চোখ বন্ধ করলে এখনো যেন শুনতে পাই বাতাসের প্রচণ্ড রাগ আর গোঙরানির আওয়াজ, মেঘের রক্তরাঙ্গা ক্রোধ যেন তর্জনী নির্দেশে বলছে-আজ ভয়াবহ শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও! সেই ভীতিজনক আশ্চর্যরকম দৃশ্য আর কি কখনো দেখেছি কি না মনে নেই!
চারিদিকে যেন চলছে মহাপ্রলয়! একদিকে বাতাসে ভাঙ্গার গর্জন, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক ইয়ারে বাতাসের ঘর্ষণে হুইসেলের মতো শোঁ শোঁ আওয়াজ,চারিদিকে ধূলির ঝড়ো-হাওয়া্র তোড়ে বন্ধ দরজাও ধরে রাখা যাচ্ছে না, গুমোট গরম, আস্তে আস্তে শুরু হল ঝড়ের তীব্রতা আর আওয়াজ, এরপর ঘটলো সেই প্রলয়ঙ্করী ঘটনা ......
সত্তুরের দশক বিদায় নেয়ার পালা। দশকের শেষ হতে মাত্র কয়েক মাস বাকি। ঢাকা শহর তখনো অতটা আধুনিক হয়ে উঠেনি; তার সহজ সরল আটপৌরে ভাবটা অতটা চটকদের ছিল না-এখন যেমনটি । তবে কেমন একটা শান্তির আমেজ ছিল! আমার ও সবে সন্ধিকাল শুরু হতে যাচ্ছে! এখন যাকে 'টিনেযার ' বলে তাই বোধ হয় ছিলুম! যাক সেসব কথা।
পিঠেপিঠি কয়টা ভাইবোন, তখনকার সময়ে যাহতো-হাতাহাতি হতো কথায় কথায় ,আবার একজনকে ছাড়া আরেকজন অচল! আবার প্রায় প্রতি ঘরেই ভাই-বনের সংখ্যাও নেহায়েৎ কম ছিল না! কোন কোন পরিবারের কর্তা গর্ব করে বলতে পারতেন -'আমিতো একটা ফুটবল টীম গঠন করতে পারব হে !' তবে আমাদের ভাইবোন তার কাছাকাছি ছিলো বটে!
আমাদের বাড়ীর সামনেই ছিল একশো ফিট বড় রাস্তা, সারাক্ষণ গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ লেগেই থাকতো ! কিন্তু সেদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর মনে হল গাড়ির আওয়াজ একটু যেন কমে আসলো। কিন্তু আকাশটা গুমুট হয়ে আছে। যেন রেগে আছে! আম্মার শরীরটাও ভালো নেই, দাদা অর্থাৎ বড়ভাই, এক পাঁচতলা হোটেলে- হোটেল 'ইন্টার-কনে' চাকুরি করতেন। তখন পাঁচ-তলা হোটেল বলতে ওই সবে ধন নীলমণি ওই একটিই ছিল! হ্যাঁ যা বলছিলাম -দাদা ছিলেন সেখানে, মেজভাই- খুলনায়, আব্বার চাকুরিস্থলে আব্বার কাছে, কারো আব্বার চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে,আব্বাকে দেখাশোনার জন্য। বাসায় আমরা দু' ভাই তিন বোন আর আম্মা।
ছোট ভাই দুটি -বাবুল আর মুকুল,বায়না ধরেছে - রামপুরা ব্রিজের নিচে মেলা হচ্ছে, মেলায় যাবে দেখতে । আম্মার
কাছে যেয়ে আবদার-
'ও আম্মা, আমাগো ! দেন না যেতে, কত মানুষ যাচ্ছে! আমরা দাদা,ভাইজানের মতো নানাবাড়ীর গ্রামের মেলা দেখতে পারি নাই!এখানে একটু যাই না?
-'দেখ আমাকে বিরক্ত করিস না , আমার জ্বর আসতেছে! আমাকে একটু ঘুমাতে দে বাবা!
_ ঠিক আছে আপনি ঘুমান, আমরা যাই!
আম্মা তখন অস্থির হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জ্বরের ঘোরে বলতে লাগলেন -
-আরে বাবারা যাইস না! আয় আমি তোদের একটা গল্প শুনাই! 'কাল-বৈশাখীর' গল্প!
আম্মার যখন জ্বর হয় তখন আম্মা জ্বরের চোটে অনেক কথা বলতে থাকেন।ওরা ভাবল -আম্মা জ্বরের জন্যই প্রলাপ বকছেন! আসলে ওদের সত্যি সত্যি তিনি গল্প শুনাতে চাচ্ছিলেন।
নিজের শৈশবের স্মৃতি !যে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন বহুকাল আগে যখন 'বালিকা-বধূ' হয়ে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে এসেছিলেন আব্বার পাঞ্জাবির কোন ধরে শক্ত হাতে, ভিতা হরিণীর মতো, চকিত চাহুনি ছড়িয়ে দিয়ে ! যে স্মৃতি হারিয়ে গেছে প্রথম দেখা ইট-সুরকীর দালানের ভিতর! হ্যাঁ, সেই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি আবার যেন আম্মা খুঁজে পেতে চান স্মৃতিচারণের মাঝে।আম্মা উঠে বস্লেন কোঁকাতে কোঁকাতে ।
শোন-সেই কবেকার কথা! আমাদের গ্রামের মানুষগুলো খুবই সাদাসিধা।কখনো কেউ কারো ক্ষতি করতে চাইত না, করতনা,বরঞ্চ কারো উপকারের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিত।আমি চিলাম আমার বাবার অনেক আদরের। তাই হয়ত একটু ভীতু ছিলাম। বাবা-চাচার দুজনের দুই মেয়ে, বুবু বড় আমি ছোট। একান্নবর্তী পরিবার, তবে আমার চাচা আমাকে একটু বেশিই আদর করতেন বুবুর চাইতে।আমি ছিলাম শান্ত প্রকৃতির, আর বুবুকে চাচা বলত 'উড়নচণ্ডী '। এমনি এক বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। আকাশ মেঘলা দুপুর থেকেই। বাবার হাটে যাবার কথা ছিল। কিন্তু যেহেতু সেদিন পহেলা বৈশাখ, নদীতীরে মেলা বসবে, তাই বাবা চিন্তা করলেন মেলাতেই যাবেন আমাদের নিয়ে। কিন্তু আকাশের অবস্থা দেখে আর যাওয়ার সাহস হলনা। বাবা বললেন -
-'আজকে আকাশের অবস্থা দেইখ্যা মনে হইতাছে কাল বৈশাখীর ঝড় আসবে রে, আজ মেলায় যাওয়া হইবো না !' কিন্তু বুবুকে মানায় কে? সে তো নাছোড় বান্দা; কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে-
_ না বাবা, আমি যামুই !
-কী! পাগল হইছস! এই ঝড় তুফানের মধ্যে কেউ বাইরে যায়?
- না না, আমি যামু, আমার যাওন লাগবই! কাকা আমারে লইয়া যাইব! '
আমার বাবা আবার আমার জ্যাঠারে খুব মাইন্য করতো; বাবা আস্তে করে সে জায়গা ছেড়ে চলে গেলো; বুবু বুঝতে পারল না। বুবু পিছন না ফিরেই বলতে লাগলো-
- কি কাকা আমারে লইয়া যাইবা না? কওনা? কি কাকা কথা কওনা কেন?
পিছন ফিরে বাবাকে দেখতে না পেয়ে বুবুর সে কী অভিমান! সে গাল ফুলিয়ে চলে গেলো।
জ্যাঠা আমাকে আদর করে বলল -
- আমার মা' ই ভালো। তুমি ওই পাগলির মতন হইও না!
- জ্যাঠা ! তুফান আইতাছে, আমার ডর লাগে!
-ডর নাই! আল্লারে ডাক!
হঠাৎ দেখা গেলো বাতাসের শক্তি বেড়ে গেলো,চারিদিকের গাছপালা বাতাসের ঝাঁপটায় একবার মাটীতে লুটিয়ে পড়ে,আবার উঠে দাঁড়ায়,যেন কোন বালিকা নৃত্যের তালে তালে তার খোলা এলো-চুল, মাথা , একবার মাটীতে লুটিয়ে দিয়ে আবার উঠিয়ে নিয়ে ঝাঁকিয়ে মাথার পিছন দিকে ফেলছে; এদিকে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে,কালো মেঘের কারণে সূর্য্য ঢাকা পড়েছে অনেক্ষণ হয় , এমন অন্ধকার হয়েছে যে ভর দুপুরেই যেন অন্ধকার নেমে এসেছে! জ্যেঠা আমাকে দাওয়া থেকে ঘরে নিয়ে গেলো। বাবা বুবুকে খুঁজছে ! সবার অলক্ষ্যে কোথায় যে গেলো মেয়েটা ,কেউ টের পেল না। এদিকে বাতাসের তীব্রতাও বেড়ে চলছে এমন যে ঘর থেকে বেরুনো মুশকিল! বাবা বললেন-
ভাইজান ! আমিনারে তো খুইজ্জা পাইতাছিনা! আমি একটু বাইর হইয়া দেইখ্যা আসি?
জ্যেঠা রেগে গিয়ে বললেন-
-না ,না, তোর যাওন লাগবনা! ঝড় থামুক; দেখবি চইল্লা আইব নিজেই!
বাবা আর জ্যেঠার কথার উপর কথা বলতে পারে না। এদিকে ঝড়ের বেগ এত বেশী হল যে কোথাও থেকে ঘড়ের চালা উড়তে শুরু করলো । গ্রামে বেশীর ভাগ টিনের চালা, গাছের ডালপালা ভেঙ্গে টিনের চালের উপর পড়তে শুরু করলো। যখন ঝড় খুব বেশী হয়, গ্রামে সব্বাই আযান দিতে শুরু করে, এতে আল্লাহর মেহেরবানীতে ঝড় কমে যায়। সেদিন তাই হল, চারিদিক থেকে আযান ভেসে আসতে থাকল ; জ্যেঠা ও বাবা আযান দিতে শুরু করলেন,কিছুক্ষণ পর ঝড় কমতে শুরু করলো; ঝড় যখন সামান্য একটু থামলে ,বাবা আর থাকতে পারলেন না, বেরিয়ে গেলেন বুবুকে খুঁজতে । এ বাড়ী ওবাড়ি খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত মৌলভি বাড়ীর দিকে ছুটলেন পুকুরপাড় ধরে। সামনে চেয়ে দেখলেন -পুকুর পাড়ের আমগাছ তলায় শাড়ী পেঁচান কি যেন পড়ে আছে! কাছে যেতেই ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন! এ কি! এ যে আমীনা পড়ে আছে! মাথা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে! অচেতন অবস্থায় তাড়াতাড়ী কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি নিয়ে এলেন। মাথায় পানি দিয়ে,
রক্ত মুছিয়ে ,মুখে পানির ঝাপটা দিতেই বুবুর জ্ঞান ফিরে এলো,জ্ঞান ফিরেই বুবু বলল -
- আমার আম কই ?' এবার সবাই বুঝতে পারল-গাছের নীচে আম কুড়াতে গিয়ে হয়ত মাথার উপর ডাল ভেঙ্গে পড়াতে মাথা ফেটে অজ্ঞান হয়ে যায়।
বাবা সান্ত্বনা দেয়,
-মা তোর আম আছে! আগে ভালো হও ,তোমারো অনেক আম আইন্যা দিমু!
-আমি তো ওগুলা আম্বি'র লাইগ্যা লইছিলাম!
- ঠিক আছে মা! সবার লাইগ্যাই আইন্যা দিমু,এখন একটু চুপ কইরা ঘুমাও তো মা!
বাবা যেন অপরাধবোধে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না! তিনি ভাবছেন-যদি ওকে মেলাতে নিয়ে যাওয়ার কথা দিতেন তাহলে তো, ওকে বাড়ীর বাইরে যেতে হতো না,আর এমন একটা অঘটন ও ঘটতো না।
ঝড় থেমে গেলে দেখা গেলো চারিদিকে ডাকাডাকি, হই চই-
- কে কোথায় আছো গো তাড়াতাড়ি আস মাঝি বাড়ীতে বিজলী পইড়া মানুষ মারা গেছে , তাড়াতাড়ি আস!
ডাক শুনে জ্যাঠা তৈরী হতে লাগলেন আর বাবাকে বললেন-
-ত-তুই ওদের দেখ, আমি সামাদ ভাই আর করিম রে লইয়া মাঝি বাড়ি যাই, কিছু ব্যবস্থা করন লাগবো।
এভাবে সবাই ছুটল গ্রামবাসীর কার কি ক্ষতি হল দেখে , সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য ।
--তারপর কি আম্মা?
আমাদের আর একথার আর জবাব দিতে পারেন নি আম্মা। প্রচণ্ড ঝড়ে ঘর,ঘরের দরজা নড়তে শুরু করলো। আম্মা শারীরিক অসুস্থতা ভুলে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে বললেন-
- তোরা সবাই খাটের নীচে ঢুকে পড়,আমি দরোজাটা ভালো করে লাগাই ! ঝড়ো হাওয়ার এত তীব্র আওয়াজ হচ্ছিল যে আমরা কারো কথা কেউ শুনতে পাচ্ছিলাম না!
বৃষ্টি ছাড়াই শুধু ধূলি ঝড় আর বাতাসের তীব্র শব্দ। আমরা খাটের নীচে ঢুকে গেছি,আম্মা দরজাটা ধরে রাখতে পারছেন না, আমরা শুনতে পেলাম আম্মা যেন চিৎকার করে কি বলছেন। মুহূর্ত মাত্র- হঠাৎ এক বিকট আওয়াজে পুরো ঘর আমাদের উপর ভেঙ্গে পড়ল ! আমরা বুঝতে পারছি না আম্মার কি হল! আম্মা শুধু আল্লাহ্কে ডেকে যাচ্ছেন। যাচ্ছেন!ধুলো আমাদের চোখে মুখে ঢুকে যাচ্ছে ।টিনের উপর টিন পড়ে পড়ে যেন ড্রাম পিটিয়ে যাচ্ছে। কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছিনা। এদিকে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।ভয়ে, গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ।
এমন সময় শুনতে পেলাম কে যেন চিৎকার করে ডাকছে আর বলছে -
- ঘরের ভিতর কি কেউ আছেন ? ঘরের ভিতর কেউ থাকলে বের হয়ে আসুন! পাশে আগুন লেগেছে, তাড়াতাড়ি বের হন! আগুন লেগেছে! আগুন! কিন্তু ঘর তো আর ঘড় নেই! পুরো ঘরটাই তো আমাদের উপর চেপে বসেছে, বের হব কিভাবে?
আম্মা ও অস্থির হয়ে বললেন -
-আমাদের বাঁচান! আমরাতো বের হতে পারছি না! আমাদের একটু বের করুন দয়া করে!
- শোনা গেলো কে কে যেন বলছে - এই টিনটা একটু সরিয়ে দিন, একটু ফাঁক করে রাস্তা করে দিন । তারা আমাদের জন্য একটু ফাঁক করে রাস্তা বের করে দিলেন । আম্মা উহ আঃ করে করে বললেন-
-তোরা তাড়াতাড়ি বের হয়ে যা, নাহলে আগুনের জন্য বের হতে পারবি না, আমরা কাঁদতে কাঁদতে উপুর হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসলাম একজন একজন করে।কিন্তু এ কি !এতো বাতাস যে আমরা যেন দাঁড়াতেও পারছিনা ।বাতাসের প্রচণ্ড আক্রোশ আমাদের চুল টেনে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমাদের উপর আগুনের হলকা গায়ে এসে মুখ চোখ পুড়িয়ে দিচ্ছিল। আমাদের দোকানের লোকগুলো আমাদের বলছে -
- তাড়াতাড়ি ওই বিল্ডিঙ্গে চলে যান, এখনো চারিদিক থেকে টিন উড়ে আসছে, কোন একটি টিন উড়ে এসে গায়ে লাগলে কেটে যাবে তাড়াতাড়ি সরে যাও তোমরা খালাম্মাকে নিয়ে।
আম্মা হাউ মাউ কেঁদে উঠলেন -
- বাবা, তোমরা আমার বাচ্চাদের বাঁচাও, আমার সব শেষ হয়ে গেছে , আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো ?
- আহা! এতো দেরি করছ কেন তোমরা, তাড়াতাড়ি যাও, বৃষ্টি শুরু হবে খুব জোড়ে, আমরা আগুন নিভাতে যাব, চলুন খালাম্মা,আপনাকে ওই দালানে দিয়ে আসি, চলেন ,চলেন!
দুঃখে কষ্টে আম্মার যেন পা চলছিলনা, আমরা আম্মাকে ধরে ধরে কোনরকম টানতে টানতে নিয়ে এলাম 'মিলনবিথী' নামক বিল্ডিঙের কাছে চলে এলাম। কিন্তু দালানের পিছনের দরোজাটা এতো উঁচু যে আমাদের গলা পর্যন্ত।দেখলাম কেউ হাতধরে টেনে টেনে ঝড়ে আহত অনেককে টেনে উপরে উঠিয়ে ঘরে ঢুকাচ্ছে। আম্মাকে দেখলাম বারবার ডান হাতটা বাঁ হাতের কাঁধের উপর রেখে-উহ,উহ করছে , আর হাতটা নাড়তে পারছে না। মনে হল হাতটা দরোজা পড়ে ভেঙ্গে গেছে। আমি লকগুলকে বললাম, আম্মাকে আগে উঠান,আম্মার হাতে ব্যাথা এই হাত ধরে টানবেয়া। না। আম্মাকে নীচ থেকে আমরা ধরলাম উপর থেকে ওরা টেনে তুলল একজন একজন করে।
এদিকে আবার শুরু হল প্রচণ্ড ঝড় আর বৃষ্টি, আমরা একঘরে অনেক লোক ঠাঁসা ঠাসি করে বসেছি। আম্মার গায়ের জর বেড়েছে, সাথে কাঁধের জোড়ায় প্রচণ্ড ব্যথায় কোঁকাচ্ছেন, একটু খাবার পানি নেই। কারণ টিউবওয়েল পর্যন্ত উপড়ে ফেলেছে।এবারির বাসিন্দারা এতগুলো লোক কে জায়গা দিয়েছে এই ঢের।তাছাড়া পানির সংকট তো তাদের নিজেদের ও,কোথা থেকে পানি দিবে! এক ভদ্র মহিলা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো,পানি না পেয়ে কাপড় ধোয়া পানি খাওয়ালেন তার আত্মীয়রা! উপায় নেই,জীবন বাচাতে হবে।
এদিকে আমাদের ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া বাড়ি থেকে বের হয়ে যে কি দৃশ্য দেখলাম,সেটাও তো বলা হয় নি! যখন আমরা সেই দালানের উদ্দেশ্যে বের হলাম,তখন যে কি এক হৃদয় বিদারক ঘটনাড়
উদ্রেক হল টা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না !
রাত টা সবাই শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলাম।
আত্মীয়স্বজনরা সবাই খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। সবাই বলছেন -বিগত একশ' বছরে ও কেউ এমন যর দেখেনি। আমার তো মনে পড়ে -'টর্নেডো' শব্দটাই এই প্রথম শুনল বাংলাদেশের লোকেরা।
আম্মাকে সকাল বেলা খুব অসুস্থ দেখে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আরেযর দেখেনি। আমার তো মনে পড়ে -'টর্নেডো' শব্দটাই এই প্রথম শুনল বাংলাদেশের লোকেরা।
আম্মাকে সকাল বেলা খুব অসুস্থ দেখে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আরেক দৃশ্য দেখা গেলো- হাসপাতালে তিল ধরণের ঠাই নেই। ব্যাডে ,মেঝেতে,এত মানুশ-কার হাত ভাঙ্গা, ক্র পা,কার মাথা-রকমারি কাটা ছিঁড়ায় আহত লোক, সামনে এগুনোর কোন পথ নেই।
আম্মার হাত কাঁধের জোড়া থেকে ছুটে গেছে, হাত প্লাস্টার করে ফিরে এসেছি আমাদের ভিটিতে। কারণ সেখানে ঘড় বলতে কিছুই নেই। আম্মা তার সাজানো বাগান এভাবে তসনস হওয়া দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন ।অনেক্ষণ কি ভাবলেন, দেখলেন ই.পি.আর.এর লোকজন সবাইকে সাহায্য করছে বাড়ির ভাঙ্গাচূরা জঞ্জাল সরানোর কাজে। আম্মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বল্লেন-চল মা আমরা সামনে আগাই ,থামলে চলবেনা।
আমরা আবার চলা শুরু করলাম।