আজকে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী করছেন তারা আইন সম্পর্কে কতটুকু ধারনা রাখেন আমি সন্দিহান। এই বিষয় টি তো অনেক আগেই মীমাংসিত এবং এর বিচার ও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে শাস্তি ও পেয়েছে । এখন আবার এই বিচার চাওয়া কেন ? এক অপরাধের কি দুইবার বিচার করা যায় ? এইটাকি কোন সভ্য সমাজে শুনেছেন ? নাকি এইখানে বাংগালকে হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে এবং দেশে একটি গন্ডগোল লাগিয়ে দিয়ে অকার্যকর রাস্ট্রে পরিনর করার ষড়যন্ত্র চলছে এইটা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
প্রথমত, আমাদের বুঝতে হবে যুদ্ধাপরাধী ও এর সহযোগী দুইটি ভিন্ন জিনিস এবং ৭১ এর পরের সরকার এই দুই বিষয়ের ই মীমাংসা করে গেছেন।
প্রথমে দেখি যুদ্ধাপরাধী কারা, ৭১ এর পরে মুজিব সরকার ১৯৫ জন পাকিস্থানি সেনা কে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং বিচার করার সর্বত চেষ্টা করেন। কিন্তু নানান কারনে মুজিব সরকার এই বিচার করতে সক্ষম হন নি। বরং সিমলা চুক্তি ও ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে এই ১৯৫ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখনি যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি মীমাংসিত হয়ে গেছে। এখন যদি আপনি আবার বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, তাহলে ভারত আর পাকিস্থানকে রাজি করতে হবে সিমলা চুক্তি বাতিল করতে। এইটা কখনো সম্ভব নয় কেননা এই চুক্তির অনেক বিষয় অলরেডি ইমপ্লিমেন্ট হয়ে গেছে। এই জন্য দরকার একটা টাইম মেশিন যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান , তাদের গবেষনা করা উচিত একটা টাইম মেশিন আবিস্কারের জন্য। আরো সমস্যা আছে, ইন্টারন্যাশনাল ল অনুযায়ি বাংলাদেশ ৭১ এর যুদ্ধে কোন পক্ষই নয় তাই বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কোন আইনেই যুদ্ধাপরাধির বিচার করতে পারেনা। কেননা ইন্টারন্যাশনাল ল অনুযায়ী ৭১ এ যুদ্ধ হয়েছিল ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে এবং সেজন্যই পাকিস্থান ভারতের কাছে সারেন্ডার করে। বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইবুনাল গঠনের কোন লিগালিটি নেই।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা অর্থাত আওয়ামীলীগ সরকার এই যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছে , তারাই আজ আবার যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়ে দেশ অশান্ত করে তুলছে। এর চেয়ে বড় ভন্ডামি আর কি আছে? সুতরাং যুদ্ধাপরাধির বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।
এইবার আসুন দেখি যুদ্ধাপরাধের সহযোগী অর্থাত ৭১ এ রাজাকারদের কোন বিচার হয়েছে কিনা ? হ্যা এই বিচারটি ও করেছেন মুজিব সরকার। তারা দালাল আইন নামে একটি আইন করেন এবং এই আইনের অধীনে রাজাকারদের বিচার সম্পন্ন করেন। এই বিচারে অনেকের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়। পরবর্তিতে শেখ মুজিব সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেন এবং ৪ টি অপরাধ বাদে অন্যদের মুক্ত করেদেন। আরো পরে জিয়া দালাল আইন বাতিল করেন এবং সবাইকে মুক্ত করে দেন। এখন আপনি একজন কে বিচার করবেন, শাস্তি দিবেন তারপর ক্ষমা করে দিবেন, তারপর আবার বলবেন যে আমি তোমার আবার বিচার করবো, এইটা কি কোন মানসিক ভাবে সুস্থ মানুষ বলতে পারে ?
এখন আবার এই মিমাংসিত ইস্যুগুলি নিয়ে হই চই করা কেন ? এই ব্যাপার গুলি আমাদের চিন্তা করতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে এইটা আমাদের বুঝতে হবে। আজকে সাধীনতার ৪০ বছর পরেও কেন নতুন প্রজম্মের মাঝে ঘৃনা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ? দুনিয়ার কোন দেশে কি এইটা হয় ? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সারকোজি নির্বাচিত হয়ে সবার আগে গেছেন জার্মানি। আজকে ইংল্যান্ডের শিশু বা নুতন প্রজম্মকে কি জার্মানকে ঘৃ্না করার ইতিহাস শিখানো হয়? আজকে আমরা এই ঘৃ্না ছড়াচ্ছি বলেই ২৮ এ অক্টোবরের মত ঘটনা ঘটছে যেখানে নতুন প্রজম্মেরি একজন আরেকজনকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের উপর নৃ্ত্য করছে ? আর এই দৃশ্য যখন সারা দুনিয়ার মানুষ দেখছে তখন বাংলাদেশকে তারা অসভ্য ও বর্বর দেশ হিসাবেই চিনছে।
সাধীনতাকে পজীটভ চোখে দেখতে হবে , মনে রাখতে হবে, এইটা ছিল মুক্তির জন্য যুদ্ধ। আর বাংলাদেশ কি মুক্তিপেয়েছে ? বাংলাদেশ তো দুনিয়ার সবচেয়ে গরীব দেশ। যেশিশুটি ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে তার কাছে এই সাধীনতার কোন মুল্য নেই। তাই আগে আমাদের ইকোনোমিকালি ডেভেলাপ করতে হবে। তবেই রিয়েল সাধীনতা পাব।
৭১ এর অপরাধগুলোর বিচার তো অলরেডি হয়ে গেছে, এখন আর অইগুলি নিয়ে হা পিত্তেশ না করে আসুন দেশ গড়ার কথা বলি, আসুন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করি।