পেশাগত কারণে এক সময় আমাকে মন্ত্রী, এমপি, বিরোধী দলীয় নেতা, ব্যবসায়ী, সচিব, পুলিশ কর্মকর্তা, সংস্কৃতিকর্মী ইত্যাদি সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বাড়িতে যেতে হয়েছে। দু-তিনবারের ব্যতিক্রমের কথা বাদ দিলে আমি কখনো কারো সঙ্গে ছবি তুলিনি, তৈলমর্দনের তো প্রশ্নই আসে না। আমার বোনের মতে আমার বিষয়বুদ্ধি নেই, একজন লেখকের জন্য তা খুব জরুরীও নয়, এই বিষয়বুদ্ধি নেই বলে আমি কখনো কোনো মন্ত্রী বা সচিবের কাছে খ্যাপের কাজের জন্য আবদারও করিনি। কারণ আমার সময় নেই, লেখার ক্ষতি হবে।
ছবি তোলা এবং ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার একটা সামাজিক মূল্য আছে, আমার পরিচিত এক ছেলে ভিড়ভাট্টার মধ্যেও কোনো নেতার সঙ্গে ছবি তুললে সেই ছবি ফেসবুকে প্রচার করে এবং এলাকায় গেলে এমন গালগল্প ফাঁদে যেন সেইসব নেতার কতো কাছের মানুষ সে! এরপর এলাকার লোকজন তো চাকরি বা বদলীর জন্য তাকে ধরে, কিন্তু সে না পারে চাকরি দিতে, না পারে বদলী করে দিতে। কিন্তু অনেকেই তাকে প্রভাবশালী ভাবে, তার দিকে আগে চেয়ার এগিয়ে দেয়। ওই যে বললাম সামাজিক মূল্য, কোথাও না কোথাও ছবি তোলার পরিশ্রমের মূল্যটা পাওয়া যায়।
ব্যতিক্রমের কথা বলি, একবার ক্যামেরাম্যান বলে- ‘আসেন ভাই স্যারের সাথে ছবি তুলি।’ আমি পড়ি বিব্রতকর অবস্থায়, সিনিয়র নেতা এবং সাবেক মন্ত্রীর সামনে বলে ফেলেছে, না দাঁড়ালে তিনি কী মনে করেন তাই সবার সাথে দাঁড়াই। এরকমই আরেকবার হয়েছিল আরেক মন্ত্রীর বাসায়। আমাদের অফিসেই একবার টিমের সবাই ছবি তুলেছিলাম সুলতানা কামাল আপার সঙ্গে। সুলতানা আপার সঙ্গে ছবি তুলতে আমার কোনো অসুবিধা নেই, তিনি যদি সরস্বতীর মতো দাঁড়ান আমি তার পায়ের কাছে হাঁসের মতো বসেও ছবি তুলতে রাজি! আমার কাছে সুলতানা কামাল অন্য মানুষ, বাংলাদেশে এইরকম মেরুদণ্ডওয়ালা নারী এই একজনই। মাসে এক-দুবার তো সুলতানা আপার সঙ্গে কথা হয় ফোনে, কিন্তু কখনো এই কথাটি বলা হয়নি আমি তাকে কী চোখে দেখি, তাকে হৃদয়ের কোনখানটায় রাখি। আমার যা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কোনোদিন তা বলতেও পারব না।
এই যে আমি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের সঙ্গে ছবি তুলি না, তাই আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, এ কি আমার অহংকার? আবার নিজেই বলি- তাই বা কী করে হয়, আমি তো রাস্তার কুকুর-বিড়ালের সঙ্গেও ছবি তুলি, পথচলতি কোনো অখ্যাত বাউলকে ডেকে তার গান শুনি, ছবি তুলি।
এবার নিচের ছবিটার প্রসঙ্গে আসি, শ্রীলংকার পদকপ্রাপ্ত একজন সাংবাদিক, বিদ্রোহীরা হাতের কাছে তাকে পেয়ে আচ্ছামতো ঠেঙিয়েছে! ছবিটা দেখার পর কী যে শান্তি লাগছে আমার, নিজের বুদ্ধির তারিফ করে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াচ্ছি! কে বলে আমার বিষয়বুদ্ধি নেই? ঢের আছে! ওই যে যেসব শ্রেণিপেশার মানুষের কথা বললাম তারা তো এক পা দিয়ে রেখেছে বেগমপাড়া, বিবিপাড়াসহ নানা পাড়ায়, নির্বাচনের সময় বিমানের টিকিটের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। আমার তো গ্রামের ভিটে ছাড়া যাবার জায়গা নাই। ভাইরে, চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়, আগামী দিনের কথা কে বলতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২২ রাত ৩:৪৮