আমি ছোটবেলা থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুনে আসছি। কিন্তু কখনোই বিষয়টি ভাল করে বুঝতে পারতাম না। এখন আমি আইনের ছাত্র বিধায় আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার অনুচ্ছেদটি পড়ি। এটি পড়ার পরে আমার কাছে মনে হয়েছে এত চমৎকার একটি অসাম্প্রদায়িক ধারণার কত বিকৃত ব্যাখ্যাই না দেয়া হয়েছে! কেউ এটির সমালোচনা করছেন বুঝে, আবার কেউ করছেন না বুঝেই। অনেকে আবার ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা হিশেবে সমালোচনা করেন। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের মূল সংবিধানকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং আদর্শ সংবিধান। এ সংবিধানে মূলনীতি হিশেবে গ্রহণ করা হয় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে। এগুলোই ছিল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের অনুপ্রেরণা।
অথচ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এসেই সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেন। আমাদের মূলনীতিসমূহকে, যেগুলো বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে আদর্শ হিশেবে কাজ করেছে, পরিবর্তন করে দেন। বাতিল করে দেন ধর্মনিরপেক্ষতা সম্বলিত ১২নং অনুচ্ছেদকে। আমি নিচে বাতিলকৃত ১২ অনুচ্ছেদটি তুলে দিচ্ছি:
"ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য---
(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাঁহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।"
এই অনুচ্ছেদটি হল ধর্মনিরপেক্ষতার পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা। এর চেয়ে চমৎকার অসাম্প্রদায়িক বিধান আর কি হতে পারে! অথচ এটিকে বাতিল করে দিলেন জিয়াউর রহমান। প্রতিনিয়ত এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এই বিধানটি না-কি ধর্ম বিরোধী! অথচ এই বিধানটি মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি চমৎকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার রক্ষাকবচ ছিল।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন, আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা নিয়েছি ভারতের সংবিধান থেকে। অথচ সত্য এই যে, বাংলাদেশের সংবিধান বিধিবদ্ধ হবার চার বছর পরে ভারত রাষ্ট্রের সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' রাষ্ট্র পরিচালনার একটি নীতি হিশেবে সংযোজন করে।
ভবিষ্যতে আরেকটি বিস্তারিত পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা রইল।