জনৈক কবি গেলেন কোন এক প্রকাশনা অফিসে। আশা, নিজের কবিতার বই প্রকাশ, সাথে যদি দুই একটা পুরস্কার জুটে যায় সেটা উপরি। প্রকাশক সাহেবের অফিসে ঢুকেই উনার ভিরমি খাওয়ার দশা। প্রকাশক সাহেব সদ্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কোন এক কবিতার বইয়ের ব্যবহারিক প্রয়োগে ব্যস্ত ছিলেন। যাই হোক মিনিট দশেক পর আমাদের কবি মহাশয় এবং প্রকাশক সাহেবকে মুখোমুখি দেখা গেল। তখনো হাঁপাতে থাকা প্রকাশক মহাশয় এবার কবির দিকে নজর দিলেন, নাম কি আপনার?
কবিঃ চলমান জহিদ
প্রকাশকঃ জাহিদ?
কবিঃ জ্বী না, জহিদ, আ-কার নাই।
প্রকাশকঃ আ-কার কই গেল? আর নামের আগে চলমানই বা কেন?
কবিঃ এটা বলতে পারেন প্রচলিত নিয়ম, ধ্যান ধারনার বিরুদ্ধে আমার এক ধরনের বিদ্রোহ। এখানে সবাই তো আ-কার ব্যবহার করবে। আকার উঠিয়ে দিয়ে আমি এই প্রচলিত নিয়মের বুকে কুঠারাঘাত করলাম। আর এই বিদ্রোহ যে 'চলছে, চলবে', এটা বুঝাতে চলমান শব্দের ব্যবহার করেছি।
প্রকাশকঃ বেশ বেশ, তা পড়ে শুনান দেখি আপনার দুই একটা কবিতা।
কবি এইবার একটু গলা খাঁকারী দিয়ে শুরু করলেন, 'এই সেই চৌচির ভূমি, যেখানে উভলিঙ্গ মকবুল ভাত খেত মাটির মালশায়, কুয়াশায় ঢাকা চৈত্রের দুপুরে'
থামুন থামুন, মাঝপথে কবিকে থামিয়ে দেন প্রকাশক সাহেব, কি সব লেখেন? চৈত্রের দুপুরে কুয়াশা আসল কোত্থেকে?
কবিঃ ঐ একই কারন, প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
প্রকাশকঃ উঁহু, এটা বিদ্রোহ না হয়ে বিপ্লব হয়ে যাচ্ছে, এটা বাদ দিতে হবে। তবে 'উভলিঙ্গ' শব্দের যথার্থ প্রয়োগ হয়েছে। এখান থেকে 'উভ' বাদ দিয়ে যেটা থাকল, সেটা দিয়ে কিছু করা যায় কিনা দেখেন?
কবিঃ জ্বী, তাহলে ওটা দিয়ে আর একটা কবিতা শুনাচ্ছি, 'এই নিষ্ঠুর ঊষর ভূমিতে পুংলিঙ্গরা লালায়িত জিহ্বা-নেত্রে খাইয়া ফালাইল সব কিছু।
প্রকাশকঃ যাক, এবার কিছুটা লাইনের কবিতা মনে হচ্ছে, তবে ভাষার সংমিশ্রন বেখাপ্পা লাগছে না?
কবিঃ আজ্ঞে এটাও ঐ 'বিদ্রোহ', প্রথার গালে সপাটে চপটাঘাত।
প্রকাশকঃ পুংলিঙ্গ এর পুং বাদ দিয়ে ঐটা দিয়ে কিছু একটা করেন।
কবি এইবার ঈষৎ লজ্জিত নেত্রে তরুন বয়সে হরমোনের প্রভাবতাড়িত হয়ে লেখা বেশ পুরানো একটা পান্ডুলিপি বের করে আনলেন, তাইলে শুরু করি?, প্রকাশক সাহেবের অনুমতি চাইলেন।
আর দেরি কেন, শুরু করুন, তাগাদ দিলেন প্রকাশক সাহেব।
কবি শুরু করলেন,'-------------------------------অপ্রকাশযোগ্য--------------অ-আবৃত্তিযোগ্য------------------------।'