لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضا
অর্থ: তোমরা একে অপরকে যেভাবে আহ্বান করে থাকো, সেভাবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহ্বান করো না। (পবিত্র সূরা নূর: আয়াত শরীফ ৬৩)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফ এর মধ্যে উল্লেখ করা হয় যে-
ان تقولوا يا محمد صلى الله عليه وسلم بل قولوا يا نبى الله يا رسول الله فى لين وتواضع وخفض صوت.
অর্থ: নিশ্চয়ই আপনারা ‘ইয়া মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে থাকেন। বরং আপনারা নরম সূরে বিনয়ের সাথে নিম্ন স্বরে ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রসূলাল্লাহ' বলুন।
অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম মুবারক ধরে সাধারণ মানুষের ন্যায় উনাকে সম্বোধন করা যাবেনা। বরং অত্যন্ত আদবের সাথে উনার লক্বব মুবারক নিয়ে সম্বোধন করতে হবে
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনিও হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক নিয়ে সরাসরি সম্বোধন করেননি। বরং বিশেষ বিশেষ লক্বব মুবারক ব্যবহার করেছেন। যেমন-
يا ايها المزمل ، يا ايها الرسول، طه ، يس ، يا ايها المدثر
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসংখ্য লক্বব মুবারক রয়েছে। তবে যেসব শব্দ উনার শানের খিলাফ বা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয়, এরূপ শব্দাবলি উনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
তাছাড়া যে শব্দ ভালো-মন্দ দু অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে সে সব শব্দও উনার শান মুবারক-এ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يا ايها الذين امنوا لا تقولوا راعنا وقولوا انظرنا واسمعوا
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! আপনারা "راعنا" শব্দ বলবেন না। বরং (راعنا শব্দের স্থলে) "انظرنا" শব্দ ব্যবহার করুন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নছীহত মুবারক মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন। (পবিত্র সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১০৪)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, ‘রয়িনা’ শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাহ্যত শব্দটির অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন বা আমাদের কথা শুনুন। কিন্তু এ শব্দ নির্বোধ ও মুর্খ মেষ সাবক অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আবার তা হে আমাদের রাখাল, অর্থও প্রদান করে। তাছাড়া হিব্রু ভাষায় তার প্রতিশব্দ হলো, ‘শুনো তুমি বধির হয়ে যাও’। কাফিররা নিজেদের দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করতো। এ সমস্ত কারনে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يا ايها الذين امنوا لا تحلوا شعائر الله
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দশনসমূহ উনাদের অসম্মান করো না। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ শিয়ার।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করলে অথবা লিখলে অথবা শ্রবণ করলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করা অত্যাবশ্যকীয়। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رغم انف رجل ذكرت عنده فلم يصلى على
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যার নিকট আমার নাম মুবারক উচ্চারণ করা হলো, অথচ সে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বলা, লিখা, শুনা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুরূদ শরীফ পুরোপুরিভাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
হানাফী মাযহা এর ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিলেন যে, চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামায উনার দ্বিতীয় রাকাআতে তাশাহুদ পাঠ করার পর আর কিছু পাঠ করা যাবে না। তাশাহুদ পাঠ করার পর কেউ যদি দুরূদ শরীফ পাঠ করতে শুরু করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পাঠ করে, তাকে সাহু সিজদা করতে হবে, আর যদি নাম মুবারক পাঠ না করে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে না। এই ফতওয়া যেদিন তিনি দিলেন, সেই রাতে তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বললেন, আমার নাম মুবারক উচ্চারণ করলে সাহু সিজদা দিতে হবে, এটা কেমন কথা? তখন ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি চাইনা কেউ আপনার নাম মুবারক গাফলতির সাথে স্মরণ করুক। উনার জাওয়াব শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যধিক খুশি হলেন।