন, গাঁজা, মদ, হেরোইন, ফেন্সিডিল, প্যাথিড্রিন, ক্যানাবিস ইত্যাদি। তবে ইয়াবা এমন একটি কম্বিনেশন নেশার ট্যাবলেট, যাতে থাকে পপি ফুলের নির্যাস থেকে তৈরী মেথাম ফেটামিন, সঙ্গে থাকে ক্যাফেইনের প্রলেপ। এ দুটি উপাদানই মন এবং শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে নব্বই দশকের প্রথম দিকে ইয়াবার প্রচলন শুরু হয়, পরবর্তীতে তা আইন, প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, এই সকল বিভাগ এমনকি অভিভাবকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আজকের এ পর্যায়ে বিস্তার লাভ করেছে। আসলে নেশা এমনই একটি জিনিস যা কোমলমতি তরুণ তরুণীকে সহজেই আকর্ষণ করে। কিভাবে যে এর মায়াজালে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে তা কেউই বুঝতে পারে না। যখন তা ধরা পড়ে, তখন দেরী হয়ে যায় অনেক। প্রতিটি নেশার সামগ্রী শরীরে ও মনে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে, শারীরিক ও মানসিক চাহিদা অনুযায়ী দিনের পর দিন ডোজ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। হোক সেটা মদ, হোরোইন, ফেন্সিডিল, ধূমপান অথবা ইয়াবা। নেশার ধরনই এরকম। শত চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না।
নেশায় আসক্ত তরুণ তরুণী এক ধরনের ভঙ্গুর ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠে। অথবা ভঙ্গুর ব্যক্তিত্ব ও দুর্বল মানসিকতার তরুণ তরুণী নেশায় আসক্তি হয় বেশী। মনের থেকে ইচ্ছা থাকলেও তা থেকে আর নিবৃত্ত হতে পারে না, দিনের পর দিন নেশার ডোজ বাড়িয়ে জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। জীবনের গতিপথ থেকে পিছিয়ে পড়ে অনেকটাই, এক প্রকার হতাশা ঘিরে ফেলে তাকে। পরিবারের থেকে যখন ব্যাপারটি ধরা পড়ে, তখন অভিভাবকগণ তৎপর হন চিকিৎসার জন্য এবং দ্বারস্থ হয় চিকিৎসকের। এই চিকিৎসার জন্য সবার আগে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য্য।
তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ আজ নেশার মরণ ফাঁদে আক্রান্ত। আজকের দিনে তরুণদের সুস্থ বিনোদনের বড় অভাব। ইদানিং অনেকেই বিনোদনের বড় একটি অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটকে। এটা অনস্বীকার্য যে, ইন্টারনেট আর মোবাইলের ব্যবহার আজ অনেকাংশেই মাদকের সহজ প্রাপ্যতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
মাদকাশক্তির বড় এটি অসুবিধা হচ্ছে হঠাৎ করেই মাদক নেয়াটা বন্ধ করা যায় না, ধীরে ধীরে তা ছাড়তে হয়। ফলে এর চিকিৎসা হয় দীর্ঘস্থায়ী। ততদিন অনেকেরই প্রায় ধৈর্য্য থাকে না। আবার দীর্ঘদিন চিকিৎসা গ্রহণ করার পর তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশও যদি পূর্বের মত হয়, তবে তার আবার মাদক গ্রহণের ঝুঁকি থেকেই যায়। একটি কথা না বললেই নয়, নেশায় আক্রান্ত তরুণ-তরুণীরা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে। নিজের ওপর কন্ট্রোল না থাকায় তারা বারবারই মাদক গ্রহণ করে, আর প্রতিবারই প্রতিশ্রুতি দেয় আর কখনো গ্রহণ করব না।
ইদানিং লক্ষ্য করা যায়, দরিদ্রঘরের শিশুকিশোর ও এক ধরনের নেশা দ্রব্য ব্যবহার করে সেটি হচ্ছে ডেন্টি। জুতায় লাগানোর পেস্টিং আর আসবাবপত্রের সলিউশন দিয়ে এ ভয়াবহ নেশা তৈরী করা হয়। পথ শিশুরা পলিথিনের ব্যাগে হলুদ জাতীয় এক ধরনের পদার্থ নিয়ে ফোলাতে আর চুপসাতে ব্যস্ত থাকে। দেখে মনে হয়, খেলা করছে। রাস্তার পাশে এটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে তারা নেশা করছে। খুব অল্প খরচে এই নেশা করা যায়।
আসলে যে ধরনের নেশাদ্রব্য ব্যবহার করা হোক না কেন, শরীরে এর ক্ষতি কিন্তু অপরিসীম। আগামীতে একজন তরুণ তরুণীও যেন এ নেশায় আসক্ত না হয় সেদিকে সকল মহলের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। সেইসাথে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। নজরদারিতে আনতে হবে নাইটক্লাব ও বারগুলোকে সেখান থেকে সর্বসাধররণের হাতে অবৈধ মাদকের সহজ প্রাপ্যতাকে রোধ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে সুস্থ পরিবার, সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ, সুস্থ বিনোদন এবং সুস্থ বন্ধুত্বের সম্পর্ককে।