somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে যাবার পংক্তিমালা

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক বছর পর মনের গভীর থেকে আজ বিনিদ্র একটা রাত কাটালাম। একাকীত্বের জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে ছিলাম রাতের শুরু থেকে কাঁক ডাকা ভোর অবধি। ক্ষনে ক্ষনে গাঢ় নীল আকাশের পানে তাকিয়ে ধ্রুব তারাকে বলেছি, তোমার আকাশের নীল বুক ছিঁড়ে অবিরত ছুটে চলেছে যান্ত্রিক একটি উড়োজাহাজ। আর আমার বুকে ক্রমশঃ জমাট বাঁধছে বিরহী কাতর নীলাভ সময়। অথচ ঠিক সন্ধ্যা নামার আগেই সময়গুলো ছিল বড় সুখের। ক্ষানিক সময়ের জন্য তোমার কণ্ঠের মাধুর্য আর মাদকতা মিশানো কথাগুলো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে স্মৃতির দুই যুগ পিছনে।

অথচ মনে হয় এই তো সেদিন···· দুষ্টুমির ছলে তোমার সাথে শুরু করলাম প্রেমের লুকোচুরি খেলা। তুমি তোমার কাজল টানা চোখে নেশার দ্যুতি ছড়িয়ে আমাকে মাতাল বানালে। প্রতিদিন শিশির ভেজা গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে তুমি স্কুলে যেতে আর আমি কলেজের ক্লাস ফেলে তোমার মায়াবী মুখপানে চেয়ে থাকবো বলে দিব্বি কাটিয়ে দিতাম মূল্যবান সময়। বিকেল গড়ানো পর্যন্ত তোমার নামের তসবিহ জপতাম কখন তুমি আসবে স্কুল পলাতকা হয়ে আমার কাছে। তুমি সামনে দাড়িয়ে একটু হাসলেই আমার মাঝে তৈরী হতো আফিমের নেশা লাগা আশ্চর্য ঘোর···আমি তখন কত কি যে ভাবতাম।

এভাবেই একটা সময় কৈশোরের সব ভালোলাগা যৌবন দীপ্ত ভালোবাসায় পরিণত হয়। আমার সব জল্পনা কল্পনা , সব চাওয়া পাওয়া উৎসর্গ করি তোমার ভালোবাসার বাহুডোরে। আর ···ঠিক তখনই ভালোলাগা, ভালোবাসার সব রংতুলি মাখা মূহুর্ত নির্মিষে গুড়িয়ে দিয়ে তুমি চলে গেলে।

তুমি মানে সেই মানবী যার কাছে আমি আজন্ম ঋণী। তুমি মানে আমৃত্যু এক অদৃশ্য নেশা। তুমি মানে যন্ত্রনার চারপাশে ক্ষনিক সুখের অনুভুতি। তুমি মানে দূরে চলে যাবার পরও সারাক্ষন হৃদয়ে জেগে থাকা একটি নাম। যে নাম আমার সকল প্রতিষ্ঠা ও অগ্রযাত্রার প্রেরণা। আমার নিকোশ কালো জীবন সুরঙ্গের শেষ প্রান্তে সাহসী মানবীয় আলোর ঝলকানী।

এভাবেই স্মৃতির নৌকায় পাল তুলে আজ পুরোটা রাত কাটিয়েছে ভালোবাসার অদৃশ্য এক অনুভুতিতে। বার বার চেয়েছি এই মোহ যাতে না ভাঙ্গে। কিন্তু যখনই চোখের দৃশ্যপটে ভেসে উঠেছে তোমার চলে যাবার আগে সেলফোনে শেষ কটি উচ্চারিত শব্দ ‘আর কিছুক্ষন পর প্লেন উড়বে নীল আকাশে’ ঠিক তখনই আমার একাকীত্বের চারিপাশে নেমে এসেছে অমানিষার ঘোর অন্ধকার। অথচ জানি, তোমার চলে যাওয়াটাই কঠিন বাস্তবতা। আর কয়েকটি দিনের জন্য তোমার ফিরে আসাটা ছিল আমার কাছে অনাগত দিনের কর্মস্পৃহা। সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে তোমার সাথে মুখোমুখি হওয়ার মূহুর্তটি ছিল আমার জীবনের স্বপ্নীল স্বর্ণালী এক অধ্যায়।

কতকাল পর বেলকনিতে দাড়িয়ে আমাকে অভিবাদন জানালে। কতকাল···এক···দুই···তিন করে দেড় যুগ অথবা তার চেয়ে বেশী। মনে পড়ে গেলো সেদিনের সোনাঝরা সেই দিনের কথা। প্রতিদিন তোমার অভিবাদনের অপেক্ষার প্রতি উত্তরে বলতাম ভালোবাসি তোমায়। আজ এত বছর পর তোমাকে ভীষন ভাবে ছোঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু সাহস হয়নি কারন ছোঁয়ে দিলে যদি হারিয়ে যাও। মনে পড়ে গেলো কবিতা কটি লাইন-

বলো কোথায় পালাবো আমি
যেখানে রাতেও এক নারীর নিঃশ্বাস এসে লাগে চোখে মুখে
ক্লান্ত শিশুর শরীর লেগে থাকে দেহে
বলো কোথায় পালাবো আমি, তাই
জীবনের দরজা ধরে সারাক্ষন দাড়িয়ে থাকি।

কথায় আছে সুখের রাত ফুরিয়ে যায় চোখের পলকে। আর বিরহের রাত পোহায় না কখনো। তবে সুখ কিংবা বিরহ যাই বলনা কেন একটা সময় সব কিছু ফুরিয়ে যায় শুধু ফুরায় না দুজনার ভালোবাসা। একটা প্রগাঢ় ভালোবাসা আর অনাগত আশা নিয়ে আমাকে সেদিন বিদায় নিতে হয়েছিল তোমার কাছ থেকে। বিদায় বেলা তোমার অপলক চোখের দিকে তাকাতে সাহস হয়নি। যেমন তোমার প্রথম চলে যাবার সময় সাহস করে বলতে পারিনি কাছে থাকো। আজ এত বছর পর কি ভাবে বলবো কাছে থাকো। তারপরও সেদিনের চলে যাওয়াটাই আজ মনে হচ্ছে আজন্ম কাছে থাকা। যে কাছে থাকায় নেই কোন বাঁধা। শুধু সৃষ্ঠি কর্তার কাছে প্রার্থনা -

তবুও মনে রেখো, যেখানে যাও যত দূরে
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে নব প্রেম জালে।
যদি থাকো কাছাকাছি , দেখিতে না পাও ছায়ার মতো
তবুও মনে রেখো, যেখানে যাও যত দূরে।

জীবনের অনেক রাত পাড় করেছি অনিশ্চয়তায়। দিনের ক্লান্তি ভূলে ছুটে গেছি রাতের কাছে বিনিময়ে রাতগুলো আমাকে উপহার দিয়েছে কষ্টের নিঃশ্বাস । আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই থেকে গেলাম কিন্তু আজকের রাতটা উপভোগ করতে চেয়েছি অদেখা তোমাকে নিয়ে। পুরো বিনিদ্র রাত উৎসর্গ করেছি তোমার নামে। তুমি মানে আমার ভালো থাকার সকল প্রচেষ্টা, আমার সকল শুভ কাজের অগ্রদূত। তুমি মানে নিজেকে একটু ভালো রাখার একটা অবিরত চেষ্টা।

এখন রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজপথ। তীব্র শীতে ছিন্ন বস্ত্রহারা মানুষের ঘুম কাতুরে চোখে রাজ্যের হাহাকার। নিঃশব্দ আঁকা বাঁকা গলি পথ ধরে দানবের মতো শব্দ করে ছুটে চলেছে যান্ত্রিক সব বাহন। সেই যান্ত্রিকতার আরেক বাহন বিমান যাত্রী হয়ে তুমি ছুটে চলেছো নীল আকাশ ভেদ করে। হয়তো আর কিছুক্ষন পর আলো ঝলমলে টেমস্‌ পেরিয়ে হিথ্রোতে অবতরণ করবে যান্ত্রিক এই বস্তুটি। চির চেনা শহরে সংসার নামের সব আয়োজন নিয়ে নেমে পড়বে তুমি। আর পিছনে পড়ে থাকবে ভাঙ্গা কাঁেচর মতো অসংখ্য টুকরো টুকরো স্মৃতি। সেই টুকরো স্মৃতির কোন অংশে আমার অবস্থান তা তুমি ভালো জানো। আমি শুধু জানি তুমি মানে -

আমার আজন্ম আরধ্য এক পুজোনীয়া। তুমি মানে আমার ভালো থাকার অদৃশ্য প্রেরণা। তুমি মানে আমার দেখা অদেখা সব কষ্ট। তুমি মানে আমার অনাগত প্রতি মূহুর্তের সুখ। তুমি মানে আমার সকল বিশ্বাসের স্রোতধারা। সেই স্রোতধারায় ভেসে যেতে কোন বাঁধা নেই। অনেক বাঁধার পথ পেরিয়ে এত দূর যখন আসতে পেরেছো তাহলে জীবনের অনাগত বাকি দিনগুলো আমাকে কাছে রাখতে বাঁধা কোথায়। আমার বিশ্বাস সব বাঁধার প্রাচীর ভেদ করে তুমি বেঁচে থাকবে আমার হৃদয়ে আজীবন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে। যে বেঁচে থাকার মাঝে আছে ভিন্ন এক নেশা। পৃথিবীর আদি থেকে অনন্ত পর্যন্ত সেই নেশার নাম ভালোবাসা।


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৪৪
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×