হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من حديث عائشة رضى الله تعالى عنها مرفوعا انما الافطار مما دخل وليس مماخرج وعن ابن مسعود من قوله انما الوضوء مما خرج وليس مما دخال والفطر فى الصوم مما دخل وليس مما خرج واخرجه الطبرانى ولابن ابى شيبة عن ابن عباس الفطر ما دخل وليس مما خرج.
অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে মরফু হিসাবে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রোযা ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, বের হলে নয়। হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ওযুর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বরে হলে ওযু ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবেনা। আর রোযার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শররের ভিতর কিছু প্রবেশ কররে রোযা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়। আর তিবরানী ও ইবনে আবী শায়বা, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত হাদীছ শরীফের দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত হাদীছ শরীফে মূল রাস্তাকে শর্ত করা হয়নি। তবে সর্বক্ষেত্রেই ভিতরে কিছু প্রবেশ করালে রোযা ভঙ্গ হয় এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা তা নয়। যেমন সাপে কাটলে রোযা ভঙ্গ হয়না। অথচ সাপের বিষ ভিতরে প্রবেশ করে থাকে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বমী করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় অথচ ওটা বের করা হলেও রোযা ভঙ্গ হয়না। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
ثلاث لايفطرن الصائم الحجامة القئ والاحتلام.
অর্থঃ- তিনটি জিনিস রোযা ভঙ্গ করেনা- (১) শিঙ্গা লাগানো (অর্থাৎ শিঙ্গা দ্বারা শরীর হতে যদি ইচ্ছাকৃতভাবেও রক্ত বের করে তবেও রোযা ভঙ্গ হবেনা একন তা যেভাবেই বের করা হোক না কেন)। (২) অনিচ্ছাকৃত বমী, (৩) স্বপ্নদোষ।
অনেকে সাপে কাটার সাথে ইনজেকশনকে তুলনা করে বলে থাকে- সাপে কাটলে যেমন বিষয় ভিথরে প্রবেশ করা সত্ত্বেও রোযা ভঙ্গ হয়না, তদ্রুপ ইনজেকশনেও রোযা ভাঙ্গবেনা। মূলতঃ ইনজেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তার সাতে সাপের বিষকে কখনো মিলানো যাবেনা, কেননা এ বিষয় প্রবেশের ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। এ ব্যাপারে আরো বলা যেতে পারে, যেমন রোযা রেখে আগরবাতী জ্বালালে, ধুমপান করলে, কোন গ্যাস নাক দিয়ে গ্রহণ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা এক্ষেত্রে সবগুলো কাজ ইচ্ছা শক্তির নিয়ন্ত্রণে। অথচ আমরা রাস্তায় চলা-ফেরা ও রান্না-বান্নার সময় যে ধোঁয়া গ্রহণ করি, তাতে রোযা ভঙ্গ হয়না। কেননা এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অতএব, ইনজেকশনের সাথে সাপের বিষের সাথে কিয়াস করা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ ইনজেকশন ইচ্ছাকৃতভাবেই দেওয়া হয়।
অনুরূপ যদি কেউ ভুলে পেট ভরেও খাদ্য খায়, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবেনা।
কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من نسى وهو صائم فاكل او شرب فاليتم صومه فانما اطعمه الله وسقاه.
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোযা অবস্থায় খেল অথবা পান করলো, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে নেয় কেননা আল্লাহ পাকই তাকে খাদ্য খাইয়েছেন ও পান করায়েছেন।”
আর অখাদ্য যেমন পাথর, কাঠের কুটরা ইত্যাদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলেও রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তদ্রুপ ওযূর পানি অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখের ভিতর চলে গেলেও রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ অবস্থায় রোজ ক্বাযা করতে হবে।
মূল তথা হলো- মূল রাস্তা শর্ত নয় বরং শরীরের যেকোন স্থান দিয়েই ওষুধ ইত্যাদি প্রবেশ করুক না কেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তা মগজে অথবা পেটে পৌছেছে, তবে তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে অতএব, ইনজেকশনের দ্বারা যে, ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তা যে মগজে পৌছে তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত। সুতরাং ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কারো যদি রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় ইনজেকশন নেয়ার খুব বেশী প্রয়োজন হয়ে যায়, তবে তার জন্যে রোযা না রাখার হুকুম তো শরীয়তে রয়ে গেছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেন,
من كان مريضا او على سفر فعدة من ايام اخر.
অর্থঃ- “আর যদি কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হয়, তবে অন্য সময় রোযাগুলো আদায় করবে।”
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم فى سفر فراى لاحاما ورجلا قد ظلل عليه فقال ماهذا؟ قالو صائم فقال ليس من البر الصوم فى السفر.
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একবার রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে ছিলেন, একস্থানে লোকের ভীড় দেখলেন, (সেখানে গিয়ে দেখলেন) এক ব্যক্তির উপরে ছায়া দেওয়া হচ্ছে। (এটা দেখে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কি?” লোকেরা বললো- (যাকে ছায়া দেয়া হচ্ছে) সে একজন রোযাদার, (তখন) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সফরে রোযা রাখা ছাওয়াবের কাজ নয়।”
অতএব, কেউ যদি ওজরবশতঃ রমযান মাসে কিছু রোযা রাখতে না পার, তবে সে তা অন্য সয় ক্বাযা আদায় করলেও রমযান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করবে।