গতকাল সুমন আহমেদ নামক একজন ব্লগারের আমি জোর দিয়ে বলব, প্রতিযোগিতা ও মেধায় নারীরা কখনোই পুরুষের সমমান হতে পারবেনা লেখাটি পড়ে খুবই অবাক হয়েছি। তার লেখাটির সাথে দ্বিমত পোষণ করেই আমার এই লেখার অবতারণা।
আলোচ্য লেখাটির শিরোনাম এবং বক্তব্যের সাথে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তিনি শিরোনামে লিখেছেন, প্রতিযোগিতায় ও মেধায় নারীরা কখনোই পুরুষের সমমান হতে পারবে না। অথচ আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি বিষয়টিকে তিনি বিবেচনা করেছেন শুধু শারীরিক গঠন অনুযায়ী। আমি বুঝলাম না শারীরিক গঠনের সাথে মেধার কি সম্পর্ক? আর কে বলেছে নারীরা পুরুষদের চেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে? তার অবস্থানটাই ছিল স্ববিরোধী।
আমি প্রথমেই স্বীকার করব কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রকৃতিগতভাবে নারীরা শারীরিকভাবে পুরুষদের চেয়ে কিছুটা দুর্বল। তার একটি প্রধান কারণ হয়ত মাতৃত্বজনিত। কিন্তু নারীরা শারীরিকভাবে যতটা না দুর্বল, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদেরকে তার চেয়ে বেশি দুর্বল করে রেখেছে মানসিকভাবে।
আমি কয়েকটি উদাহরণ টানতে চাই। আমি ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। শুনলে অবাক হবেন আমাদের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, মেডিকেল এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলোতে প্রথম দিকের অধিকাংশ মেধাস্থান দখল করে নিয়েছে মেয়েরা এবং এই ধারাবাহিকতা বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে।
কিছুদিন আগে আমাদের প্রথম বর্ষের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। সেখানেও প্রথম তিনটি অবস্থান দখল করে আছে মেয়েরা। শুধু তাই নয়, চতুর্থ স্থান যে ছেলেটি দখল করেছে, তার সাথে মেয়েগুলোর মার্কস-এর বেশ ব্যবধান রয়েছে। সুতরাং এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে নারীরা পুরুষদের চেয়ে মেধা ও প্রতিযোগিতায় কখনোই পারবে না। বরং নারীরা সুযোগ পেলে অনেক জায়গায় পুরুষদের চেয়েও ভাল করতে পারে এবং সেটি কোন দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়, তাদের মেধা আর পরিশ্রম দিয়েই তা করে।
এবার আসুন, শারীরিক গঠন অনুযায়ী। এক সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী-- এগুলোতে নারীদের নেয়া হত না। তার কারণ হিশেবে উল্লেখ করা হত যে নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল। কিন্তু এখন নারীদের নেয়া হচ্ছে। তারাও পুরুষদের মত একই ট্রেনিং গ্রহণ করছে। বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে হ্যাঁ, আমি শুনেছি কিছু ভারী ট্রেনিং নারীদেরকে দেয়া হয় না। তার কারণ হল এতে নারীটির মাতৃত্বজনিত ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই আশংকা যদি না থাকত, তাহলে ঠিকই নারীরাও পুরুষদের মত সব ধরণের ট্রেনিং গ্রহণ করতে পারত।
সবশেষে আমি বলব নারীদেরকে সুযোগ করে দিন। তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরী করে দিন। তাহলেই দেখবেন তারা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে পুরুষেরও অনেক উপরে উঠে যেতে পারে এবং তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
পুনশ্চ:
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার আমাদের সমাজ এক সময় এমন ছিল যখন কন্যাশিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হত। তাদেরকে মানুষ হিশেবে বিবেচনা করা হত না। মহানবীসহ কিছু মহামানবের জন্য নারীদের সম্পর্কে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারণা কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়। আজ নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হলেও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আজ একটি দম্পতির স্বপ্ন থাকে একটি চমৎকার ছেলে ও মেয়ে থাকবে। কন্যশিশুকে দেখা হয় সৌভাগ্যের প্রতীক হিশেবে। আমার বাবাতো ঘোষণাই দিয়েছেন, তার যাবতীয় সৌভাগ্যের মূলে রয়েছে আমার ছোট বোন। কেননা, ওর জন্মের পরই আমাদের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। অতএব, আবারো বলছি নারীদের সুযোগ দিন, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন, তাহলেই আমরা উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারব। বেগম রোকেয়া যথার্থই বলেছেন, অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বসিয়ে রেখে একটি জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না।