somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঊনমানুষ

২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১..
"আপনাকে মেরে ফেলা পানি ভাত। এই ধরেন, হাতের পেনসিল দিয়া দিলাম চিপের উপরে কেচা, এক মিনিটেই মরে যাবেন।হে হে....
আরেকটা বুদ্ধি আছে, ঐ পানির পাইপটা আপনের গুহ্যদ্বার দিয়ে ঢুকিয়ে দিলাম। মূহুর্তে আপনের খেল খতম!
গুহ্যদ্বার চিনেন তো? আপনার মত শিক্ষিত লোকদের এক সমস্যা, ফটফট করে ইংরেজি বলবেন কিন্তু বাংলা ভাষা জানেন না!
আমারে বিরক্ত করবেন না, যান ভাগেন।
ওহ! যাইতেও তো পারবেন না। পুলিশ এক ঘন্টা পর আসবে। কোন কথা নাই, চুপচাপ বসে থাকেন।"

আমার ভয় লাগছে। আমার সামনে একজন আসামী, খুনী আসামী। লোকটা তার স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জনকে ভয়ংকরভাবে খুন করেছে। তাকে নিয়ে রিসার্চ করা আমার ক্রিমিনোলজি কোর্সের অংশ। লোকটার পায়ে শিকল দিয়ে বাধা, তবুও আমার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি চুপচাপই বসে আছি।
আমাকে জেলের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেয়া হয়েছে। কারাপুলিশ ১ ঘন্টা পর এসে নিয়ে যাবে।

উনার হাতে একটা পেনসিল, ওটা দিয়ে তিনি জেলখানার দেয়ালে ছবি আঁকছেন। আগে পুরো দেয়ালে লিখেছিলেন 'কেয়া, তোমাকে ভালোবাসি', থুতু দিয়ে মুছে মুছে ছবি আঁকছেন।
আচ্ছা, তার শেকল কি আমার চেয়ার পর্যন্ত আসবে?
আর জেল খানায় পাইপটাই বা কেন দিয়েছে?
আমি ঘামছি, উপরে তাকিয়ে দেখলাম ফ্যান নেই! উপরের দিকে দেয়ালে একটা এক ফুট বাই এক ফুট জানালা; জানালা না বলে ছিদ্র বলাই ভালো! তীর্যকভাবে সূর্যের আলো এসে পরেছে।
এই আলোর নিচেই আমার জন্য একটা টেবিল, আর চেয়ার বসানো হয়েছে। আমি উনার চেহার দেখতে পাচ্ছি না।

উনি আমার দিকে না তাকিয়ে শান্তভাবে বললেন,"মেহরাব সাহেব, চুপচাপ বসে আছেন কেন? মোবাইলে গেম খেলুন, আপনার কোন বন্ধুকে কল দিন, কথা বলুন।
অবশ্য এই সময় গার্লফ্রেন্ডকে কল দিলে সময় দ্রুত যেত, কি আর করা আপনার তো কেউ নেই!যে একজন আছে, তার সাথে তো আপনার সম্পর্ক ভালো না।"
"আপনি কিভাবে জানেন?"
"আপনি হতাশবাদী মানুষ, এদের কোন গার্লফ্রেন্ড থাকেনা। আবার ছেড়ে যেতেও পারে না, এদের প্রতি করুণা কাজ করে।"
লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। আমি আতঙ্কে চেয়ার থেকে উঠে গেলাম, জেলের গ্রিল ধরে ডাকলাম,"হ্যালো কেউ আছেন? কেউ আছেন?.....আমার কাজ শেষ।"
কোন সাড়াশব্দ নেই।
"আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, করুণা নেয়া বন্ধ করুন। ভালোবাসা ফেরত দেয়া যায়, করুণা ফেরত দেয়া যায় না। ঢুকেছে মাথায়?"

উনার শেকল এত লম্বা যে উনার হাত আমার চেয়ারের ঠিক দু'ফুট আগে এসে শেষ থেমে গেল। আমার স্বস্তি পাওয়া উচিত কিনা বুঝতে পারছি না। মোবাইলেও নেটওয়ার্ক নেই!

"আপনি শুধু ভয় পাচ্ছেন। আমি আপনাকে মারবো কেন? আপনাকে মেরে একটা ফ্যামিলিকে বিপদে ফেলে আমার কি লাভ, যদিও মানুষ খুন একটা নেশার মত। এই নেশা আমার ভালোভাবেই লেগেছে!তবুও আপনাকে মারবো না, আপনাকে সাহায্য করবো।আপনার উপরে আপনার ফ্যামিলি টিকে আছে।"
আমি এবারও চুপ করে আছি, কি বলবো?
"আপনার আচরণ কাজের লোকের মত কেন? মানুষের করুণা, দয়া নিতে নিতে এই অবস্থা! নিজের জন্য বাচুন, কিছু দ্বায়িত্ব অন্যদের ভাগ করে দিন।
Be happy, man. Be happy.
শুনুন, আমার ছেলের ঘরে যাবেন, ওর ঘরে আমাদের যে ফ্যামিলি ফটো আছে, সেটার পিছনে টেপ দিয়ে লাগানো একটা পেন ড্রাইভ আছে। ওটা অবশ্যই আপনাকে ভালোভাবে পাস করতে সাহায্য করবে। আর হ্যা, এত ভয় পান তবে এত ভয়ংকর এসাইনমেন্ট নিয়েছেন কেন? হা হা....." লোকটা একটানা কথা বলছে!
আমি চুপ করেই রইলাম।

"শুনুন, জেলখানায় ফ্যান থাকে না। কয়েদিরা ফ্যানে লটকে পরে এইজন্য। আর এই পাইপ দিয়ে পানি আসে, এই পানি আমি খাই, আবার এই পানি দিয়ে পাছা ধুই। কি? সব ক্লিয়ার না?"
লোকটা ফিরে গিয়ে থুতু দিয়ে দেয়ালের ছবি মুছতে লাগলো।
বিরবির করে বলছিল,"না হয় আমি খুন করেছি! তাই বলে আমাকে একা জেলে রাখতে হবে? আমাকে কোন কিছুই দেয়া হবে না? আরে আমি নিজেকে মারবো কেন? আমি আত্মহত্যা করবো কেন? যে লোকটা অন্যকে খুন করে মজা পায়, সে নিজে কখনো আত্মহত্যা করে না।....."

২..
আমার বর্তমান অবস্থা এক লাইনে বলা যায়, আমার ঘরে আমি কাকের ছাও!
গত সাতদিনে কেবল খাবার জন্য বাইরে বের হয়েছি, তাও মাত্র একবার। কি করবো বুঝতে পারছি না!
নাফিউল মাজিদ স্যারকে কি বোঝাবো? এই কোর্স শেষ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণ আমি এসাইনমেন্ট করতে পারবো না। তারচেয়েও খারাপ লাগছে, আমার কোর্স ফি ৯ হাজার টাকা গচ্চা যাবে!আমার টিউশনির টাকা আর ভাইয়ের অল্প বেতনে টানাটানির সংসার, এখানে ৯ হাজার নষ্ট হওয়া মানে বিরাট কিছু।
নাফিউল মাজিদ স্যারও অনেক বার কল দিয়েছেন, ধরে কি হবে? কি বলবো?

৯ম দিন আমি লোকটার বাসায় গেলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি একটা পাথরও না উল্টিয়ে ছাড়বো না। I will leave no stone unturned!
এবারও পুলিশ আমাকে ১ ঘন্টা সময় দিয়ে চলে গেল।আমাকে প্রায় কিছুই করতে হয়নি, সব ব্যবস্থা স্যারই করেছেন। এই ছোট খাটো মানুষটার এত ক্ষমতা, আমার জানা ছিল না!

ময়মনসিংহ নতুন বাজারে হরিজন পল্লীর পাশে যে রেল ক্রসিং, তার ডান দিকে চমৎকার বাড়িটা তাদের! বাড়ির সামনে প্রায় আকাশ ছোয়া সাতটা নারকেলগাছ, অনুচ্চ দেয়ালে ছেয়ে আছে সবুজ কি একটা লতা, ঠিক মাঝখানে একটা টিনের বাড়ি। বারান্দার সামনে শিউলি তলা সাদা ফুলে ছেয়ে আছে, আগে যেগুলো পরে ছিল সেগুলো শুকিয়ে স্তর পরে গেছে। বাড়ির একপাশে একটা ছোট পুকুর, পুকুরের পানি লাল। আশ্চর্য!
বাড়ি পুরোটাজুড়েই কোন না কোন গাছ লাগানো। অযত্নে অবহেলায় গাছগুলো জীর্ণ, তবে টিকে আছে বেশ। টিকেও থাকবে মনে হয়! সেঞ্চুরী গাছটায় ফুল আসি আসি করছে। এ গাছে প্রতি একশ বছরে একটা ফুল হয়। আহারে! ফুল ফুটবে আর এবাড়ির কেউ দেখে আশ্চর্য হবেনা।

ছেলেটার ঘরে ঠিক যায়গায় পেন ড্রাইভ পাওয়া গেল। ছবিটি সুন্দর!
মাথায় ঝাকড়া চুল,ঠোঁটে পুরু গোফ, গাঢ় নীল স্যুট গায়ে লোকটা ছেলেকে কোল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সামনে বেগুনি শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে চেয়ারে বসে আছেন উনার স্ত্রী। স্ত্রী অত সুন্দর নন, তবে একটা আচ্ছন্ন আকর্ষণ আছে উনার চোখে। যেমন কালো হলে আমরা মেয়েদের শ্যামলা বলি উনি তার চেয়েও কালো, তবে চোখ দুটো নীল! অসম্ভব নীল। তবে ছেলেটা ফরশা।মায়ের সাথে ছেলেটার গায়ের রঙের পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। চেয়ারের পাশে একটা ফুটফুটে পিচ্চি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স আনুমানিক ২ বছর, ফরশা, বাদামী চুল, ধূসর চোখ, হাসি হাসি মুখ! সুখি পরিবার, দেখলেই ভালো লাগছে!
দেয়ালে আরও নানান ছবি, কত সুন্দর সুন্দর স্মৃতি!
লোকটা সবাইকে মেরে ফেলেছে কেন? কৌতূহলে দ্রুত বাসায় চলে এলাম!

৩..
1 Dec, 2017. Fri
8:40AM
লোকটি উইনিফর্ম পরে বাইরে চলে গেলেন। বসার ঘরে ল্যাংটা পিচ্চি ছেলে ট্রেন গাড়ি নিয়ে খেলছে। মেয়েটি এসে দরজা বন্ধ করল। ভেতর থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ আসছে। মেয়েটির সে দিকে খেয়াল নেই। তিনি পাশের রুমে চলে গেলেন।

সে রুমে পড়ার টেবিলে বসে আছে কমবয়সী ছেলে, বয়স ১৩-১৫ এর মধ্যেই হবে, ভালো করে গোফও হয়নি। মেয়েটি গিয়েই ছেলেটিকে চুমু খেতে শুরু করলো! মূহুর্তে ছেলেটিকে ধরে বিছানায় শুইয়ে লুঙ্গি উপরে তুলে দিল.....
"ভাবী, মাইশা কাঁদছে।"
"কাঁদুক, তুমি আমাকে একটু আদর করে দাও।"
মেয়েটির কালো লিকলিকে শরীর, ছেলেটির নিচে তাকে দেখা যাচ্ছে না।
"ভাবী, আমার এগুলা ভালো লাগে না।করতে ইচ্ছে করে না।ভাইয়া, জানলে আমাকে মেরে ফেলবে।আজকে শুক্রবার, ভাইয়া কখন ডিউটি থেকে চলে আসে ঠিক নেই।"
"আমাকে আদর না করলে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো।"

নবজাতকের কান্নার আওয়াজ তখনো পাওয়া যাচ্ছিল।

3 Dec, 2017. Sun
4:03PM

দরজা খুলতেই ইউনিফর্ম পড়া একজনকে দেখা গেল।
:ভাবী, আপনাকে দেখতে এলাম। মামুন কোথায়?
: ও ডিউটিতে গেছে। আসুন ভেতরে।
তিনি বসার ঘরে এলেন।
:বাসায় কেউ নেই? মাইশা কোথায়?
: নাহ, মাইশা ঘুমাচ্ছে। হাসান মুকিতকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে গেছে....
কথা শেষ হবার আগেই লোকটা মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলেন।

লোকটা ইউনিফর্ম ঠিক করতে করতে বললেন, "আপনাকে আমার বেশ লাগে। আল্লাহ আপনাকে অনন্য সৌন্দর্য দিয়েছেন। আমি আপনাকে চিন্তা করে আমার বৌকে...."
"আপনাকেও আমার পছন্দ, আপনি বেশিক্ষণ না পারলেও আপনি অনেক....."

7 Dec, 2017. Thu
2:07

ডাইনিংএ খাবার সাজানো।
মেয়েটি আর একজন বিবস্ত্র অবস্থায় মেঝেতে বসে আছে।
"ছেলে মেয়ে কোথায়?"
"পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছে। আমরা আর কত দিন এভাবে দেখা করবো?"
"যত দিন আমার ভালো কিছু না হয়।"
"তোমার মাস্টার্স শেষ হতে আর কত দিন?"
"শেষ হয়ে যাবে, তারপর চাকরি পেলেই তোমাকে নিয়ে যাবো।"
"তুমি আর আমাকে আগের মতো আদর কর না।আমার প্রতি অনিহা চলে এসেছে!"
"না, তা কেন?"
"আমি দুই বাচ্চার মা। শরীর বুড়িয়ে যাচ্ছে।"
"তুমি এখনো আগের মতোই আছ। তুমি আমার শান্তা। এখন ২০ হাজার টাকা দাও। ভার্সিটিতে দিতে হবে।"
"আমি ৬ বছর ধরে তোমাকে টাকা দিয়ে যাচ্ছি।"
"এইতো আর কয়টা দিন, তারপর আর দিতে হবে না।তুমি আর আমি একসাথে থাকবো।আমরা অনেক দূরে চলে যাবো। যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না।"


19 Dec, 2017. Tue
12:00PM

ভিডিওতে একটা ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। ব্র‍্যান্ড DC Milan. তবে কথা শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট!
"তুই কিসে পড়িসরে? মাত্র এইটে! এই বয়সে এত বড় সাইজ বানিয়েছিস?এটা দিয়ে কি করে জানিস? আজকে শিখবি। তোর বন্ধু কয়দিন আগে শিখেছে। আজকে তুই শিখবি।"
মেয়েটি আর আরেকজনের হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।
"ভাবী, মামুন ভাই, হাসান ভাই কোনদিন কোনদিন বাইরে থাকে আমাদের বলেন। আমরা দুই বন্ধু আসবো।"
"চলে আসবি যেদিন ইচ্ছে। শুক্রবারে আসিস না। শুক্রবারে হাসানের কলেজ, প্রাইভেট থাকে না।"
"ওকে নিয়েই কিন্তু আসবো।"
"দেখ আগে ও কিছু করতে পারে কিনা! দেখ দেখ ওরটা....."
দুইজনে হাসছিল।

31 Dec, 2017. Sun
12:13AM

সেই ইউনিফর্ম পরা লোকটার সাথে ইউনিফর্ম পরা আরেকজন লোক দরজায় দাঁড়িয়ে।
"ভাবী, মামুনের আজকে সারারাত ডিউটি। আপনি এই উৎসবের দিনে একা থাকবেন। তাই চলে এলাম।আর আপনি বলেন, আমি বেশিক্ষণ পারিনা। তাই যে পারে তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।"
"আজকে শরীর খারাপ, ভাই। আর মুকিতের শরীরও ভালো না, সারাদিন কান্নাকাটি করছে।বাসায় হাসান আছে।"

দুইজনে একটু জোরাজোরি করতে চাইল।কিন্তু হাসান বাইরে আসতেই তারা চলে গেল।

আমি বাকি ফোল্ডারগুলো চেক করে দেখলাম। ২০১৭, ২০১৮ সাল দিয়ে সেভ করা অনেকগুলো ভিডিও ফুটেজ।সবগুলোর কাহিনী একই ধরে নিলাম।

৪..
আমি পৃষ্ঠায় পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছিলাম। মামুন সাহেব দেয়ালে ছবি একেছেন। তার পরিবারের ছবি।
"কেমন হয়েছে, মেহরাব ভাই?"
আমি না তাকিয়েই বললাম, দারুণ হয়েছে।
'না দেখেই বললেন।দেখেনতো সবার চেহারা ঠিকঠাক ফুটেছে কিনা?"
আমি চুপ করে রইলাম।
"আচ্ছা, আপনি যে ঘরে স্পাই ক্যামেরা লাগিয়েছেন। তারা জানতো?"
"আপনি কি খেয়ে ল' পড়ছেন বলুন তো!"
"কেন লাগিয়েছেন ক্যামেরা?"
"ফলাফল তো আপনি দেখতেই পেয়েছেন। আমার প্রতি ঘেন্না হচ্ছে না! আমার লজ্জা লাগছে, আমি আপনার দিকে তাকাতে পারবো না! মনে হচ্ছে না, আমার যৌন ক্ষমতা নেই। আসলেও তাই।"
আমি চুপ করে রইলাম। উনি দেয়ালে ছবি ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। তবে সমানতালে কথাও বলে যাচ্ছেন।
"আমার সিফিলিস হয়ে গেল, প্রশ্রাবের সাথে পুজ পরতো।ডাক্তারের কাছে গেলাম, উনি রিপোর্ট দিল যে আমার স্পার্ম কাউন্টিং কম।আমি বাবা হতে পারবো না। স্পার্ম কাউন্টিং বোঝেন তো, হা হা হাহা....
ছেলেদের প্রতি সেকেন্ডে ১০ হাজার স্পার্ম তৈরি হয়, কিন্তু প্রতি সেকেন্ডে ১ কোটি না হলে আপনি বাবা হতে পারবেন না।"
উনি হুট করে আমার সামনে মেঝেতে বসে পরলেন। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,"অথচ দেখুন ঘরে আমার দুই সন্তান। আমার সন্দেহ হলো, আমার মনে শান্তি চলে গেল।তাদের বাড়ি পাঠিয়ে ঘরে স্পাই ক্যামেরা লাগালাম। আর হাতেনাতে ফলাফল, আমার নিজের ভাই, কাজিন, সহকর্মী..... আর বলছি না!আপনি নিজের চোখে দেখেছেন।"
তিনি চোখ মুছলেন।
"পুরো দুনিয়া আমাকে খারাপ বলবে, পাগল বলবে, খুনি বলবে; এটা মানতে পারছিলাম না। তাই আপনাকে জানালাম, অন্তত একজন জানুক আমি কতটুকু....."
আমার চোখ থেকে পানি পরে গেল। আমি লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করলাম।
"ও মা, আপনি কাঁদছেন কেন? কাঁদবেন না। ছেলে মানুষ কাঁদলে বড্ড বিচ্ছিরি লাগে।"

"তাহলে শুনুন, আমি কেন ভেতর থেকে মরে গিয়েছিলাম।"


"আমি সেবার সরকার থেকে বিয়ে করার অনুমতি পেয়েছি। শীতের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছি। আব্বা পাত্রী দেখতে নিয়ে গেলেন। মুনিয়াকে প্রথম দেখলাম।
আম্মা পছন্দ করলেন না, মেয়ে কালো।আমিও পছন্দ করলাম না।
৮/৯ টা পাত্রী দেখলাম, পছন্দ হল না। ছুটি শেষ, ব্যারাকে ফিরে এলাম।কেন জানি না, প্রতি রাতে মুনিয়াকে স্বপ্ন দেখতাম।নানা ধরনের স্বপ্ন! ছেলেরা যেসব দেখে আরকি!
ছোট ভাই হাসানকে দিয়ে মোবাইল নাম্বার এনে কথা বললাম, আমাকে না করে দিল। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।

তিনমাস পরে আবার ছুটি নিয়ে বাড়ি গেলাম। সেদিন মাঝরাতে মুনিয়া আমাদের বাড়ি চলে এলো। বাড়িতে হইচই পরে গেল! সে আমাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদল, বলল,আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। সে প্রতিরাতে আমাকে স্বপ্ন দেখে। আমি তাকে বিয়ে না করলে সে বিষ খাবে।

আম্মা, আব্বা রাজি হলেন না। মেয়ে কালো, আমার সন্তানাদি কালো হবে।
আমরা সে রাতেই কাজি ডেকে বিয়ে করলাম।

শুনুন জীবনে কখনো ইমোশনাল হবেন না, আনন্দিত-ইমোশনাল হয়ে কখনো সিদ্ধান্ত নিবেন না।
আমিতো ওকে ভালোবেসেছিল।
ও আসলে ওই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। সুবিধা করতে না পেরে, আমার বাসায় চলে এসেছিল।
আমি ভাবতাম, ও নিজের বাবা মাকে টাকা দিত। আসলে ও বয়ফ্রেন্ডকে টাকা দিত।
খুনের কারণ পেয়েছেন?
আমি জানি না, ঐ সন্তান দুটো কার? আম্মা ভেবেছিলেন, আমার সন্তান কালো হবে। কি ফরশা হয়েছিল, দেখেছেন! আম্মাকে যে কি খুশি হয়েছিলেন।"
উনি আবার হাসলেন!

আমি বারবার চোখ মুছলাম।
"আপনি তাকে বোঝাননি?ঠিক করার চেষ্টা করেননি?"
"আমি নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না, অন্যকে কি বোঝাবো? আমরা নিজেকে বদলাতে পারি, অন্যকে না।
আচ্ছা, আপনি কাঁদছেন কেন?"
"আপনার জন্য খারাপ লাগছে!"
"আপনি হলে কি করতেন?"

৫..
7 Jan, 2019. Mon
6:40PM

পুরো ফ্ল্যাট সাজানো, রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো। মাইশা ডিজনি প্রিন্সেসের জামা পর ঘুরে বেড়াচ্ছে, মুকিতের পরনে শেরওয়ানি; লাল শেরওয়ানি। হাসান দুই বছরে বেশ বড় হয়ে গেছে। ও এবার কলেজ পাস করেছে। ও পরেছে কালো জিন্স, আর কালো টি-শার্ট। টি-শার্টের পেছনে লাল বৃত্তের মধ্যে ক্রস দিয়ে লিখা No Girls.
টেবিলে তিনতলা কেক সাজানো।
ইউনিফর্ম পরা সেই লোকটা এলেন, তিনি বড়সড় একটা বক্স নিয়ে এসেছেন, চকচকে কাগজ দিয়ে মোড়ানো। উনার সাথে
সেদিনের সেই লোকটা। আর একটা ছোট ছেলে শিশু।

৭:১০ এর দিকে এলো দুজন কমবয়সী কিশোর! ওরাও কাগজে মোড়ানো উপহার এনেছে। এই কয়জন লোকের জন্য এত বড় কেক কেন?
সবাই হাসিখুশি!
কেক কাটা হলো। সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করলো।
মুনিয়া চা বানাতে গেল।
চা খেতে খেতে মামুন সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে!
আর সবাই একসাথে বসে মুভি দেখবে, এটাই প্ল্যান!

সবাই যার যার মত জায়গা নিয়ে টিভির সামনে বসলো।
টিভিতে কি মুভি ছাড়া হলো, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল না। তবে সবার মুখ দেখে বোঝা গেল, দারুণ কিছু না।
ইউনিফর্ম পড়ে যে দুইজন লোক আসতেন, তারা রাগারাগি করলেন।
"মামুন ভাই, আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন!এগুলো কি ছাড়ছেন?"
তারা নিজেরাই দরজা খুলে চলে গেল।

মামুন সাহেব দরজা বন্ধ করলেন। একটা চাপাতি নিয়ে বসার ঘরে এলেন।
হাসান দৌড়ে এসে ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরলো।
মামুন এক কোপ দিল, মাথাটা খাটের নিচে চলে গেল।
দুই কিশোর ভয়ে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল। ভ্রুক্ষেপ নেই কেবল মুনিয়ার, তার হাতে রিমোট। সে টিভির দিকে তাকিয়ে!

মামুন দুই কিশোরের দিকে এগিয়ে গেল।কমবয়সী ছেলেটাকে ঘাড়ে কোপ দিয়ে আরেকটার মাথা হাতে ধরে দেয়ালে ঠুকে দিল। কোপ খাওয়া ছেলেটা দুইবার কাতরিয়ে শান্ত হয়ে গেল। ততক্ষণে মেঝে রক্তে ডুবে গেছে।
মাইশা হাত রাঙিয়ে বাবা দিকে গেল।
"বাব্বা, দেখ নাল আয়তা(আলতা বলেছে হয়তো)"
মামুন হাত দিয়ে মেয়ের গলা টিপে ধরলো!
এবার মুকিত সজাগ হলো। মায়ের দিকে দৌড়ে গেল।
"মাম্মা, আব্বু বোনকে মারছে। আমার বইনে মারা যাচ্ছে। মাম্মা...."
সে বাবার দিকে গেল।
"আব্বু, তুমি....."
মামুন আরেক হাতে ছেলের গলা টিপে ধরলো।
দুজনে নিস্তেজ হয়ে গেলে, মামুন আস্তে আস্তে মাথায় আঘাত পাওয়া ছেলেটার দিকে গেল।
তাকে মেঝেতে টেনে এনে বুকে বসে চাপাতি দিয়ে তার মাথা থেতলে দিল।
মুনিয়া দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে চিৎকার শুর করলো।
মামুন বারান্দায় গেল, ধপ করে একটা শব্দ হলো। এরপর আর সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।

মামুন রুমের ভেতরে এসে রক্তে ভাসা মেঝেতে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলো। এরপর উঠে পর্দার আড়াল, শোকেস, ফুলদানি থেকে তারযুক্ত কিছু বের করে আনলো। স্পাই ক্যামেরাই হবে হয়তো....
ভিডিও শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাট ফুল

লিখেছেন মেঘনা, ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪

বৃষ্টির ফোটার মতন ঝরে পড়ে পাতা
ফাল্গুনের তাপদ্রাহে ।

আমি তার আগে। সামনে সমতল
প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাগজ, পাতা পোড়া ছাই -
একাকিত্বের বিলাসিতায় মগ্ন হয়ে যাই ।

কল্পনায় আমি এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আবরার ফাহাদ হত্যায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫



বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

রোববার বেলা ১১টায় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

তথ্য বাবার আপডেটেড তথ্য....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

তথ্য বাবার আপডেটেড তথ্য....

প্রত্যাপশালী কুখ্যাত লেডি হিটলার শেখ হাসিনার ছেলে জয়। জাতির সাড়ে হাজার ভাগ্নের একাল- সেকাল। আজ নিঃসঙ্গ! কেউ নেই পাশে। জুতার গ্লু টানা টোকাইদের মতো অবস্থা।


তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াতের ইফতার মাহফিলে কাদের সিদ্দিকী কি করেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৯


বাংলাদেশের শিক্ষিত প্রজন্ম রাজনীতির প্রতি বিমুখ কারণ তারা পল্টিবাজ রাজনীতিবিদ দের কার্যক্রম দেখে হতাশ। রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা নেয়ার জন্য তারা নিজেদের অর্জিত সম্মান বিসর্জন দিতে কার্পণ্য করেন না। জুলাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দুয়েকজন সৎ রাজনীতিবিদের নাম বলুন

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪


আর্থিক বিষয়ে পরিষ্কার কয়েকজন রাজনীতিবিদের নাম জানতে চাচ্ছি। ১৯৯১ সালে বহুদলীয় রাজনীতি প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে সৎ কারা ছিলেন?

আমি জাতীয় চার নেতার এক নেতার ছেলে সৈয়দ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×