আন্দোলনে একটা চমৎকার প্ল্যাকার্ড চোখে পরলো,তাই লিখতে বসলাম।যদিও চলমান বিষয় নিয়ে লিখতে আমার চরম অনীহা।
"বিদ্যালয় শিক্ষার জায়গা, মোবাইল আনার জায়গা নয়।বাবা-মা শ্রদ্ধার জায়গা, অপমানের জায়গা নয়।"
খাটি কথা।তাহলে মেয়েটা মোবাইল কেন আনলো,আর শিক্ষক তার বাবাকে অপমান কেন করলেন?
অরিত্রী নবম শ্রেনির ছাত্রী ছিল,আনুমানিক বয়স ১৫-১৭ বছর।মানে তার age of reason (বোঝার বয়স) না হবার কোন কারণ নেই!আমাদের দেশে বিদ্যালয়ে পরিক্ষার যে সিস্টেম, তাতে সব ছাত্রই জানে মোবাইল নিয়ে আসা অপরাধ, এবং এতে তাকে ছাড়পত্রও দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।এইতো সেদিন বিদ্যালয়গুলোর দেয়ালে দেয়ালে শোভা পেল
"মোবাইল মুক্ত,রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন..."
আর অরিত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নকল করছিল।এটা অভিযোগ সত্য কি মিথ্যা, এটা প্রমাণের বিষয়। তার পরিক্ষা হলের সহপাঠীরা এটা বলতে পারবে।
কিন্তু অরিত্রী ছোট শিশু না, যে জানতো না স্কুলে পরিক্ষায় মোবাইল আনলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
আর হ্যা, শিক্ষক ভালো আছেন,তেমনি খারাপও আছেন।কিন্তু একজন মানুষ যখন শিক্ষক হবার সিদ্ধান্ত নেন,তাকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়।
কেউ একমত না হলেও এটা সত্য যে,শিক্ষকগণ অনেক সময় আমাদের অকারণে বকাঝকা করেন। যেখানে তাদের good faith (সরল বিশ্বাস) থাকে।এবং তা আমাদের ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনে।
মনে করুন, আপনার পরিক্ষা চলছে।আপনি স্কুলে মোবাইল নিয়ে গেলেন। আপনি মোটেই নকল করছিলেন না।কিন্তু আপনার স্কুলে যেহেতু মোবাইল নিষিদ্ধ, তাই আপনাকে ছাড়পত্র দেয়া হলো।
এখানেই কি ঝামেলা শেষ হবে?হবে না,অবশ্যই শিক্ষক আপনার অভিভাবক ডাকবেন।এবং ছাড়পত্র দেয়ার কারণ জানাবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এমন একটা সুখবরতো শিক্ষক খুশি মনে দিতে পারবেন না।আর কোন অভিভাবক কি এটা ভালোভাবে নিবেন?মানে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হবে।যা দুজনের জন্যে অপমানজনক। কিন্তু এর দায়টা কি, সে শিক্ষার্থীর নয়?
অধ্যক্ষ, শিফট ইনচার্জ এবং শ্রেণী শিক্ষক যদি বাজেভাবে ব্যাপারটা উপস্থাপন করে থাকেন,সেটা কি অস্বাভাবিক? মানে বিষয়টা এমন দাড়ালো, আপনি ভূল করবেন এই ভেবে যে, স্যারেরা কোন ভাবেই আমার বাবা-মাকে অপমান করতে পারবেন না, স্যারেরা দয়ালু তাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন, বা আমার কাজ ভুল করা আর স্যারদের কাজ আমাকে ঠিক করে দেয়া।শাস্তি দেয়া তো দুরের কথা!
আমি বলতে চাচ্ছি না,শিক্ষকদের কোন দোষ নেই।দোষ আছে ৩০%,বাকি দোষ তার পরিবারের।আর আপনি যদি বলেন, শিক্ষক তার বাবাকে ডেকে এনে অপমান কেন করলেন? মানে আপনার সন্তান অপরাধ করবেন,এটা আপনাকে জানানোও যাবে না!জানালেও সেটা ভদ্রভাবে আবেদনপত্র লিখে জানাতে হবে?
একটি স্কুলে প্রতিটা ক্লাসের জন্য ৪৫-৮০ মিনিট সময় থাকে।এর মাঝেই একজন শিক্ষককে ছাত্রকে প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীর জন্য তৈরি করতে হবে,নীতি-নৈতিকতা শেখাতে হবে,তার আচরণ ঠিক করতে হবে,আবার ছাত্রকে মূল্যায়ন করতে হবে।এত অল্প সময়ে এত কাজ সম্ভব?তাই বেশিরভাগ শিক্ষক ফেল করেন!
আর হ্যা,এভাবে শিক্ষকদের মুণ্ডুপাত চলতে থাকলে ভালো ছাত্ররা কি শিক্ষক হতে চাইবে?যেখানে অপরাধের চাইতে জবাবদিহিতা বেশি?আপনি চাইবেন?এমনিতেই ভালো ছাত্ররা বিদেশমূখী!
শিক্ষকতা পেশাটা যে সকল পেশার মধ্যে উঁচু, সে কথা কি বলার প্রয়োজন আছে?আর এমন চলতে থাকলে মধ্যম মানের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষক হতে চাইবে না!তখন কি হবে ভাবুনতো?
বাকি দায়িত্বটা কার, পরিবারের?কিন্তু পরিবার স্কুলে পাঠিয়ে বা বড়জোর এক/দুইজন গৃহশিক্ষক দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করে।
তাই আমাদের কি করতে হবে?হয় কিছুই না করে এক একটা অরিত্রী মারা পরবে আর আমরা স্রোতে গা ভাসিয়ে, শিক্ষকদের মুন্ডুপাত করে বিচার চাইবো!
নয়তো আমাদের শিক্ষার্থীকে শেখাতে হবে,বাবু শিক্ষকেরা অনেক খারাপ!এরা তোমাকে শুধুশুধু বকা দিবে,হয়তো মারবে।তোমার ভুলের জন্য আমাদের অপমান করবে।কিন্তু তুমি দমে যাবে না।তুমি-আমি মিলে ঘুরে দাড়াবো, পরেরবার ঐ পচা শিক্ষকটিকে দেখিয়ে দিবো, আমি আগেরবার ভুল করেছি আর করবো না।আর স্কুলের কঠিন নিয়মগুলিকে মানতে হবে।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি স্রোতে গা ভাসাবেন ?নাকি নিজের দায়িত্ব পালন করবেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২