somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুতেন খামেনের অভিশাপ এবং এর রহস্যময় পরিনতি

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রহস্যময় মিসরীয় সভ্যতার পিরামিড ও মমি মানুষকে আজো বিস্মিত করে। এ যাবৎ আবিষ্কৃত প্রথম এবং একমাত্র অক্ষত মমি কিশোর ফারাও তুতেন খামেনের। আখেনাটেনের পুত্র কিশোর রাজা তুতেন খামেনের মমির আবিষ্কার ও এর পরের নানা রহস্যময় ঘটনার বিস্তারিত নিয়ে এই আয়োজন।




প্রাচীন মিসরের ফারাও তুতেন খামেনের অভিশাপে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। যারাই তার পিরামিডে ধন-সম্পদের লোভে গেছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অভিশাপের থাবা। ঘটেছে করুণ ঘটনা। এ এক রহস্য। কারনাভানের অর্থায়নে হাওয়ার্ড কার্টারের মমি আবিষ্কারের পেছনে একটি হলুদ ক্যানারি পাখির অবদান ছিল। ইংরেজিতে 'ক্যানারি'র একটি অপ্রচলিত অর্থ হলো গুপ্তচর। এই পাখিটি তাদের গুপ্তধন পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। আর মমির অভিশাপের বিষয়টিও তাই হলুদ ক্যানারি পাখিকে দিয়েই শুরু হলো। যেদিন অভিযাত্রী দল প্রথম তুতেন খামেনের মমি আবিষ্কার করল, সেদিনই শুরু হলো অদ্ভুত আর রহস্যময় কাণ্ডকারখানা। সেদিন রাতেই হাওয়ার্ড কার্টার তার বাসায় ফিরে এসে কাজের লোকের হাতে কয়েকটি হলুদ পালক দেখতে পান। সেই পালকগুলো ছিল গুপ্তচর ক্যানারি পাখির। ভয়ে আতঙ্কিত কাজের লোকটির কাছে হাওয়ার্ড জানতে পারেন, একটি কোবরা তার ক্যানারি পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে। বছরের পর বছর গুপ্তধন আর প্রত্নতত্ত্বের খোঁজে দুনিয়া চষে বেড়ানো হাওয়ার্ড কার্টার কুসংস্কার সম্পর্কে শুনে এলেও ওই অর্থে বিশ্বাস করতেন না। তিনি ঘাবড়ে না গিয়ে কাজের লোকটিকে এটা নিশ্চিত করতে বলেন, সাপটি বাসার বাইরে চলে গেছে কি-না। কাজের লোকটি যথারীতি আতঙ্কিত ছিল। সে কার্টারের হাত ধরে অনুরোধ করে বলেন, 'এটা ফারাওদের অভিশাপের ফল। ফারাওদের সাপ আপনার পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে। কারণ এটি আপনাদের সমাধি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। ফারাওদের সমাধিতে তাদের বিরক্ত করা আপনার উচিত হবে না।' সত্যিকার অর্থে ফারাওদের সুরক্ষার প্রতীক হচ্ছে কোবরা এবং শকুন। তুতেন খামেনের বর্মটির উপর তাকালেই দেখা যাবে মাথার উপর একটি কোবরার প্রতিকৃতি। এসব নিয়ে খানিকটা বিভ্রান্ত হলেও বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দিলেন না কার্টার। তিনি বরং শীঘ্রই লর্ড কারনাভানের কাছে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন তার আবিষ্কার নিজের চোখে দেখার জন্য মিসরে আসার অনুরোধ জানিয়ে। এরপরই কারনাভান কার্টারের সঙ্গে দেখা করে সমাধিতে প্রবেশ করেন। মজার ব্যাপার হলো লর্ড কারনাভানকে কাউন্ট লুইস হ্যামোন নামক তার এক বন্ধু মিসর যেতে বারণ করেছিলেন। লুইস হ্যামোন ছিলেন হাত দেখা ও ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে বিখ্যাত। লুইস হ্যামোন ঘটনাক্রমে এটা জানতে পেরেছিলেন, 'লর্ড কারনাভান তুতেন খামেনের সমাধিতে আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আর সেই অসুখ কখনোই সেরে উঠবে না। মিসরেই কারনাভানের মৃত্যু হবে।' পাঁচটি বছর যিনি কোনো প্রাপ্তির আশা না করেই তুতেন খামেনের সমাধি খোঁজায় অর্থ সরবরাহ করে গেলেন তার আগ্রহকে দমিয়ে রাখা সত্যি কঠিন ছিল। এই খননকাজের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন লর্ড কারনাভান। তার বয়স ছিল ৫৭। স্বভাবে তিনি ছিলেন দুঃসাহসী। তিনি জানতেন ফারাওদের অভিশাপের কথা। তিনি জানতেন, যারাই ফারাওদের সাম্রাজ্যের দীর্ঘ দিনের স্তব্ধতা ভেঙেছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে প্রচণ্ড দুঃখ। ১৯ শতকের শেষ দিকে আর্থার উইহগল নামের এক লোক ফারাওদের একটি কফিন নিয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। কফিনটি পাওয়ার ঠিক পরই আর্থারের বন্দুক থেকে গুলি ছিটকে আসে। সেই গুলিতে তার একটি হাত জখম হয়। যে জাহাজে করে কফিনটি পাঠানো হচ্ছিল সেটা ধ্বংস হয়ে যায়। কোনরকমে কফিনটি রক্ষা করে একটি বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়। সেই বাড়িতেও লাগে আগুন। এক চিত্রগ্রাহক কৌতূহলী হয়ে কফিনের ছবি তুলেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আত্মহত্যা করেন। এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে একের পর এক। লোকেরা বলত, এসব ঘটছে ফারাওদের অভিশাপে। এসব ঘটনা আর সবার মতো কারনাভানেরও জানা ছিল। তবু গুরুত্ব দিতে চাননি লর্ড কারনাভান। তার মতে, এসব ছিল নিছক দুর্ঘটনা। মানুষের মনে বাসা বেঁধে আছে কুসংস্কার। আর তাই তিনি প্রবেশ করলেন তুতেন খামেনের সমাধিতে। আর হয়তো সেখান থেকেই নিজের মৃত্যু ডেকে আনলেন কারনাভান।

কারনাভান


তুতেন খামেনের সমাধিতে প্রবেশ করার অল্প দিনের মধ্যে মারা গেলেন কারনাভান। কায়রোর একটি হোটেলে তার মৃত্যু ঘটে। বলা হয়েছিল, একটি মশার কামড়েই নাকি তার মৃত্যু ঘটে। কিশোর ফারাও তুতেন খামেনের মমির পাশে ছিল সোনার তৈরি একটি মশার প্রতিমূর্তি। আর সমাধিক্ষেত্রে থাকা অবস্থায় সামান্য একটি মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কারনাভান। তিনি পরে মশার কামড়ের স্থান সেভ করার সময় কেটে যায় এবং ইনফেকশন হয়ে তা একসময় নিউমোনিয়ায় রূপ নেয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে কায়রো হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয়। কারনাভান যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তখন বিতর্কিত এক ব্রিটিশ লেখক ম্যারি কুরেলি সতর্ক করে বলেছিলেন :

'খুবই সম্মানের সঙ্গে এবং নির্বিঘ্নে শায়িত একমাত্র অনাবিষ্কৃত ফারাও রাজার সমাধিতে এবং তার সমাধিতে রক্ষিত ধন-সম্পদে হস্তক্ষেপ করায় কিছু আতঙ্ক চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটা ছাড়া আমার মাথায় আর কিছুই আসছে না। আমার কাছে The Egyptian History of the Pyramids নামে খুবই প্রাচীন এবং দুর্লভ একটি আরবি বই রয়েছে। যাতে লেখা আছে_ "ফারাও রাজার সমাধিতে অনধিকার প্রবেশ করবে তার জন্য অপেক্ষা করছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শাস্তি। বইটিতে কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ আছে এবং সেগুলো ফারাও রাজার কফিনে এতই সূচারুভাবে লাগানো আছে যে, কেউ এটা স্পর্শ করলে জানতেও পারবে না কিভাবে সে ভুগতে যাচ্ছে। আর সেজন্যই আমি জিজ্ঞেস করছি, লর্ড কারনাভানের ক্ষেত্রে এটা কি সত্যিই কোনো মশার কামড় ছিল? আর কেবল মশার কামড়ে কারনাভান কি করে এতটা অসুস্থ হয়ে গেলেন?"


এক্সের ছবি


তার সন্দেহকে সত্য প্রমাণিত করে সমাধিটি উন্মোচিত করার মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে ৫৭ বছর বয়সে লর্ড কারনাভান প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে মারা গেলেন এবং রহস্যজনকভাবে হাজার কিলোমিটার দূরে একই রাতেই তার পোষা কুকুরটি রক্ত হীম করা ও ভৌতিক শব্দে আর্তনাদ করতে থাকে এবং এভাবেই অদৃশ্য কোনো কিছুর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড গর্জন করতে করতে মৃত্যুবরণ করে। লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর মাত্র দুই দিন পর তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মমিটির বাম গালে কারনাভানের মতো ঠিক একই জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে। বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হয় এবং অনেক পত্রিকা এ নিয়ে বাড়াবাড়িও শুরু করে। তারা প্রচার করে সমাধির প্রবেশ পথে হায়রোগি্লফিক হরফে লেখা ছিল :

Death shall come on swift wings to him who disturbs the peace of the King.

পত্রিকাগুলোর মতে, এর অর্থ বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই হাওয়ার্ড কার্টার এটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেন। কারণ এর অর্থ বুঝতে পারলে তার সমাধিতে কর্মরত শ্রমিকদের মনে ভয় জাগ্রত হতে পারে এবং এতে সমাধি আবিষ্কারের অভিযান থেমে যেতে পারে।
সু্এঃbd-pratidin
পর্ব-২
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৪৯
২১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×