জি আপনি ঠিক দেখেছেন, ভুল দেখেন নি। তবে বিস্তারিত খবরে যাওয়ার আগে দু একটি ছোটখাটো বিষয় বলে রাখা উচিৎ। যারা অ্যাক্যাডেমিশিয়ান তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখেন, যারা একাডেমিশিয়ান না, তাদের এই বিষয়ে বেশি ধারণা নাও থাকতে পারে।
আপনি যখন বাজার থেকে কোন একটা প্রডাক্ট কিনতে চান, তখন চেষ্টা করেন আপনার বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে ভালো জিনিসটিই কেনার জন্য। ভালো জিনিস কোনটা কি করে বুঝবেন ? একটু কম সচেতন ক্রেতা হয়তো মোড়কের দিকে তাকিয়েই পণ্যটা কিনে ফেলবেন। একটু বেশি সচেতন ক্রেতা সম্ভবত প্রোডাক্টের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তার পর সেটা কিনবেন। মান যাচাই করার উপায় কি? ক্রেতা তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে পারেন বা তৃতীয় কোন পক্ষও এই বিষয়ে মত দিতে পারে- যারা ঐ প্রোডাক্টটা বা কাছাকাছি প্রোডাক্ট এর আগে ব্যবহার করেছে। জরিপ দ্বারাও এটা করা যায়। যেমন আপনি কনডেন্সড মিল্ক কিনতে চান, পত্রিকায় দেখলেন -এক জরিপে দেখা গিয়েছে মুরগি মার্কা কনডেন্স মিল্ক দেশের সর্বোচ্চ সবচেয়ে জনপ্রিয় কনডেন্স মিল্ক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওই জরিপটি চালানো হয়েছে মুরগি মার্কা কনডেন্সড মিল্ক কোম্পানির দ্বারা, কাজেই এই জরিপ গ্রহণযোগ্য না।প্রোডাক্ট উৎপাদনকারি বা সরবরাহকারি বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেই পারে, সবদেশেই এই চল আছে। বিজ্ঞাপনে যে সবসময়ে পন্য সম্পর্কে সত্য কথা বলা হয় না , এটাই স্বাভাবিক।
এখন ধরে নিন শিক্ষাও একটা প্রোডাক্ট । কাজেই এই প্রোডাক্টটা যখন আপনি পয়সা দিয়ে কিনে ব্যবহার করবেন -অর্থাৎ একটা কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিতে যাবেন, আপনি জানতে চাইবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কতখানি ভালো। কোথা থেকে জানবেন ? খুব ভালো হয় যদি কোন ইন্ডিপেন্ডেন্ট সংস্থা থেকে থাকে যারা জরিপ বা গবেষণা থেকে আপনাকে বলে দিবে বিশ্ববিদ্যালয়টি কতটা ভালো। অনেক সময় ইউনিভার্সিটিগুলো পয়সা দিয়ে জরিপ চালিয়ে দেখায় তারা বেশি ভালো ইউনিভার্সিটি। মুরগি মার্কা কনডেন্সড মিল্কের জরিপের মতো এ সমস্ত জরিপ ও গ্রহণযোগ্য না। কাজেই আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে এমন নিরপেক্ষ সংস্থা যারা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মানের জরিপ/গবেষণা থেকে ইউনিভার্সিটিগুলোর মান তুলনা করে র্যাঙ্কিং করে। । র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে র্যাংকিংকারী সংস্থা গুলো সাধারনত ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, রিসার্চ আউটপুট, কারেন্ট স্টুডেন্টদের ফিডব্যাক, পাশ করে যাওয়া স্টুডেন্টদের স্যাটিসফেকশন, এমপ্লয়ার স্যাটিসফেকশন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে থাকে (২০২০ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে এক কাপ চা, একটা করে সিঙ্গাড়া, সমুচা ও আলুর চপ বা সমমানের খাবারের দামও বিবেচনা করা হবে বলে জানা গেছে)।
এরকম র্যাংকিংকারী সংস্থা পাওয়া সম্ভব না যাদের র্যাংকিং সিস্টেমের বিষয়ে সবাই একমত বা তাদের সিস্টেমটি কোন সমালোচনার উর্ধে। প্রায় সব র্যাংকিং সিস্টেমে এই ছোটখাটো কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তবে পৃথিবী জুড়ে অ্যাক্যাডেমিশিয়ান দের কাছে তিনটি রাঙ্কিং পদ্ধতি তুলনামূলক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হয়। এগুলো হলো এ আর ডব্লিউ ইউ বা একাডেমিক রাঙ্কিং অফ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি এডুকেশন, কোয়েকোরেলি সিমন্ডস বা কিউ এস (QS) র্যাংকিং সিস্টেম এবং টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিং সিস্টেম। তিনটি সংস্থাই পৃথিবীর সেরা ৮০০-১০০০টি ইউনিভার্সিটির র্যাংকিংএর তালিকা প্রতিবছর প্রকাশ করে থাকে। দুঃখজনক হলো এই যে টাইমস বা এ আর ডাবলু ইউ এর র্যাংকিঙের ১০০০ সেরা ইউনিভার্সিটির মধ্যে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর আগে কখনো স্থান পায়নি কখনো। তবে কিউ এস র্যাংকিঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট ৮০০-১০০০ এর মধ্যে অবস্থান করে।
এদিকে তিনটি সংস্থার র্যাংকিঙেই কিন্তু ভারত এবং পাকিস্তানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দিন থেকেই স্থান পেয়ে এসেছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যখন দেশ দুর্বার গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছিল, তখন বিএনপি-জামাত গংদের চক্রান্তে নির্মমভাবে শহীদ হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয় অনেক বছর । শিক্ষাখাতের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। এই অবস্থা চলে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সহযোগী শক্তি ১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটালেও ১৯৯১-১৯৯৬ সালে তা আবার ধ্বংস করে দেওয়া হয়।১৯৯৬ থেকে ২০০১ এর অর্জন পুনরায় ধ্বংস করে দেয়া হয় ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়ে। ২০০৮ সাল কে মোটামুটি ভাবে বলতে পারি আমরা দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূত্রপাত হিসেবে। বিভিন্ন খাতে নেওয়া হয় বিপুল সংস্কার । দেশ সামনের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। শিক্ষা খাত ও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে ছাত্রদের লেখাপড়ায় নতুন গতি নিয়ে আসা হয়। চালু করা হয় সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি। ডিজিটালাইজেশনের যুগে ছাত্র দের কাছে ডিজিটাল কনটেন্ট পাঠানোর জন্য বেছে নেওয়া হয় ফেসবুক-ইমো - ভাইবার ইত্যাদি। স্কুল-কলেজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুণগত পরিবর্তন আনা হয়। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে প্রকৃত ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।
এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের নমুনা । সূত্র-
প্রথম আলো
শিক্ষার মান উন্নয়নে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সিলেবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরী প্রয়োজন দক্ষ ফ্যাকাল্টি। এরই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি নিয়োগের ক্ষেত্রে এত কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে এম আই টি এবং হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে তাদের ফ্যাকাল্টির নিয়োগের দায়িত্বটি নোয়াখালী বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপরে ছেড়ে দেবেন। আগামী ১০ বছরে দেশ আমেরিকার মতো উন্নত হয়ে যাবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই QS, THE, এবং ARWU র্যাংকিঙে আমরা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে প্রথম ১০০ টি স্থান দখল করে নেব। গিয়াস উদ্দিন লিটন ভাই সম্প্রতি দেশের বাহিরে থাকা কৃতি বাঙ্গালীদের যে তালিকা তৈরি করেছেন, নিশ্চিত ভাবে তারা সবাই দেশে চলে আসবেন। আমাদের প্রাণপ্রিয় কলাবাগান ভাই এবং হাসান কালবৈশাখি ভাইও চলে আসবেন বলে আশা করি। আমেরিকা খালি হয়ে গেলে, এবং যোগ্য লোকেরা দেশে চলে আসলে আমাদের মতো অশিক্ষিত মূর্খ লোকদের হয়তো পেটের দায়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে হবে। এবার দেখে নেয়া যাক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য নেয়া লিখিত পরীক্ষায় কি প্রশ্ন ছিলঃ
(এর চেয়ে বেশি পরিস্কার ছবি যোগাড় করা সম্ভব হয় নি, দুঃখিত, যাদের আমার মতো পড়ার অসুবিধা তাদের জন্য নীচে টেক্সট আকারে প্রশ্নটি দিয়ে দিলামঃ )
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নোয়াখালী ৩৮১৪
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
প্রভাষক /সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা ২০১৮
সময় ৩০ মিনিট পূর্ণমান ২৫।
১) ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করুন। -মোট নম্বর ৮
২) দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকারের পরিবেশ উন্নয়ন ও রক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ সম্পর্কে আলোকপাত করুন। -মোট নম্বর ৯
৩) Write a paragraph in English on "The Declaration of Independence of Bangladesh". -মোট নম্বর ৮
p.s.
হাবিব সার, শায়মা আপা এবং অন্যান্য যারা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন, আপনাদের অনুরোধ, নিজেদের আপডেট করুন। বাচ্চাদের এমন জিনিস শেখাবেন যা তাদের চাকরি পেতে সাহায্য করবে, আগেকার দিনে যে সব উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করা হতো সে রকম জিনিস শেখাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৩