এক.
ঢাকা শহরে হাঁটলে নিশ্চয়ই আপনাদের চোখে একটি বিষয় প্রায়ই চোখে পড়বে-- "পড়াতে চাই"। আমরা এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু একদিন ধানমন্ডি দিয়ে হাঁটার সময় দুটো বিজ্ঞাপন দেখে আমার চোখ আটকে গেল। একটিতে লেখা- "থাপড়াতে চাই"। নিচে বিজ্ঞাপনদাতার মোবাইল নাম্বারসহ বিস্তারিত ঠিকানা দেয়া। কেউ থাপ্পড় খেতে চাইলে তার সাথে ঐ নাম্বার বা মোবাইলে যোগাযোগ করতে হবে। কোন দুষ্ট ছেলে নিশ্চয়ই "পড়াতে" শব্দের আগে "থা" বসিয়ে দিয়েছে। আমার বেশ মজা লাগল।
আরেকটি বিজ্ঞাপনে লেখা- পাড়াতে চাই। তাহলে দাড়ায় এমন যে বিজ্ঞাপনদাতা পা দিয়ে মাড়ানোর জন্য এই বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এখানে আ-কার যোগ করাটাও নিশ্চয়ই কোন দুষ্ট বালকের কাজ।
দুই.
সেদিন সকালে ধানমন্ডি থেকে শতাব্দী বাসে উঠেছি। পিছনের দিকে সিটে বসলাম। আমার সামনের সিটদ্বয়ে দুটো ছেলে বসা। খুব সম্ভবত এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিল। হঠাৎ একটি ছেলে অপরটিকে বলল আচ্ছা, জয়ার কি খবর? ওকে কি খুঁজে পাওয়া গেছে? পাশেরটি খুব আত্মতৃপ্তির সাথে বলল, হুমম... জয়াকে পাওয়া গেছে! ব্রেকিং নিউজ দেখিসনি!
-কি হয়েছিল? কই ছিল?
-আররে ধুর! বলিস না! সে তার মোবাইলটা অফ করে রাখছিল। এজন্য সবাই টেনশনে ছিল।
-তাও পাওয়া যে গেছে এতেই আমি খুশি। ওকে আমার খুব ভাল লাগে। আমি তো টেনশনেই ছিলাম। বেচারির কি-না-কি হয়েছে!
আমি পিছনে বসে বালকদ্বয়ের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলাম এবং মনে মনে হাসতে ছিলাম। একবার ভাবলাম ওদের বলি, এটি বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপন। কিন্তু অযথা নাক গলাতে ইচ্ছে করল না।
তিন.
আমার এক বন্ধু আছে। তার জীবনে একটি বড় স্বপ্ন আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় সে খুব হতাশ। তবে এখনো তার আশার প্রদীপ নিভে যায় নি। তার স্বপ্নটি হল কোন এক তরুণী মা'র সন্তানকে সে পড়াবে এবং তরুণী মায়ের সাথে পরকীয়া করবে। সেজন্য সে হন্যে হয়ে প্রাইভেট খুঁজছে। বেশ কিছু পেয়েছেও; তরুণী মা না হওয়ার কারণে সেগুলোর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন সে প্রাইভেট খোঁজার এক অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তা হল "পড়াতে চাই" বিজ্ঞাপন দেখলেই নিচে যে মোবাইল নাম্বারটা দেয়া থাকে, সেটিকে কেটে নিজের মোবাইল নাম্বারটি দিয়ে দেয়।
চার.
আমার বড় ভাইর এক বন্ধু এশিয়া প্যাসিফিকে পড়েন। থাকেন ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির পিছনে। তো উনি করলেন কি, কম্পিউটারে একটি বিজ্ঞাপন লিখে নিয়ে আসলেন। "TO-LET আগামী ......... মাস থেকে দুইজন মেস মেম্বার আবশ্যক"। আমরা একটু অবাক হয়ে বললাম, সিট খালি নেই; তারপরও বিজ্ঞাপন কেন! তিনি একটু হাসলেন কিন্তু কিছু বললেন না। পরে তার কাহিনী শুনে তার বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না। কাহিনী হল- বিজ্ঞাপনটিতে তার ব্যবহৃত বাংলালিংক নাম্বার দিয়ে দিলেন। শূণ্যস্থানে মাসের নামটা হাতে লিখে দেন। এরপর ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আশে-পাশে দু'তিনটা বিজ্ঞাপন লাগিয়ে দেন প্রতিমাসে।
ওখানে ব্রাক ভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ, পর্যটন কর্পোরেশন, ইস্ট-ওয়েস্ট ভার্সিটির কারণে মেসের প্রচুর চাহিদা। প্রতিমাসেই অনেক ছাত্র বাসা খোঁজে। যার কারণে তারা বিজ্ঞাপন দেখলেই মোবাইলে কল দেয়। ভাইয়ার কাছেও কল দিয়। ভাইয়া অনেকক্ষণ কথা বলার পর বলেন আমার এখানে তো সিট খালি নেই। তুমি আগামী মাসে যোগাযোগ কর। তখন খালি হতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলালিংক তখন অফারটি নতুন দিয়েছে- ইনকামিং কলের উপর ভিত্তি করে বোনাস দেয়া হবে। এভাবেই তিনি ইনকামিং এর জন্য বাংলালিংক থেকে প্রচুর বোনাস পেয়ে যান।
পাঁচ.
আমার আরেক বন্ধু একটি বিষয় নিয়ে খুবই হতাশ। তার মতে, একটি বিষয়ে আমরা রীতিমত প্রতারণার শিকার হচ্ছি। আমি বললাম আমরা তো কত কিছুতেই প্রতারণার শিকার হচ্ছি; তুই আবার নির্দিষ্ট করে কি কিছু পেলি না-কি? সে যা বলল, তা শুনে আমার আক্কেলগুড়ুম। তার ভাষ্য এরকম- কোন টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন দিলে দাঁত দেখানো হয়, ক্রিমের বিজ্ঞাপন দিলে মুখমন্ডল দেখানো হয়, লোশনের বিজ্ঞাপন দিলে শরীরের কিয়দংশ দেখানো হয় কিন্তু সেনোরা ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দিলে ঐ বিশেষ অঙ্গটার কিছুই দেখানো হয় না। এটি রীতিমত জনগণের সাথে প্রতারণা। ভারি অন্যায়। সে এহেন প্রতারণায় খুবই মর্মাহত।
আমি আর কি বলব!