মাছের রোগ ও তার চিকিৎসাঃ
প্রথমেই মনে রাখতে হবে আপনি আপনার মাছের যেকোন রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে দোকানদারের কাছ থেকে কোন রকম হেল্প পাবেন না। আর পেলেও ভুল তথ্য পাবেন। যদি আপনার সাথে সেই দোকানদারের খুবই হৃদ্যতা থাকে তবে সেটা ভিন্ন কারণ। আপনাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্লাষ্টিকের বোতলে থাকা তিনটি ঔষধ দিবে। যেগুলো কোন রোগের ঔষধ নয়। ওগুলো একুরিয়াম মেইন্টেন করার জন্য কিছুদিন পর পর প্রয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ একুরিয়ামের পরিবেশ ভালো রাখার জন্য দিতে হয়। কিন্তু রোগ ও তার চিকিৎসা কিন্তু ভিন্ন জিনিস।
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় যে কয়েকটি রোগ হতে পারে মাছে শুধু সেগুলোই আলোচনা করবোঃ
লেজ পচা:
মানুষের ক্ষেত্রে "জন্ডিস ইন নাথিং বাট এ সিম্পটম অব এ ডিজিজ"। মানে জন্ডিস কোন অসুখ না কিন্তু একটা অসুখে পূর্বাভাস বটে। ঠিক তেমনি, লেজ পচা কোন নির্দিষ্ট অসুখ না তবে কোন শক্ত অসুখের পূর্ব লক্ষণ। তবে এই রোগের চিকিৎসা আছে। এই রোগে মাছের লেজে বা পাখনায় একটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটি একটি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন। তবে এটা কখনও কখনও ফাংগাল ইনফেকশনের জন্যও হতে পারে। তবে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হলে সেটার প্রকোপ অনেক বেশী হয়। এর ফলে লেজ আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। শেষে এমন আকার ধারন করে যেটা দেখতে অনেকটা তুলার শেষ অংশের মত মনে হয়। এই রোগ ধীরে ধীরে দেহেও আক্রমন করে। তবে এটা যদি লেজের গোড়াকে আক্রমন করার আগেই কিউর করে ফেলা হয় তবে ক্ষতিগ্রস্থ লেজের টিস্যু গুলোর কাছ থেকে আবার টিস্যু গজানো শুরু করে কোন কোন ক্ষেত্রে।
চিকিৎসাঃ
যদি দেখা যায় একুরিয়ামের কোন মাছ এই রোগে অল্প একটু কেবল আক্রান্ত হলো তখন সেটাকে তুলে অন্য জারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়াই ভালো। আর যদি এমন হয় যে বেশীভাগ মাছই একই অবস্থা। তবে সাথে সাথে পানি চেইঞ্জ করে সেগুলো চিকিৎসা দিতে হবে। তবে নিয়মিত একুরিয়াম সল্ট দেয়া হেরফের হলে এমন রোগ হতে পারে বা অন্যকোন কারনেও হতে পারে।
এমন দেখলে এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে টেট্রাসাইক্লিন। তবে যদিও টেট্রাসাইক্লিনটা একটু কড়া মাত্রার ঔষধ তাই কম ইনজুরি হলে ডক্সি-সাইক্লিন ও ক্ষেত্র বিশেষে অক্সি-সাইক্লিন গ্রুপের যেকোন ঔষধ দিলেও চলে। একটি ক্যাপসুল খুলে তার পাওডারটি পানিতে ফেলে দিতে হবে। এভাবে প্রায় ছয়/সাত দিন রেখে আবার পানি চেইঞ্জ করতে হবে।
এই ঔষধ ব্যাবহারের ফলে পানি হলুদ বা হালকা লাল হতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নাই। আর পানির উপরে একটা ফেনা জমবে যেটা মাঝে মাঝে একটা চামচ দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়া ভালো।
হোয়াইট স্পট বা আইচঃ
কখনও কখনও মাছের গায়ে একরকম সাদা দাগ দেখা যায় সেটাকে আইচ বলে। মূলতঃ এটা একটা প্যারাসাইট (পরজীবি)। এটি একটি মারাত্বক রোগ। আক্রান্ত মাছের সারা গায়ে খুব তাড়াতাড়ি এটা বিস্তার করে। এবং গায়ে লেগে থাকে। ধীরে ধীরে মাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এই রোগে মাছের মৃত্যু হতে পারে। এই পরজীবিগুলোর জীবনচক্র প্রায় দশদিনের মত।
চিকিৎসাঃ
ফরমালিন, ক্লোরাইড লবন এবং মেলাসাইট গ্রিন এই রোগের উপশমের জন্য ব্যাবহার করতে হয়। আক্রান্ত মাছকে তুলে ক্লোরাইড সল্ট ও ফরমালিন মেশানো পানিতে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখতে হয়। দিনে দুইএকবার করলে এর ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসা সাধারনত তিনদিন করলেই এর ফলাফল পাওয়া যায়। তবে একেবারে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াই ভালো।
চলবে.............
১ম পর্ব
Click This Link
২য় পর্ব
Click This Link
৩য় পর্ব
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:৫৩