রিমি খুব চঞ্চল একটি মেয়ে। সবার কাছে আদুরী। সবাই তাকে আদর করে কত্ত উপহার দেয়। এইতো কদিন আগেও রিমি ফার্স্ট হয়ে ক্লাস থ্রিতে উঠেছে জানতে পেরে রিমির চাচ্চু ইটালি থেকে কলম পাঠায়। আর মোবাইলে কল দিয়ে রিমিকে জানিয়ে দেয়, এটা কোন সাধারণ কলম না এই কলম দিয়ে রিমি লেখে যা চাইবে তাই পেয়ে যাবে—তবে তার জন্য তাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। রিমি মনে মনে খুব খুশি হয় এবং কলমটি দিয়ে লেখে— ‘আমাকে চকলেট ফ্লেবারের কোন আইসক্রিম দাও।’ কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। কোথায় কোন আইসক্রিমতো আসছে না। রিমি আবার লেখে। তারপর ফ্রিজ খুলে গিয়ে দেখে কোন আইক্রিম নেই। চাচ্চু বলেছিলো অপেক্ষা করতে। রিমি গালে হাত দিয়ে চাচ্চুর উপর রাগ চেপে মুখ গোমড়া করে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। এমন সময় দড়জায় কলিংবেল বাজতেই রিমি দৌড়ে গেল। গিয়ে দেখে তার বাবা অফিস থেকে এসেছে। বাবাকে দেখা মাত্রই চাচ্চুর নামে অভিযোগ, ‘‘জানো বাবা চাচ্চু আমাকে মিথ্যে বলেছে। বলেছিলো এই কলম দিয়ে নাকি যা লেখবো সত্যি হয়ে যাবে, হলো নাতো।’’ ‘‘তুমি কী লেখেছিলে আম্মু?’’ ‘‘আমি লেখেছিলাম যাতে এখন আমি চকলেট ফ্লেবারের কোন আইসক্রিম খেতে পারি।’’ ‘‘এই নাও আম্মু তোমার আইসক্রিম। চাচ্চু মিথ্যা বলেনি। যাও খেয়ে পড়তে বোসো।’’
তারপর ছোট রিমি একে একে নানা কিছু লেখতে থাকে এই জাদু কলম দিয়ে। সবি সত্যি হয়ে যায়। রিমি কাগজে লেখেছিলো সে যেন ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হয়। সত্যিই হয়ে গেল। রিমি এভাবে যা যা চাইতো পেয়ে যেত। এভাবে ক্লাসের সবার চেয়ে রিমি এগিয়ে যায়। বাসায় আব্বু আম্মুর কাছেও রিমি বেষ্ট হয়ে যায়। রিমি সেই জাদু কলম দিয়ে লেখেছিলো, ‘‘আব্বু-আম্মু, চাচ্চু, স্যার, ম্যাডাম, বন্ধুরা সবাই যেন আমাকে অনেক আদর করে।’’ রিমি এই কলম ছাড়া নিজে থেকে একটি কাজও করতে পারতো না।
একদিন বিকেলবেলা রিমি তার বাবার সাথে খুব রাগ করে নিজের পড়ার টেবিলে এসে জাদু কলমটা হাতে নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে স্কুলের হোম ওয়ার্ক খাতা থেকে একটি কাগজ ছিড়ে লেখে, ‘আমি আমার বাবাকে ঘৃণা করি, বাবা আমাকে কতো বকেছে।’ তারপর থেকেই রিমির সাথে তার বাবার খুব মনমালিন্য। কথায় কথায় রিমি সাথে তার বাবার ভীষণ ঝগড়া হয়। রিমিও ইদানিং তার বাবাকে সহ্য করতে পারে না, বাবা কেমন যেন হয়ে গেছে। একদিন রিমি তার মার সাথেও রাগ করে তার ছোট ডাইরিতে লেখে ফেলছে, ‘আম্মুও খুব পচা। আম্মুও এখন আর আমাকে ভালবাসে না।’
রিমি খুব একা হয়ে যায়। তার বাবা-মা কেউই এখন তাকে আগের মতো ভালোবাসে না। রিমি মনে মনে খুব কষ্ট পায় এবং অনেক একা হয়ে যায়। সারাদিন তার মন খারাপ থাকে। আগে তার আব্বু-আম্মুর সাথে মন খারাপ থাকলে খেলতো। এখনতো তাকে কেউ আদর করে না। সব হয়েছে এই কলমটির জন্য। রিমি খুব কান্না করে। এখন সে আর এই কলম চায় না। সব যেন আগের মতো হয়ে যায়। রিমির খুব রাগ হয়—জাদু কলমটি সে রান্নাঘরে গিয়ে চুলোর উপর ধরে পুড়িয়ে ফেলে। সে খেয়াল করেছিলো কলমটি পোড়ার সময় রংধনুর মতো সাত রং জ্বলজ্বল করছিলো। জাদু কলমটি পুড়িয়ে ফেলার পর থেকে সব আগের মতো হয়ে যায়। সবাই তাকে আগের মতো আদর করতে শুরু করে, মাঝেমাঝে বকে। তবে এই নিয়ে রিমি আর রাগ করে না। কারণ সে জানে—তারাই বকবে আবার তারাই আদর করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৫