একবার আমার ছাত্রীকে বলছিলাম- আমার একটা প্রিয় সূরা আছে।
-কী! খুব অবাক হওয়ার ভঙ্গীতে উত্তর করলে সে, যেন প্রিয় সূরা মানুষের থাকতে পারে না!
-বললাম আমার একটা প্রিয় সূরা আছে।
-মানুষের প্রিয় বই, ছবি, গান থাকে শুনছি। প্রিয় মানুষও থাকে। প্রিয় সূরা ব্যাপারটা শুনিনাই!
-কিন্তু আমার আছে!
-হুম! কোন সূরা?
-শুনো, যখন ছোট ছিলাম তখন আমি বেশ ভালো ক্বিরাত পারতাম। আমি সারাজীবনে একবারই মাত্র কোন কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করছি। স্কুলের বার্ষিক মিলাদে। আমার এক বন্ধু আমাকে ঠেলে স্টেজে পাঠায়ে দিছিল। কোন প্রস্তুতি ছাড়াই সূরা নাসর তিলওয়াত করে আমি সেকন্ড হইছিলাম!
-ওয়াও! গ্রেট ভাইয়া!
আমার এই ছাত্রীটি হিন্দু ধর্মের। খুব বেশি সূরার কথা সে জানে না। ওর মধ্যে উৎসাহ দেখে আমি আরো বলে গেলাম--
-শুনো! শুধু প্রাইজ পাইছিলাম বলে যে এ সূরাটা প্রিয় সেটা না। এই সূরার পেছনে কাহিনীটাও দারুণ। নাসর শব্দের অর্থ ভিক্টরি-বিজয় অথবা সাহায্য। এই সূরার নামের মধ্যেই একই সাথে ইসলামের বিজয় আর আল্লাহর সাহায্যের কথা মনে করায়ে দেয়া হচ্ছে।
-হুম। তারপর?
-এই সূরাতে ইসলামের বিজয়ের কথা থাকলেও এই সূরা যখন নাজিল হইছে তখন নবীর মেয়ে ফাতিমা সহ তার অনেক সাহাবীরা কান্না করেছেন।
-কেন?
-কারণ, এই সূরা যখন নাজিল হইছে ততদিনে মুসলিমরা মক্কা বিজয় করছে, দলে দলে আরব উপজাতি-গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করছে। ভবিশ্যতে যে বিশাল আরব সাম্রাজ্য গড়ে তার ভিত্তি গড়া হয়ে গেছে। সূরার প্রথম দুইটা সেন্টেন্সেই বলা হইছে এই সব কথা- যখন বিজয় আসবে, দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করবে...
-হুম! তারপর?
-তারপর তৃতীয় আর শেষ লাইনে বলছে তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রশংসা কর আর তার কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চই তিনি ক্ষমা প্রার্থনা শুনেন।
-কিন্তু এটা শুউনে কান্না করবে কেন?
-কান্না করার কথা। কারণ নবি মুহাম্মদ বুঝতে পেরেছিলেন তাকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে তার দায়িত্ত্ব সম্পূর্ণ হইছে। ইসলামের বিজয় আসছে। এখন তার কাজ শেষ। এখন চলে যাওয়ার আগে ক্ষমা প্রার্থনার সময়!
-ও! মানে এই সূরাতে উনার মারা যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল।
-হুম। আমার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগে নবীকে বলা হচ্ছে ক্ষমা চাইতে, আর আমাদের মত পাপী মানুষেরা ক্ষমা চাইতে অনেক লজ্জা পাই!
-হায়! আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করে দিক!