মাস তিনেক আগের ঘটনা।টিউশনির সুবাদে তখন আমাকে মোহাম্মাদপুর যেতে হত। আজীমপুর থেকে মোহাম্মাদপুর এই রুটে একমাত্র বাস হল ১৩নং বাস। বড়ই বিচিত্র এবং বড়ই জঘন্য একটি বাস। একমাত্র বাস সার্ভিস হবার কারনে মোটামুটি সব ক্লাসের লোকজনই এই বাসে চরে। সেজন্য মাঝে মাঝেই বিচিত্র সব সমস্যার উৎপত্তি হয় এই বাসে। আমি প্রাণ ভরে সেগুলোর মজা উপভোগ করতাম।
এইরকম কোন একদিনের গল্প বলি।
বাসে একদম পেছনের সিটে বসে আছি। নীলখেতের জট্টিল এন্ড কঠিন জ্যামে আধা ঘন্টা ধরে আটকা পরে আছি। প্রচন্ড গরমে মন মেজাজ হট হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাউরে ধরে কিলাই। এদিকে বাসে লোক তুলেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে 7-zip দিয়ে কম্প্রেশন করে মানুষ তুলছে।
অবস্থা যখন এইরকম শোচনীয় ঠিক এমন একটা সময়ে আমাদের গল্পের কাকু বাসে উঠলেন। মধ্যবয়সী একজন মানুষ। মাথায় স্টেডিয়াম মার্কা টাক।চেহারার মধ্যে একটা মায়া আছে। দেখলেই মনে হয় ওনার নাইন-টেনে পড়ুয়া একটা মেয়ে আছে। যে মেয়ে পড়াশুনা ঠিকভাবে করে না। তাকে পড়ানোর জন্য একজন ভাল ম্যাথ টিচার দরকার। টিচার বুয়েটের হলে ভাল হয়, কিন্তু তাকে অবশ্যই ফিমেল হতে হবে। তিনি কোন ঝুকি নিতে চান না।কারণ তার আগের টিচার মেয়েকে পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য জ্ঞান দিতে আরম্ভ করেছিল।…………………………
কাকু বাসে উঠেই ড্রাইভার সিটের পিছনে পজিশন নিলেন। প্রচন্ড ভীড়ে আর তেমন কিছু বুঝতে পারলাম না। সিটি কলেজের সামনে এসে বাস থেমেছে। একজন জনৈকা ভদ্রমহিলা বাসে উঠলেন। বাসের দরজার সামনে এত ভীড় যে তিনি হিমসিম খাচ্ছিলেন। আমাদের কাকু অত্যন্ত সহৃদয়বান। তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দরজার সামনের মানুষজনকে সরিয়ে ভদ্রমহিলার জন্য জায়গা করে দিলেন।উনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।আজকাল এমন মানুষ আর দেখা যায় না।আমাদের কাকু ভদ্রমহিলার সাথে গল্প করা শুরু করে দিলেন।
কিছুক্ষন পর ভদ্রমহিলা নেমে গেলেন। আমাদের কাকু একটু একা হয়ে গেলেন মনে হল। বাসে এইবার তিনজন মহিলা যাত্রী উঠল।কাকু তাড়াতাড়ি করে তাদের জন্য সিট ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিলেন। কিছু পাবলিক মহিলা সিটে বসে ছিল। কাকু তাদের তুলে দিল। সিটে মহিলারা বসে পড়ল। কাকু তাদের সাথেও গল্প করা শুরু করে দিল।
তখন পর্যন্ত কাকু’কে আমার অন্য কিছু মনে হয় নি।স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলাম।
কিছুক্ষন পর আনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে গেল। অনেক সিট ফাকা হয়ে গেল। আমি পিছন থেকে কয়েক সিট সামনে এসে বসলাম। আরো কিছু মহিলা যাত্রী বাসে উঠল। কাকুর কর্মকান্ড দেখে এইবার আমার সন্দেহ ঘনীভুত হল। তার কর্মকান্ডের একটা ডেমো ভার্সন আপনাদের দেখাইঃ “আপা আসেন এখানে বসেন।““এখানে সিট খালি আছে”। “ভাই আপনি সিটটা একটু ইন্টারচেঞ্জ করেননা”
পিছনে এত সিট খালি থাকা সত্বেও কাকু সামনেই দাঁড়িয়ে রইলেন। আপাদের সাথে গল্প চালিয়ে গেলেন। আমি অবশেষে নিশ্চিত হলাম আমাদের কাকু একজন গ্রেট লুল।