আমার সামনে অপারেশন টেবিলের মত একটা টেবিল। টেবিল এর উপর লোকটা শুয়ে আছে। লোকটার হাত-পা শক্তভাবে টেবিলের সাথে বাঁধা।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে সে নিজেকে মুক্ত করার জন্য। পাশেই আর একটা ছোট টেবিলের উপর সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ধারাল অস্ত্র।ওখান থেকে ধারাল আর ভারী দেখে একটা রামদা হাতে নিয়ে আমি লোকটার দিকে এগিয়ে গেলাম।নড়াচড়া বন্ধ করে আমার দিকে করুন চোখে তাকালো লোকটা।প্রথম কোপটা দিলাম ওর ডান হাঁটুর উপরে।হাঁটুর নিচ থেকে ডান পা টা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।বিকট আর্তনাদে চারিদিকে কাঁপিয়ে তুললো লোকটা। কাটা পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু করলো।লাল রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল চারিদিক।অদ্ভুত এক উন্মাদনা ভর করলো আমার উপর।এবার ওর বাম পায়ের উপর নজর দিলাম আমি।ডুকরে কেঁদে উঠলো লোকটা, দু’চোখে করুণ আকুতি নিয়ে আমার দিকে তাকালো।এবারের কোপটা আরও নিখুঁত হলো।বাম হাঁটুর ঠিক মাঝখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল বাম পাটা।লোকটার গলা চীরে বেরিয়ে এল জান্তব আওয়াজ।তীব্র উত্তেজনায় কেঁপে উঠলো আমার সমস্ত শরীর।এবার টেবিলের উপর থেকে একটা ইলেক্ট্রিক ড্রিল মেশিন হাতে নিলাম।সুইচ অন করতেই ড্রিল মেশিনের যান্ত্রিক আওয়াজে প্রকম্পিত হলো সমস্ত ঘর।লোকটাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য ওর কানের কাছে নিয়ে গিয়ে মেশিনটাকে চালু করে দিলাম।পা বিহীন লোকটার শরীর ভয়ে আরও কুঁকড়ে গেল।ঘূর্নায়মান ড্রিল মেশিনের অগ্রভাগ ওর মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলাম।ছোট ছোট হাড়ের কুচি উড়ে এসে আমার মুখের উপর পড়তে থাকল। সে এক অদ্ভুত অনুভুতি। এরপর যখন ওর মগজ ছিটকে এসে আমার মুখে পড়তে লাগলো, উত্তেজনায় আমার প্রায় পাগল হওয়ার দশা হলো।আমি ভাবলাম লোকটা বোধ হয় এবার মরে গেছে, কিন্তু দেখলাম তখনো সে জবাই করা পশুর মতো তড়পাচ্ছে। টেবিলের উপর থেকে বড় দেখে একটা ছুরি তুলে নিলাম এবার।ছুরিটা লোকটার গলার উপর বসিয়ে আস্তে আস্তে পোঁচ দিতে থাকলাম।এবার বোধহয় মরন চিত”কার দিল লোকটা। মাথাটা ধড় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা না হওয়া পর্যন্ত চেঁচিয়েই গেল লোকটা। কাটা মাথাটা নিয়ে টেবিলের উপর চিহ্নিত স্থানে রাখলাম আমি।সঙ্গে সঙ্গে আমার সম্মুখের দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে সেখানে আবির্ভূত হলেন বৃদ্ধ একজন ব্যাক্তি। স্মিত হেসে বৃদ্ধ বললেন, অভিনন্দন মিস্টার লুসিফার৪৫৫, আপনি গেমটি সফলভাবে সমাপ্ত করেছেন।আপনি যদি গেমটি আবার প্রথম থেকে শুরু করতে চান তাহলে ইয়েস বলুন, না চাইলে নো বলুন। আমি ইয়েস বললাম। বৃদ্ধ এবার আরও চওড়া হাসি দিয়ে বললেন আপনার গেমের ক্যারেক্টার বাছাই করুন। আবার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেল।আমার সামনে বিভিন্ন বয়সী কিছু নারী, পূরুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমি নাদুস-নুদুস দেখে একটা মেয়ে বাচ্চা পছন্দ করলাম। আবার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেল।আমার সামনে আগের মতই অপারেশন টেবিলের মত একটা টেবিল। টেবিলের উপর বাচ্চাটা শুয়ে আছে। আমি একটা ইলেক্ট্রিক করাত নিয়ে বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর আমার ফোর-ডি গেমিং কনসোল থেকে বের হয়ে এলাম আমি। তখনো উত্তেজনায় আমার সারা শরীর কাঁপছিল।হাঁপরের মতো উঠানামা করছিল আমার বুকটা।চরিত্রগুলোর গগনবিদারী চিৎকার আমার মস্তিষ্কের ভেতরে অনুরণিত হচ্ছিল।চরিত্রগুলো এত বাস্তব, এত জীবন্ত, যেন ওরা সত্যিকারেরই মানুষ।মনে হচ্ছিল যেন ওরা সত্যি সত্যি কষ্ট পাচ্ছিল। আমার কমিউনিকেশন প্যানেলটা চালু করে সায়ানকে একটা ভিডিও কল দিলাম আমি। এক মাস আগে ওই আমাকে দিয়েছিল ওয়েবসাইটটির ঠিকানা।কমিউনিকেশন প্যানেল এর স্ক্রীনে সায়ানের চেহারা ভেসে উঠলো।
হাই, সায়ান।
হাই, জীহান, কি খবর।
‘কিলারস রেনেসাঁ’ খেলছিলাম এতক্ষন।আজকেই প্রথম শেষ পর্যন্ত খেলতে পেরেছি গেমটা।
আচ্ছা, তুই কি কখনো গেমের চরিত্রগুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিস?,উত্তেজিতভাবে জিজ্ঞাসা করলো সায়ান।
নাতো, ব্যাপারটাতো আমার মাথাতেই আসেনি।
আমি আজকে একটে মেয়ে চরিত্রের সাথে কথা বলেছি, আমার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললো, কিন্তু ব্যাক্তিগত কোন তথ্য দিতে পারলোনা।
আচ্ছা, ওরা সত্যি সত্যি কষ্ট পায় কিনা জিজ্ঞেস করেছিস?
সেটাই তো সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, আমার মনে হয় ওরা সত্যি সত্যি কষ্ট পায়।ওদের প্রোগ্রামগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যাতে কষ্টের অনুভূতিটা ওরা পুরপুরি বুঝতে পারে।
বলিস কি? কিভাবে বুঝলি?
লিনা, মানে ঐ মেয়ে চরিত্রটার সাথে কথা বলে আমার তাই মনে হলো।
কিন্তু এত নিখুঁত ভাবে চরিত্রগুলোকে প্রোগ্রাম করা কিভাবে সম্ভব?
হতে পারে কোন প্রচন্ড প্রতিভাসম্পন্ন প্রোগ্রামারের কাজ এটি, অথবা এর পেছনে অন্য কোন রহস্য আছে।
সায়ানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিছানায় গেলাম আমি।হঠাৎ করে প্রচন্ড অপরাধবোধ গ্রাস করলো আমাকে।চরিত্রগুলোর যদি সত্যিই কষ্টের অনুভূতি উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকে? না, তা কিভাবে সম্ভব? একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম কষ্ট পাবে কিভাবে? এর উত্তর আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।
রাত বারোটার পর আমি আবার লগইন করলাম কিলারস রেনেসাঁ গেমটিতে। এবার ডরিন নামের এগার বছরের একটা মেয়েকে সিলেক্ট করলাম আমি, আমার ইচ্ছা মেয়েটার সাথে কথা বলা।
মেয়েটা টেবিলের উপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
তোমার নাম কি?
ডরিন।
তোমার আসল নাম কি?
মেয়েটা কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে রইলো, তারপর আস্তে করে বললো, ফিয়োনা।
তোমার বাবার নাম কি?
আসিফ ইকবাল।
তোমার বাড়ি কোথায়?
মেয়েটা অনেক্ষন ধরে কি যেন মনে করার চেষ্টা করলো, তারপর বল্ল, জানিনা।
তুমি এখানে এলে কি করে?
আমার খুব কষ্ট, সবাই আমাকে কষ্ট দেয়, তুমি আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও।
বল্লে নাতো তুমি এখানে এলে কি করে।
আমি জানিনা।
তোমার সম্মন্ধে তুমি আর কি জান?
আমি স্কুলে পড়ি।
কোন স্কুলে পড় তুমি?
লাইটহাউস।
তোমার স্কুলটা কোথায়।
আমি জানিনা।
তোমাকে এখান থেকে বের করতে হলে আমাকে কি করতে হবে?
আমি জানিনা, আমার খুব কষ্ট, তুমিও কি আমাকে কষ্ট দেবে?
না, আমি তোমাকে কষ্ট দেব না।
লগ-আউট করে বের হয়ে আসলাম আমি।আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।এতদিন যেগুলোকে নিতান্তই একটা প্রোগ্রাম মনে করে খেলেছি, সত্যিই কি তাদের কষ্টের অনুভূতি আছে? এই মেয়েটা তার নিজের এবং স্কুলের যে নাম বললো, তা কি সত্যি? এইসব নানা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।মেয়েটার বেদনার্ত মুখটা বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।হয়তো এই মুহূর্তে কেউ মেয়েটাকে নিয়ে কাটাকুটি খেলছে।না, এর একটা বিহিত আমাকে করতেই হবে।আমার কমিউনিকেশন প্যানেলটা আবার ওপেন করলাম।‘লাইটহাউস স্কুল” লিখে সার্চ দিলাম।সারা দুনিয়ায় যে লাইটহাউস নামে এতো স্কুল আছে জানতামনা।মেয়েটার বাবার নাম শুনে মনে হলো বাংলাদেশী হতে পারে।বাংলাদেশের মধ্যে লাইটহাউস স্কুল পেলাম বায়ান্নটা।নাহ্, এভাবে হবে না। মেয়েটার আসল নাম বলেছিল ফিয়োনা।‘ফিয়োনা মিসিং’ লিখে সার্চ দিলাম।একটা অনলাইন পত্রিকার লিংক ধরে এগিয়ে যেতেই পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত জিনিসটা।পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে পনর দিন আগে।লিখেছে, ‘ফিয়োনা নামে এগার বছর বয়সী একটা মেয়ে গত ২৫শে আগষ্ট, ২০২৬ ইং তারিখ, আনুমানিক বেলা দুইটার সময় ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরের লাইটহাউস স্কুলের সামনে থেকে হারিয়ে গেছে’। বিজ্ঞাপনের নিচে একটা কনটাক্ট নাম্বার আর একটা ঠিকানা দেয়া আছে কেউ মেয়েটির খোঁজ পেলে যোগাযোগ করার জন্য। নাম্বারটিতে একটা ভিডিও কল দিতে যাব, এই সময় ঘাড়ের পিছনে একটা ধাতব স্পর্শে স্থির হয়ে গেলাম আমি।পরমুহূর্তে ইলেক্ট্রন গান থেকে নিঃসরিত ইলেক্ট্রনের প্রবল ধাক্কায় জ্ঞান হারালাম আমি।
ওয়েলকাম মিস্টার লুসিফার৪৫৫।
বাক্যের উৎসের দিকে চোখ দুটোকে তাক করলাম আমি।অস্পষ্টভাবে সামনে একটা লম্বা টেবিল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারলামনা।দৃষ্টি আর একটু পরিস্কার হলে টেবিলের অপরপ্রান্তের লোকটাকে দেখতে পারলাম আমি। স্মিতহাস্য একজন বৃদ্ধ টেবিলের অপরপ্রান্তে বসে।লোকটার চুল দাড়ি ধবধবে সাদা।চুল দাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে কিনা জানিনা, লোকটার গায়ের জামাটাও সাদা। লোকটার পরনের প্যান্ট যদিও দেখতে পারছিনা, তবে অনুমান করতে পারছি, ওটাও বোধহয় সাদা হবে।আমার সামনের টেবিল, চেয়ার সবকিছুই সাদা।ঘরের দেয়াল, আসবাবপত্র সব সাদা। ঘরে বৃদ্ধকে ছাড়া আর কোন লোক দেখতে পারলামনা।
এখন কেমন বোধ করছেন মিস্টার লুসিফার?
আমার নাম জীহান।
আপনার নাম আমি জানি, তবে আপনাকে লুসিফার ডাকতে আমার ভাল লাগছে।নামের সঙ্গে কাজের মিল আছে বটে।
আপনি কে? আমাকে ধরে এনেছেন কেন?
আপনি আমাকে ডিজাইনার বলে ডাকতে পারেন, আমার কাজ ডিজাইন করা। কিলারস রেনেসাঁ, ভার্সন ৬.০২ আমার ডিজাইন করা।
আমি বৃদ্ধের দিকে ভাল করে তাকালাম। সাধারন একটা চেহারার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৃদ্ধের চোখজোড়া।অসাধারন বুদ্ধিদৃপ্ত এক জোড়া চোখ, কিন্তু সেখানে হিংস্রতা মিশে থাকায় তাকালে অস্বস্তি বোধ হয়।আমাকে ধরে আনার কারন কি, আবার জিজ্ঞাসা করলাম বৃদ্ধকে।
আপনি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন, অবশ্য দোষটা পুরোপুরি আপনারও নয়।আপনি ডরিন নামের চরিত্রটির কিছু ব্যাক্তিগত তথ্য জেনে ফেলেছেন, যা আপনার জানার কথা নয়।
আমার জানার কথা নয় কেন? আমি তো আপনাদের গেমের বাইরে কিছু করিনি।
করেছেন, আপনি ডরিনের বাড়ির ঠিকানা বের করে ফেলেছেন।
একটা গেমের চরিত্রের সত্যিকারের বাড়ির ঠিকানা কিভাবে থাকে আমাকে বুঝিয়ে বলেন।
দেখুন মিস্টার লুসিফার, এক চিলতে বাঁকা হাসি দিয়ে বৃদ্ধ বললেন, আমরা অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম ভিডিও গেমের জন্য একটা সম্পূর্ণ মানুষের সিমুলেশন তৈরি করতে। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মানুষের সম্পূর্ণ শরীরের নিখুঁত সিমুলেশন তৈরি করতে পারলেও মানুষের মনকে আমরা প্রোগ্রাম করতে ব্যর্থ হয়েছি। মানব মনস্তত্ব অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া।সত্যি বলতে কি, একটা নবজাতকের মানসিক গঠনও আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তখন আমরা চিন্তা করলাম যে, একটা মানুষের নার্ভাস সিস্টেমের মধ্যে রক্ষিত সমস্ত তথ্যগুলোকে কম্পিউটারের ভাষায় রুপান্তর করা যায় কিনা। অবশেষে দীর্ঘ দশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা একটি কনভার্টার সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে সক্ষম হলাম যা একজন মানুষের মন কে পুরোপুরি এনক্রিপট করতে সক্ষম।
বুঝলাম, কিন্তু যে মানুষটাকে আপনারা এনক্রিপট করেন তার কি অবস্থা হয়?
একটা কম্পিউটারে যদি অপারেটিং সিস্টেম না থাকে তাহলে কম্পিউটারটির যে অবস্থা হয়, মানুষটিরও সে অবস্থা হয়, মানুষ না বলে ওটাকে মানবশরীর বলাই ভাল।
কি করেন আপনারা শরীরটাকে নিয়ে?
রহস্যময় হাসি দিয়ে বৃদ্ধ বললেন, ব্যাটারী বানাই আমরা, মানবশরীর একটি উথকৃষ্ট মানের ব্যাটারী।গবেষনার জন্য আমাদের প্রচুর এনার্জী প্রয়োজন হয়।
প্রচন্ড আতঙ্ক আর ক্ষোভ নিয়ে বৃদ্ধের দিকে তাকালাম আমি, বললাম, আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন ব্যক্তি, আপনার চিকিথসা করা প্রয়োজন।
আগের মতোই স্মিত হেসে বৃদ্ধ বললেন, জগতের সব মানুষের মধ্যেই একটা অসুস্থ স্বত্ত্বা লুকিয়ে আছে। আপনার মধ্যেও আছে, আপনার যে স্বত্ত্বা কিলারস রেনেসাঁ খেলে আনন্দ লাভ করত। আমাদের গেমটির রেজিস্টার্ড মেম্বার এখন প্রায় ত্রিশ কোটি, এরা কি সবাই সুস্থ মিস্টার লুসিফার? আমাদের ব্যাবসার মূল ভিত্তিই হচ্ছে মানুষের পাশবিক প্রবণতা।বিশ্বের বড় বড় গেমিং কম্পানিগুলো আমাদের কমপ্লিট হিউম্যান সিমুলেশন রিসার্চ এর জন্য ইতিমধ্যেই কয়েকশ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করেছে।আমরা যদি তাদের আয়ের একটা উপায় করে না দিতে পারি, তাহলে তারা আমাদের গবেষনার জন্য টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে।
কিন্তু আমাকে ধরে আনার কারন কি?
এনক্রিপ্টেড তথ্যগুলোকে কিলারস রেনেসাঁ গেমটিতে একীভূত করার আগে আমরা কিছু কিছু জায়গা রি-প্রোগ্রাম করি, যাতে গেমের চরিত্রটি কোন প্লেয়ারকে তার ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে না পারে। কিন্তু ডরিন নামের মেয়েটিকে আমরা ঠিকমত রি-প্রোগ্রাম করতে পারিনি।কারন, মেয়েটি অটিজম নামক রোগে ভুগছিল, যেখানে ব্রেইন এর ডেভেলপমেন্ট ভিন্নভাবে ঘটে। আপনি মেয়েটির কাছ থেকে তার কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পেরেছেন যা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য হুমকি স্বরুপ। আপনাকে ধরে আনার সেটাই কারন।
তাহলে আমাকে এতোসব তথ্য জানানোর কারন কি?
কারন ভবিষ্যতে অন্য কাউকে কোন তথ্য জানানোর ক্ষমতা আপনার থাকবেনা।
আমাকে কি আপনারা এনক্রিপট করবেন?
‘করবেন’ বলছেন কেন? আপনাকে আমরা ইতিমধ্যেই এনক্রিপট করে ফেলেছি। আপনার শরীরের দিকে নজর দিন মিস্টার লুসিফার।
আমি আমার হাত, পা, পেটের দিকে তাকালাম।কিন্তু একি? এগুলো তো আমার নয়। প্রচন্ড আতঙ্ক গ্রাস করল আমাকে।মাথা ঘুরতে লাগল। হড়হড় করে বমি করলাম আমি।
আপনাকে এখনও আমরা রি-প্রোগ্রাম করিনি, বলতে থাকলেন বৃদ্ধ, এখন যেখানে আছেন এটি ছোট্ট একটি সিমুলেশন প্রোগ্রাম। এতক্ষন যার সাথে কথা বললেন সেটি আসল আমি নই, আমার একটি কথক ভার্সন।এটি সীমিত আকারে কিছু কথাবার্তা চালাতে পারে। আচ্ছা, কিলারস রেনেসাঁতে আপনার চরিত্রটির নাম লুসিফার রাখলে কেমন হয়?
হঠাধ করেই আমার সামনে থেকে বৃদ্ধ অদৃশ্য হয়ে গেলেন।সাদা ঘরটা উধাও হয়ে গাড় অন্ধকার নেমে এলো চারপাশে। একসময় মনে হলো আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছ, মনে হলো অসীম শূন্যের মাঝে মিলিয়ে যাচ্ছি আমি।এভাবে কতক্ষন বা কতদিন কাটলো জানিনা, একসময় আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা ছোট্ট ঘরের মধ্যে। ঘরের মাঝখানে একটা টেবিলের উপর শুয়ে আছি আমি।পাশে আর একটা টেবিলের উপর বিভিন্ন ধরনের ধারাল অস্ত্র।টেবিলের পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।লোকটাকে আমার কেন জানি খুব চেনা চেনা মনে হলো। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, তোমার নাম কি?
আমি বললাম, আমার নাম লুসিফার
তোমার আসল নাম কি?
আমি জানিনা।
ওয়েলকাম টু হেল, মিস্টার লুসিফার।বড় একটা প্লায়ার্স হাতে করে আমার দিকে এগিয়ে এল লোকটা।