নিউ ইয়র্কে বাংলা ব্লগ দিবসের আয়োজন হয়ে গেল আজকে! ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক উৎসাহ আর উদ্দীপনা ছিল, এই ব্লগ দিবসকে ঘিরে। খুব সংক্ষেপে বলি কি কি হয়েছে! ছবিসহ আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবে নীরব নিলয়। প্রথমে কুরআন তেলাওয়াত পর্ব, জাতীয় সংগীত, তারপর পরিচিতি পর্ব, কেক কাটা, খাওয়া দাওয়া, বক্তব্য পর্ব, রুশানের জন্যে সাহায্য, আরিফ ভাইয়ের আব্বার মৃত্যুতে দোয়া, শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং তুমুল আড্ডাবাজি হয়। স্বাগত বক্তব্য দেবার ভার ছিল আমার উপর। আমি এখানে আমার ব্লগ ডে উপলক্ষ্যে স্বাগত বক্তব্যটি তুলে দিচ্ছি!
সুধী,
আমরা যারা লিখতে পছন্দ করি, পড়তে পছন্দ করি তাদের জন্যে ব্লগ অনেক বড় একটি মাধ্যম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও “ব্লগ” ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বাংলা ব্লগীয় কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নেবার জন্যেই ব্লগ দিবসের উৎপত্তি। এই একটি দিনে ব্লগাররা নিজেদের মধ্যে পরিচিত হয়ে শপথ নিবেন আরও শাণিত হবার প্রত্যয়ে, এই কামনা।
বিশেষ করে আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের জন্যে ব্লগ-ফেসবুক সত্যিই দেশের সাথে নিজেদের যোগাযোগে রাখার একটা বড় মাধ্যম। তাই এবার ৪র্থ ব্লগ দিবস আয়োজনে দেশের সব বিভাগীয় শহরের মতো প্রবাসে এই সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে আমরা ব্লগাররা এক হয়েছি ব্লগ দিবসের উদ্দেশ্যে। আজকের আয়োজনে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
অতি দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত আমাদের দেশকে, পৃথিবীকে প্রতিনিয়তই কলুষিত করে তুলছে। একদিকে দুর্নীতির করাল গ্রাসে জর্জরিত জাতির বিবেক, সন্ত্রাস-হানাহানির ছোবলে আতংকিত মানুষের জীবন, আর দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো ভুলণ্ঠিত। কিছুদিন আগেই আমরা মানবতার নিষ্ঠুর বিপর্যয় দেখেছি বিশ্বজিতের মৃত্যুতে, আবার কানেকটিকাতে দেখেছি ২২ স্কুল ছাত্রকে হত্যার ঘটনা। দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকি না কেন, এ ঘটনাগুলো আমাদের আলোড়িত করে! ভাবতে শেখায়। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা শান্তিপ্রিয় এবং সচেতন। আমরা চাই, আমাদের ভাবনাগুলো, কথাগুলো পৌঁছে যাবে সবার কাছে।
সমাজে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে তা নিয়ে আমাদের মতামত, নিজস্ব সৃজনশীলতা সবই বাক স্বাধীনতার অন্তর্গত। আজকের দিনে গণতন্ত্রের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে দায়িত্বশীলভাবে বাক স্বাধীনতার কোন বিকল্প নেই। এজন্যেই আমাদের এবারের ব্লগ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, “বাক স্বাধীনতা এবং বাক দায়িত্বশীলতা”। দায়িত্বশীলভাবে আমাদের কথাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার শপথ করাই আজকের ব্লগ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
শুধুমাত্র সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে নাগরিক সাংবাদিকতাই নয়, নিজস্ব সৃজনশীল কর্মকান্ডে সাহিত্য প্রকাশে ব্লগ একটি বড় প্লাটফর্ম। আগে যে ব্যাপারটি ছিল যে, সাহিত্য শুধু মুদ্রণ প্রকাশনার হাতে বন্দী, আজ আর সে ব্যাপারটা নেই। যে কেউ বাংলা ব্লগের মাধ্যমে নিজের গল্প-কবিতা-রম্যরচনা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজের প্রকাশ ঘটিয়ে নিজেকে সবার থেকে আলাদা প্রমাণ করতে পারেন। ব্লগের মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করে, জনপ্রিয় হয়েছেন, মূলধারার সাহিত্যে বইমেলায় বই প্রকাশ করেছেন, এমন অনেক লেখক ইতোমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছেন।
একটু আগে আমি হতাশার কথা বলেছি। এখন আশার কথা বলি। “বাংলা ব্লগ”-এর মাধ্যমে আমরা সত্যিই অনেক যুগান্তকারী ব্যাপার জানতে পেরেছি। আরিফ জেবতিকের “ভ্যালেরি টেইলর উপাখ্যান” কিংবা গত নির্বাচনের সময় ফেসবুক-ব্লগে যুদ্ধাপরাধী বিরোধী প্রচারণা, অথবা মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভিত্তিক ব্লগের উত্থানসহ নানা ধরনের ব্যাপার ঘটেছে ব্লগের মাধ্যমে! এমনকি এবারের ব্লগ দিবসেও আমরা সব জায়গায় প্রতিহত করেছি যুদ্ধাপরাধী ও তার দোসরদের! ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠানে তারা ছিল নিষিদ্ধ! মূল ধারার মিডিয়াতে যেই খবর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আসতে পারে না, সেই খবরগুলো ব্লগ প্রচার করতে পারে কোনপ্রকার ভয় ছাড়াই। এরকম প্রত্যেকটা ব্যাপারে ব্লগ এককথায় অনন্য।
একটি জাতির উন্নতির সৌধ নির্মাণে, গণতন্ত্র সুনিশ্চিতকরণে দায়িত্বশীল বাক স্বাধীনতার কোন বিকল্প নেই। সামাজিক সমস্যা-অসঙ্গতি বিষয়ে সচেতনতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি এমন নানা বিষয়ে ব্লগের মাধ্যমে ব্লগাররা, নিজেদের আরও শাণিত করবেন, সচেতন করবেন সবাইকে এই প্রত্যাশা! পরিশেষে আমরা প্রবাসী ব্লগাররা দেশ থেকে এতো দূরে থেকেও যে বাংলার সাথে, বাঙালিত্বের সাথে, বাংলাদেশের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছি সেজন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এবং ভবিষ্যতেও তা চালু থাকবে, এই আশা করি ইনশাআল্লাহ। বাংলা ব্লগ দিবস সফল হোক! বাংলা ভাষাভাষী আওয়াজ তুলুক সমগ্র বিশ্বে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৩