লেবু বলতেই টক। লেবুর ব্যবহার তার টক রসের জন্যই। কমবেশি সবার কাছেই টক প্রিয়। বিশেষ করে রান্না অথবা সুস্বাধু খাবারে লেবুর ব্যবহার করা হয় খাবারের স্বাদকে বাড়ানোর জন্য। চিকিৎসকের মতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাবারে অথবা রান্নায় লেবু খুব স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারী। আমরা প্রতেক্যেই কমবেশি লেবু পছন্দ করি তার টক স্বাদের জন্য। জেনে অবাক হবেন এই টকেই রয়েছে আশ্চার্যকরী ক্ষমতা। প্রতিদিন খাবারের তাকিলায় লেবু রাখুন। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও সাইট্রিক এসিড মানবদেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর অভাবে হয়ে থাকে নানাবিধ রোগ ও সমস্যা। চল্লিশ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড পাওয়া যায় একটি মধ্যম আকৃতির লেবু থেকে যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।
আসুন নিচে জেনে নেই লেবু প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে আপনার যেসকল রোগ এবং সমস্যাঃ
পাথুরী রোগ: প্রসাব করার সময় অথবা সহবাসের সময় লিঙ্গের গোড়ায় ব্যাথা বা জ্বালাপোড়া। প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা রক্ত যাওয়া। প্রসাব থেমে থেমে যাওয়া এই সকল পাথুরী রোগের লক্ষণ। এই রোগ প্রতিহত করে লেবু। লেবুতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম নির্গমন কমিয়ে দিয়ে পাথুরী রোগ প্রতিহত করতে পারে।
ব্রণ, ত্বকের কালো দাগ: পুরুষের তুলনায় অধিকাংশ মহিলারা তাদের ত্বক নিয়ে চিন্তিত। ত্বকের মতো সমস্যারও সমাধান রয়েছে লেবুতে। হজমের গোলমাল, সুরাপান, বয়ঃসন্ধিকালে কিংবা লোমের গোড়ায় জমে থাকা জীবাণু অথবা অন্যান্য কারণে অনেকের মুখে ব্রণ হয়। এই লেবুর রসে থাকা এসিড ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। লেবুর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আপনার ব্রণ দূর করে ত্বকে লাবণ্য ফিরিয়ে আনবে। মধুতে বিদ্যমান অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক সংক্রমণ এবং ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া নারী পুরুষ উভয়ের জন্য কার্যকরী। তাছাড়া ত্বকের কালো দাগ বা বয়সের কারণে যে দাগ পড়ে তা দূরীকরণে লেবুর রস অনেকটা কার্যকরী।
কাটা, আঘাত ও ঘা: আমাদের শরীরে আঘাত, কাটাছেঁড়া প্রতিনিয়ত ঘটছেই। আমরা কি জানি লেবুর ভূমিকা কাটা, আঘাত ও ঘা শুকাতে কতটা কার্যকরী? শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত হলে দ্রুতগতিতে লেবুতে থাকা কোলাজেন কোষ উপাদান তৈরি করে তাড়াতাড়ি কাটা বা ঘা শুকাতে সাহায্য করে। তাছাড়া ছোট কাটা বা আঘাতে লেবুর রসের ঘন পেস্ট লাগালে দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। লেবুতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল যা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংসের মাধ্যমে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া চিকিৎসকরা সবসময় অপারেশন বা কাটাছেঁড়ার পর কাটা স্থান তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য লেবু বা টক সম্বদ্ধ ফল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কিডনিজনিত সমস্যা, অস্থিসন্ধীর ব্যাথা বা বাত ও উচ্চরক্তচাপ: আজকাল কিডনিজনিত সমস্যায় অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে। সঠিক জ্ঞান ও নিয়ম না মানার কারণে কিডনিজনিত সমস্যায় খুব সহজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর সাথে বাতও। মানুষের শরীরে দুই ধরণের এসিড বিদ্যামন। একটি হলো অত্যাবশ্যাকীয় এমাইনো এসিড অন্যটি অনাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড। এই অনাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের মধ্যে পিউরিন একটি। কোষে বিদ্যমান এই পিউরন ভাঙনের ফলে ইউরিক এসিড তৈরি হয় যা রক্তে মিশে কিডনিতে পৌঁছিয়ে প্রসাবের সাথে বের হয়ে যায়। শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলেই ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি হয় তখন কিডনিজনিত সমস্যা, অস্থিসন্ধীতে ব্যাথা বা বাত ও রক্তচাপ ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। আর লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে।
অতিরিক্ত ওজন এবং পেটের মেদ: অতিরিক্ত ওজন ও মেদ নিয়ে আমাদের আর ভাবতে হবে না। প্রাকৃতিক ভাবে সমাধান একটা ছোট লেবুতেই। লেবুতে থাকা পলিফেনল যা শরীরে মেদকে নষ্ট করে জমাট আটকে দেয় এবং ওজন বৃদ্ধি বন্ধ করে। তাছাড়া লেবুর খোসাও ওজন বন্ধ করতে সাহায্য করে। লবুর খোসাতে পেকটিন রয়েছে যা পেটের শর্করা শোষণ করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই আর ওজন নিয়ে ভাবনা নয়।
তৃষ্ণা নিবারণ ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ: যখন কাঠফাটা রোদে খুব তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে যাই তখনি তাজা লেবুর রস দিয়ে সাথে চিনি বা মধুর সংমিশ্রণ করে পান করলে মধু এবং লেবুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদানে পূর্ণ লেবু ওজন কমাতেও বেশ কার্যকরী। এবং তৃষ্ণা মিটিয়ে একই সাথে শরীরে ক্ষয়প্রাপ্ত শক্তি পুনরায় পূরণ হয়।
ঠাণ্ডা, সর্দি কাশি, স্বরভঙ্গ, সর্দি, জ্বর ও গায়ে ব্যথা: লেবু ইনফ্লুয়েঞ্জার সমস্যা কমাতে কাজ করে। গরম পানিতে লেবু আর মধুর সংমিশ্রণ করে গুলিয়ে খেলে ঠাণ্ডা, সর্দি কাশি, স্বরভঙ্গ, সর্দি, জ্বর ও গায়ে ব্যথা ভালো হয়।
ক্যান্সার ও হৃদরোগ: ক্যন্সার ও হৃদরোগ নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কায় থাকি। কিন্তু চাইলে এর বিরুদ্ধে আগেই প্রতিরক্ষা করা সম্ভব। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। এর মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। লেবুর খোসার ভেতরের অংশে ‘রুটিন’ নামের বিশেষ ফ্ল্যাভানয়েড উপাদান আছে যা শিরা এবং রক্তজালিকার প্রাচীরকে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সুরক্ষা দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমিয়ে দেয়।
ডায়বেটিস: ডায়বেটিস রোগিদের খাবার তালিকায় দৈনিক লেবু থাকাটা জরুরী। লেবু ডায়বেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪০