ধরুন, একজন কিশোর ভিক্ষুক আপনার কাছে ভিক্ষা চাইতে আসলো । আপনি যদি তাকে স্রেফ ভিক্ষা দিয়ে দেন, তাহলে একে বলে development but temporary (সাময়িক উন্নয়ন) । কিন্তু এটা না করে আপনি যদি তাকে বলে দেন কিভাবে আর কি কি করলে সে এসব ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে একটি সম্মানজনক কিছু করে আয় করতে পারবে, একে বলে Sustainable Development (টেকসই উন্নয়ন) ।
আচ্ছা ইন্ডিভিজুয়াল অর্থাৎ ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদাহারন বাদ দিয়ে একটি সামগ্রিক উদাহারনের দিকে যাই । ধরি আপনার একটি প্রতিষ্ঠান আছে । আপনি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য Sustainable Development (টেকসই উন্নয়ন) নিশ্চিত করতে আগ্রহী ? অর্থাৎ আপনি চাচ্ছেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজ-কাম-উন্নতি এখন যেমন আছে, ভবিষ্যতেও সেই একই ধারা অব্যাহত থাকুক । তাহলে কি করতে হবে ?
ধরুন, আপনি এক লক্ষ টাকা দিয়ে একটা কাজ করলেন, বেশ কিছু টাকা লাভ করলেন, এই উন্নয়নটা সাময়িক কিন্তু আপনি যদি প্রমান করতে পারেন, এই টাকা দিয়ে আপনিই এই বাজারে সবচেয়ে বেস্ট কাজটা করেন, এবং আপনি এটা নিশ্চিত করতে পারেন, তবেই আপনি টেকসই উন্নয়ন এর পথযাত্রি হতে পারবেন ।
টেকসই উন্নয়নের জন্য আপনাকে কি করতে হবে ?
আমি আপনাকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সামান্য কিছু আইডিয়া দিতে পারি ।
আপনাকে প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা । আপনি একটি তালিকা করতে পারেন । এখন দেখুন এই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠান বা সরকার বা অন্যান্য - এরা আপনার কাছে কি চায় আর কি প্রত্যাশা করে । এর পাশাপাশি আপনাকে দেখতে হবে তাদের প্রত্যাশাপূরণে আপনি যা যা করতে পারেন, তাতে কি কি ঝুঁকি আপনাকে সম্মুখীন হতে হবে কিংবা এটাও হতে পারে যে, আপনি লাভবান হবেন ।
দ্বিতীয়ত, আপনি নিশ্চিত করুন আপনার প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা থাকবে । এই লক্ষ্য পূরণ করতে আপনি যে Milestone বা ধাপগুলো নির্ধারণ করেছেন, তা এমনভাবে করতে হবে যাতে আপনার সেই লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হয় এবং পাশাপাশি আপনার কাজের সফলতা নিশ্চিত হয় এবং আপনি আপনার কাস্টমারদেরদের মন যুগিয়ে চলতে পারেন ।
তৃতীয়, আপনি যা করেন, যা করবেন, যা ভাবছেন, যা টার্গেট করছেন, যা বাধা মনে করছেন, যাকে বাধা বা সহায়ক বলে মনে করছেন, টার্গেট পূরণে যা যা লাগবে ইত্যাদি সবকিছু তথ্য আকারে পেপারে বা অনলাইনে সংরক্ষণ করুন । মনে রাখবেন, আপনি যদি এমন একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, যেখানে আপনার ব্যবসার সহায়ক যারা আছেন, তারা বদলালেও আপনার ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি কিংবা সাময়িক কোন ক্ষতি হবে না, তবেই বলা যায় আপনার ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথে আছে ।
চতুর্থত, আপনি চোখ কান খোলা রাখুন । প্রচুর মার্কেট চর্চা করুন । কানেকশন বাড়ান । খেয়াল রাখবেন, এতে করে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী তেমন না বাড়ে । কারও পায়ে পড়ে শত্রুতা দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনে না । অবশ্যই সততা অবলম্বন করুন । সবসময় ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে থাকুন । আস্তে আস্তে উন্নতি সবসময় দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি হয় ।
এছাড়া আমার পরামর্শ হচ্ছে, বেস্ট যে কোন কিছু দ্রুত লুফে নিন । যদি অতিরিক্ত কিছুটা খরচ করতেও হয়, এমনকি আপনার কোন কাস্টমারের কাছে সেই বিষয়ের তাৎক্ষণিক কোন চাহিদা নাও থাকে, তবুও এই বেস্ট বিষয়গুলো লুফে নেবার ক্ষেত্রে পিছুপা হবেন না, কারণ এই বিনিয়োগ আপনার ভবিষ্যতের জন্য, তাই বর্তমানের লাভ ক্ষতির অংকে এগুলো আপনাকে কোন ফলাফল দেখাবে না । এরপর এই বেস্ট বিষয়গুলো আপনার ব্যবসায় প্রয়োগ করে নতুনত্ব আনুন । মনে রাখবেন, ফুজি, নোকিয়া ইত্যাদি ব্র্যান্ডের মত বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো প্রায় হারিয়ে গেছে দ্রুত নতুনত্ব লুফে না নেওয়ার কারণে ।
পঞ্চম, এবার আপনার প্র্যাকটিসগুলোকে বার বার রিভিউ করুন । নিরীক্ষা বা Audit বুঝেন ? আমি বলি নিয়ম অনুসারে যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম (আর্থিক বা অন্যান্য বিষয়সমূহ) ও ঘটনাবলী সম্পর্কে নিরপেক্ষ মুল্যায়নকেই Audit বলে । এই Audit যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এই অডিটের ফলাফল লিপিবদ্ধ করুন । কোথাও অনিয়ম বা নিয়মের ব্যত্যয় দেখলে, গভীর অনুসন্ধান করে কারণ খুঁজে বের করুন । এরপর দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করুন । সাথে এটাও মাথায় রাখবেন, একই ভুল যেন বার বার না হয়।
সবশেষে একটা কথা বলি,
নিজের এই দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ ইত্যাদি সবকিছু আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত, তাদের খোলাখুলি জানিয়ে দিন । Transparency বা স্বচ্ছতাও হতে পারে আপনার ব্যবসার অন্যতম বড় একটি পুঁজি ।
কিভাবে খোলাখুলি জানাবেন ?
এখানেই আসে Sustainability Reporting এর কথা । এটা আরও বিস্তারিত বিষয় । আরেকদিন বিস্তারিত জানাবো নে । আজকে এই পর্যন্তই থাকুক ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩৪