ভাত-রুটি যা-ই খাই, সেটা একটু বেশি স্বাদ লাগে; কম দামী হলেও যে জামাটা পরি, সেটায় একটু বেশি স্বস্তিবোধ হয়; বুকের ভেতর যে বাতাসটা গ্রহণ করি, সেটা একটু বেশি বিশুদ্ধ আর প্রশান্তির মনে হয় আমি একটি স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়েছি বলে, মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে দেশটা স্বাধীন করেছিলেন বলেই। আমার দুাদুর গোটা জীবনে আর বাবা তার শৈশব-কৈশোরে এত স্বাদের ভাত খেতে পারেননি, এত স্বস্তির জামা পরতে পারেননি, এত বিশুদ্ধ আর প্রশান্তির বাতাস বুকের ভেতর গ্রহণ করতে পারেননি। আমি পেরেছি, আমি ভাগ্যবান। যদিও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণার পর অমুসলিমদের কাছে ভাতের স্বাদ কিছুটা ম্লান হয়েছে, জামাটা একটু আঁটোসাটো হয়েছে, বাতাসে মিশে থাকে বিষাদের ঘ্রাণ!
তারপরও সরকার দেশের বাজেটের অর্ধেকও যদি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খরচ করে, তাতেও আমার কোনো অভিযোগ নেই। মুক্তিযোদ্ধারা কেবল নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন তাই নয়, গোটা পরিবারকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার নিদারুণ যাতনা ভোগ করেছেন যুদ্ধকালীন সময়ে এবং পরবর্তীতেও। তাই মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের কাছে আমাদের অনেক ঋণ।
যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা একেবারে বাদ দিতে চায়, হয় তারা স্বাধীনতাবিরোধী, না হয় অকৃতজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখতেই হবে, কারণ তাদের সন্তানরা যুদ্ধের যাতনা ভোগ করেছেন। তবে এই কোটা সন্তানদের পর্যন্তই রাখা উচিত, এর পরের প্রজন্মে নয়। এমনিতেই হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রের সু্বিধা ভোগ করছে, এজন্য সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
আদিবাসী কোটাও রাখতে হবে। রাষ্ট্র তো বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় শিক্ষার সব রকম সুবিধা পৌঁছে দিতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্গম পাহাড়ে বেড়ে ওঠা একজন শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফল ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে বেড়ে ওঠা একজন শিক্ষার্থীর মতো হবে না। তাই তাদেরকে রাষ্ট্রের মূল ধারায় রাখতে কোটা রাখতেই হবে। নইলে এই প্রান্তিক মানুষেরা আরও পিছিয়ে পড়বে, জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে না। যা রাষ্ট্রের জন হবে ক্ষতিকর। তেমনিভাবে প্রতিবন্ধী কোটাও রাখতে হবে। নইলে প্রতিবন্ধীরাও দেশের বোঝা হবে। তাই মানবিক কারণে, বৈষম্য দূর করতেই কোটা রাখতে হবে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাধীনতাবিরোধী ও আদিবাসীবিদ্বেষীদের ছানাপোনারা ঢুকে পড়েছে। তারা কোটা বাতিল চাইবেই, কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই উস্কানিতে পা দেওয়া অনুচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:৩৪