হঠাৎ মনে হল, এই বৃষ্টি ভেজা রাত শেষ হয়ে গেলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।তাই বারান্দায় বসে আছি।আনমনে বসে বসে বৃষ্টির কান্না দেখছি।শেরেবাংলা হলের ফোয়ারায় পানি জমে ছোটো খাটো সুইমিং পুল
সৃষ্টি হয়েছে।সেই পানিতে লাফানোর লোভ সামলাতে পারছিলাম না।ক্রমেই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে।ক্রমেই আমার
মন চঞ্ছল হয়ে উঠছে।
এমন সময়,
মাসুদ আর ইমরান একটা চরম কুপ্রস্তাব দিয়ে বসল।পরীক্ষার সামনে, আসলেই কুপ্রস্তাব…………
প্রস্তাবনাটা ছিলো এইরকমঃ
“দোস্ত!চল ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে আসি।ভালই লাগবে, বৃষ্টির মধ্যে।
সেই সাথে, পেনাং থেকে চা খেয়ে শরীরটা গরম করা যাবে।’’
আমি মোটামুটি ঝুলে চলা পাবলিক।রাজি হয়ে গেলাম।
ছাতা হাতে বের হলাম তিনজন।দেখা যাক ফিলিংস কতদুর পাওয়া যায়।
হলের সামনে এসেই দেখলাম, ছোট-খাট পুকুর পার হয়ে আমাদের যেতে হবে।
সেটা ব্যাপার না, আসল ব্যাপার হলো পুকুরের পানির উৎস হল ড্রেনের পানি এবং হাগুর পানি।
কি আর করা, ফিরে তো যেতে পারি না।আমার হাফ-প্যান্ট আরেকটু হাফ করে নিলাম।ক্যাম্পাসের
কাছে আসতেই বৃষ্টি কেমন যেন কমে আসল।
ধুর! এইটা কোন কাজ হল? বৃষ্টি দেখতে বের হলাম, আর বৃষ্টিই যদি থেমে যায় কেমন লাগে?
যাইহোক, হাটতে লাগলাম পেনাং এর দিকে।চা খেয়ে ভাল লাগল। শুধু ভাল বললে ভুল হবে, বেশ ভাল
লাগল।বাইরে এসেই আমার মন ভাল হয়ে গেল।পূর্নউদ্দোমে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
রাস্তায় পানি জমেছে।সেই পানিতে হাঁটতে হাঁটতে আমার মন কেমন যেন উদাস হয়ে গেল।মনে পড়ল গ্রামের কথা।গ্রামের পুকুর পাড়, কাদা মাখা রাস্তা,টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ,ফুটবল খেলা,কদম ফুল, সারাদিন কাদায় মাখামাখি করে ভর-সন্ধ্যা তে মায়ের বকুনি…………।
হঠাৎ সম্বিত ফিরে পাই।আমার স্মৃতির পাতা গুলো কেমন যেন মলিন যাচ্ছে। খেয়াল করলাম আমার চোখে পানি। বৃষ্টির আঝর ধারা আমার চোখের নোনা জল গুলো ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ঠিক যেন, ব্যস্ত এই নাগরিক জীবন আমার ভেতরের আবেগ কেও একটু একটু করে ধুয়ে নিচ্ছে।কেমন যেন এক চিলতে কষ্ট অনুভব করলাম বুকের ভেতরে।এই কষ্ট যখন দীর্ঘশবাস হয়ে বের হয়, তখন তা দেখার কেও থাকে না।এই শহর বড়ই আবেগশুন্য।
আমারা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারলাম না।এত রাতে নিরাপত্তা জনিত কারনে ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা হয়।তিনজন দাড়ালাম বুয়েট স্মৃতিসৌধের সামনে।বৃষ্টি ভেজা আড্ডা জমে উঠল।
ইমরান বলল, দোস্ত!এই দিনগুলর কথা কি কখনও মনে পড়বে না?
আমি বললাম, আজ হতে অনেক বছর পর এমনি কোন এক বৃষ্টির রাতে মনে পড়বে। তখন হয়ত আমাদের আবেগের রঙ আজকের মত সতেজ থাকবে না।তবুও মনে পড়বে।সেদিন মলিন হয়ে যাওয়া স্মৃতি গুলো খুব হাতরে দেখতে ইচ্ছে করবে।খুব ইচ্ছে করবে।মনের অজান্তে হয়ত একফোটা আনন্দঅশ্রু চোখের কোনায় এসে জমাট বাধবে।
কেমন যেন আমার গলা ধরে এল।আচ্ছা, একদিন তো এই বুয়েট ছেড়েও চলে যেতে হবে!তখন কি খুব খারাপ লাগবে? নাকি উচ্চ বেতনের চাকুরির আনন্দ সব কিছু ভুলিয়ে দেবে?
আমি এখন যে যেই বিছানায় ঘুমাই, বহুকাল পরে আমার একবারও কি মনে হবে না, সেই বিছানায় এখন কে ঘুমায়?বারান্দায় দাড়ালে কি সেই আগের মত করেই জীমনেসিয়াম দেখা যায়? ক্যাফেটেরিয়ার সামনে নিষেধাজ্ঞা সত্তেও কি এখনও ক্রিকেট খেলা চলে?পলাশীর চা এখন কেমন চলে?মরুভুমি ক্যাম্পাস এখন কেমন দেখায়?
নাহ!আর ভাবতে পারছি না।
…………………………………………………………………………………………………………………………………
হলে ফিরে এলাম।সাথে নিয়ে এলাম একটুকরো সুখস্মৃতি।
বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম।