জ্ঞান ফেরার পর থেকে রিমিতা একটা মুহুর্তও স্বস্তিতে থাকতে পারেনি,শুধু ভেবেছে যার একটা অংশ নিয়ে সে নতুন জীবন ফিরে পেলো,সারাজীবন যার একটা অংশ ওর মাঝে থাকবে কখনো জানতেও পারবেনা সে মানুষটা কে!!
সুস্থ হবার পর রিমিতা আবার ভার্সিটি যাওয়া শুরু করল,রিম ক্যাম্পাসে খুবই পপুলার একটা মেয়ে,খুব চঞ্চল হাস্যোজ্জল আর মিশুক টাইপের।দুর থেকে দেখে ওকে একটু রাগী,অহংকারী বলে মনে করে অনেকেই,কিন্তু যারা ওর সাথে মিশেছে শুধু তারাই বলতে পারবে কতটা স্বচ্ছ মনের একটা মেয়ে সে।রিম ডিপার্টমেন্টে যাবার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল যেনো সহপাঠীরা প্রান ফিরে পেল।সবাই ওকে ওয়েলকাম জানাচ্ছে,এটা সেটা বলছে,ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে,কিন্তু পুলক সবসময়ের মতই নিশ্চুপ বসে আছে।সবাই অনেক বলাবলির পর খুব কষ্টে ওর মুখ থেকে দু চারটা শব্দ বের করতে সক্ষম হলো,কথাগুলো ছিলো " অনেক দিন পর আজ ক্লসে এলে,ভালো থেকো রিমিতা"।সাথে সাথে ক্লাসের সবাই হাসতে শুরু করল।
পুলক আর রিমিতা একই ক্লাসে পড়ে, রিম আর পুলক ঠিক উল্টো স্বভাবের ।পুলক খুবই ঠান্ডা,চাপা স্বভাবের,সল্পভাষী,লাজুক আর পড়ুয়া টাইপ ছেলে,মোটা চশমার ভেদ করে এই পর্যন্ত ও বই ছাড়া খুব কম জিনিস দেখছে সে,বন্ধুরা মাঝে মাঝে ফান করে বলত পুলক এভাবে পাগলের মত বই পড়ে গেলে কিছুদিন পর চশমা চোখে দিয়েও তুই কিছুই দেখবিনা।পুলক নিজেকে সবসময় সবার আড়ালে রাখতেই ভালোবাসতো,এমন ছেলেরা সবসময় সবার মনোযোগের বাইরেই থাকে,এরা মুলত আমাদের বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই জীবনের ফ্রেমের বাইরেই থেকে যায়।
রিমিতাকে অনেক ভালোবাসে পুলক,এই ভালোলাগার পেছনে অনেক খোঁজাখুজি করার পরও কনো যৌক্তিক কারন দাড় করাতে পারেনি পুলক,হয়ত ও নিজেও জানেনা ঠিক কবে থেকে রিমিতাকে সে ভালোবাসে,ওর নিজের বিশাল একটা ডাইরি ছাড়া আর কেউই জানতোনা পুলকের এই অসামান্য অব্যক্ত ভালোবাসার কথা।পুলক কখনোই চাইতনা রিমিতা বা অন্য কেউ এই ব্যাপারটা জানুক,কারন রিমিতার মত মেয়েকে ভালোবাসাটাই পুলক চরম দুঃসাহস বলে মনে করে।নিজেকে সবার চোখে হাসির পাত্র বানাতে চায়নি বলেই হয়ত একরকম নিশ্চুপ ভাবেই কাটিয়ে দিয়েছে এতটা সময়।এমনকি রিমিতাকে নিয়ে কখনো কারো সাথে আলাপ পর্যন্ত করতোনা সে।
ফাইনাল পরীক্ষার দুই মাস আগে বাবা মার ঠিক করা পাত্রের সাথে রিমিতার এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো হঠাৎ করেই,পরদিন ক্লাসে এসে খবরটা জানতে পারলো পুলক,একদিন না একদিন এরকম কিছুই ঘটার ছিলো এটা জানা স্বত্তেও বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠলো ওর।
সবাইকে হেসে হেসে খুশীর খবরটা জানাতে ব্যস্ত ছিলো রিমিতা সেদিন।পুলক আলাদা এক জায়গাতে চুপচাপ বসে ছিলো, "পুলক তুমিতো আমার হবু বরের কথা কিছুই জানতে চাচ্ছোনা"-বলেই রিম ওর পাশে গিয়ে দাড়াল।
পুলক..আমিকি বলবো বলো?
রিম..জানতে চাও যে কেমন দেখতে আমার হবু বরটা!
পুলক..তোমার বর নিশ্চই তোমার মতই হবে।
রিম..আমি কেমন পুলক?
পুলক...জানিনা,কিছু বলার ভাষা নেই আমার।
কথাটা শুনার পর রিমিতার মনে হচ্ছিল আজ মনে হয় পুলকের মনটা কোনো কারনে খারাপ,রিম কিছু বলার আগেই পুলকের ঐ কথায় বন্ধুরা হাসতে হাসতে শেষ,তুই এমন ভাবের কথা কেমনে বললিরে পুলক!!বেচারা লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ের গেলো ,রিমিতা বলল চুপ থাক
বেচারাটাকে সবসময় এমন খেপাস কেন তোরা!!
কি মনে করে যেনো রিম সেদিন পুলকের পেছন পেছন বেরিয়ে যায় রুম থেকে ,ক্লাস থেকে সেদিন বের হয়ে নিজেকে আর সামাল দিতে পারছিলোনা পুলক,সোজা লেকের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলো ,রিমিতা ভাবছিলো এরকম তো সবসময়ই ক্লাসের সবাই মজা করে ওকে নিযে আজ কি হলো ওর!!কাছে গিয়ে রিমিতা বলল কি হয়েছে আজ তোমার পুলক? পুলক রিমিতা কে দেখে হতবাক হয়ে বলে তুমি এখানে? রিমিতা বলল তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে এলাম,কি হয়েছে -তোমার কি আজ মন খারাপ কোনো কারনে?কিছুক্ষন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে যখন বুঝতে পারলো যে চোখের ভাষাকে হয়ত আর বেশীক্ষন লুকিয়ে রাখতে পারবেনা রিমিতার কাছ থেকে তখন কিছু না বলেই চলে গেলো পুলক।
রিমিতার মনটা আজকে একটু খারাপ,কালকে থেকেই কেনোজানি বারবার পুলকের ঐ চোখ দুটোর কথা ভুলতে পারছেনা,কি যেন একটা বলতে চায় পুলকের চোখ দুটো ওকে।পুলক কি আসলে আমাকে পছন্দ করে-এমন অনেক কথাই ভাবতে থাকে রিম,না না তা কি করে হয় পুলক তো কোনো মেয়ের দিকে কখনো তাকায়ওনা,তাছাড়া আমাকে পছন্দ করলে হয়ত কখনো না কখনো আমি বুঝতে পারতাম কিছু ওর আচরন থেকে।হয়ত কোনো কারনে মনটা খারাপ ছিলো পুলকের,আমি যা ভাবছি তা হয়ত ঠিকনা।
"চলবে........... "