শিরোনাম পড়ে এখনই খুশি হবার কোনো কারণ নাই। কারণ মোবাইল চার্জের এসব উপায় এখনই মিলছে না । অদূর কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে মিলবে। তাই পড়ে সময় নষ্ট করতে চাইলে করতে পারেন।
শব্দ থেকে মোবাইল চার্জ : দৈনন্দিন জীবনে আশেপাশে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেসব শব্দ থেকেই চার্জ হবে মোবাইল। যেমন- গাড়ির হর্ন, গান-বাজনা, এমনকি নিজের গলার আওয়াজেও চার্জ করা যাবে মোবাইল ফোন। এজন্য মোবাইলের অভ্যন্তরে ব্যবহার করার জন্য নকিয়া ও কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ন্যানো জেনারেটর। এতে ব্যবহার করা হয়েছে জিঙ্ক অক্সাইডের মত উপাদান। এর মাধ্যমে জিঙ্ক অক্সাইড থেকে তৈরি ন্যানোরড শব্দ তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তরিত করবে। আর দৈনন্দিন শব্দের ফলে তৈরি হওয়া ভোল্টেজ ব্যবহার করে চার্জ হবে মোবাইল ফোন। ন্যানো জেনারেটর ৫ ভোল্ট করে বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম, যা একটি মোবাইল চার্জ করতে যথেষ্ট। মোবাইলের অভ্যন্তরে ব্যবহারের এই প্রযুক্তিটি নিয়ে মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন সাড়া দেয়, সেটারও ওপর নির্ভর করছে আগামীতে এই প্রযুক্তিটির সম্ভ্যাবতা।
ঘাম থেকে মোবাইল চার্জ : শরীরের ঘাম থেকে চার্জ হবে মোবাইল ফোন। এক ধরনের বিশেষ ট্যাটুর মাধ্যমে শরীরের ঘাম থেকে মোবাইল ফোন চার্জের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁরা এমন একটি ট্যাটু বানিয়েছেন যেটি শরীরে লাগানো থাকলে ঘাম থেকে চার্জ নিতে পারবে মোবাইল ফোন। এজন্য তারা আপাতত একটি অস্থায়ী ট্যাটো সেন্সর বানিয়েছেন যেটি শরীরের ঘাম এবং রক্তের ধারা থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিডের রাসায়নিক লবণ সংগ্রহ করবে। এরপর এটি ল্যাকটিক অ্যাসিড থেকে ইলেকট্রনগুলোকে আলাদা করবে যা মোবাইলকে চার্জ করতে পারবে। গবেষক দলটি ট্যাটু সেন্সরটিতে একটি বায়ু ব্যাটারি বানিয়েছেন যা কিছুটা বিদ্যুৎ জমা করে রাখতে পারবে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান জোসেফ ওয়াং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু কাজ করতে পেরেছি তাতে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ অনেক কম, মাত্র চার মাইক্রোওয়াট। তবে এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই এর মাধ্যমে ছোট ছোট ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস চার্জ করার মত শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব হবে।’
সূর্যের আলো থেকে মোবাইল চার্জ : রোদের মধ্যে মোবাইলের স্ক্রিন টাকে কিছুক্ষণ ধরলেই সূর্যের আলোতেই দ্রুত চার্জ হয়ে যাবে মোবাইলের ব্যাটারি। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমনই একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। এজন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন প্রায় স্বচ্ছ একটি সোলার পাওয়ার কালেক্টর তৈরি করতে, যা ভবিষ্যতে মোবাইল চার্জ দিতে ব্যবহৃত হবে। লুমিনিসেন্ট সোলার কালেক্টিং ম্যাটেরিয়ালস বা সংক্ষেপে এলএসসি হচ্ছে একটি সস্তা প্লাস্টিকের পাত যা আলো শোষণ করতে সক্ষম। এলএসসি আলো শোষণ করে শক্তি রূপে সেই আলো নির্গত করতে পারে। এলএসসি-এর এই ক্ষমতাকেই কাজে লাগাতে চাইছেন গবেষকরা। মোবাইলের স্ক্রিন যদি স্বচ্ছ এলএসসি দিয়ে তৈরি করা যায় তাহলে এটি সহজেই সৌরশক্তি শোষণ করে তাকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারবে। এই শক্তি ফোনের ব্যাটারি চার্জ দিতে কাজে লাগবে।
মূত্র থেকে মোবাইল চার্জ : ব্রিটেনের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি আর রোবোটিক ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা প্রস্রাব বা মূত্র দিয়ে মোবাইল ফোন চার্জ করতে সমর্থ হয়েছেন, যেটা দিয়ে স্বল্প পরিসরে খুদে বার্তা পাঠানো, ইন্টারনেটে ব্রাউজিং এবং সংক্ষিপ্ত কল করা গেছে। বিজ্ঞানীরা কার্বন ফাইবার অ্যানোডের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিয়ে সেগুলোকে সিরামিকের তৈরি একটা সিলিন্ডারে রেখে দেন। এরপর সেখানে মূত্র প্রবেশ করালে ব্যাকটেরিয়া মূত্রের মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো ভেঙে ফেলে। এ সময় যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সেটা ক্যাপাসিটরে জমা করা হয়। আর তার মাধ্যমেই এটা পরবর্তীতে অনেকটা ব্যাটারির মত কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে একটি ফোনসেট পুরো চার্জ করা সহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত অন্য যে কোনো ইলেকট্রনিক গেজেটে চার্জ দেয়ার মত পদ্ধতিও বের করা সম্ভব হবে এই ভাবে।
বাতাস থেকে মোবাইল চার্জ : বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোবাইল চার্জ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস আরলিংটনের ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা। এজন্য অতিক্ষুদ্র বায়ুকল তৈরি করা হয়েছে, যেটির সাহায্যে বাতাসের শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তিত করে মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ করা যাবে। এসব বায়ুকল এতটাই ক্ষুদ্র যে, চালের একটি দানার ওপর এ রকম দশটি বায়ুকল অনায়াসেই রাখা যাবে। ছোট একটি ইলেকট্রিক ডিভাইসে এরকম কয়েকশত বায়ুকল যুক্ত থাকবে, আর ডিভাইসটি যুক্ত থাকবে মোবাইলের সঙ্গে। মোবাইলটি বাতাসে নাড়ালে বা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে এমন কোথাও, যেমন- জানালার কাছে বা রুমে ফ্যান চালু অবস্থায় টেবিলের ওপর মোবাইলটি রেখে দিলে বাতাসের প্রভাবে অতিক্ষুদ্র বায়ুকলগুলোর পাখা ঘুরতে থাকবে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ হতে থাকবে। ডিভাইসটি আরো পরীক্ষা নীরিক্ষার পর বাজারজাত করা হবে বলে।
বজ্রপাত থেকে মোবাইল চার্জ : বজ্রপাত থেকে পাওয়া শক্তি ব্যবহার করে সেটি দিয়ে মোবাইল ফোন চার্জ করার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে নকিয়া এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের গবেষকরা। ইতিমধ্যে এর পরীক্ষামূলক সফল কার্যক্রমও করা হয়েছে। বজ্র থেকে বিদ্যুৎ আহরণের পরীক্ষায় গবেষকরা গবেষণাগারে ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে তৈরি করেন দুই লাখ ভোল্টের ১২ ইঞ্চি ব্যাপী কৃত্রিম বজ্র এবং নকিয়া ফোন এ বিক্ষপ্তি কণাকে শৃক্সক্ষলাবদ্ধ করে ব্যাটারি চার্জ করতে সক্ষম হয়েছে। কম বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত এলাকায় বজ্রপাত ব্যবহারে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ করলে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। এই ধরনের প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিদ্যুতের ব্যবহারকে ইতিবাচক হিসেবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভবিষ্যতের জন্য এ প্রযুক্তি আশাব্যঞ্জক হলেও এখনই এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে গবেষণা করতে নিরুৎসাহিত করেছেন গবেষকরা। কারণ যথাযথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া বজ্রপাত খুবই বিপজ্জনক ও প্রাণহানীকর।
পানি থেকে মোবাইল চার্জ : মোবাইলের প্রধান শক্রু পানি হলেও, পানিই বাঁচাবে মোবাইলের প্রাণ। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রযুক্তি গবেষকরা পানি থেকে মোবাইল চার্জ দেওয়ার উপায় নিয়ে কাজ করছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনো বস্তুর পৃষ্ঠদেশ থেকে সজোরে প্রক্ষিপ্ত হওয়া পানির ফোঁটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেটের মত ডিভাইসগুলো চার্জ করা যাবে। গবেষকরা বর্তমানে এ বিষয়ে নানা মাত্রার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাস্তব হলেও হতে পারে।
বালি থেকে মোবাইল চার্জ : বালির থেকেও চার্জ করা যাবে মোবাইলের ব্যাটারি। বালিতে সিলিকন থাকে, যা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চার্জ করতে কার্যকরি। তবে এক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাটারির পক্ষে বেশি পরিমাণ পরিমাণে সিলিকন তৈরি করাটা সম্ভব নয় এবং এর গুণগত মানও খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক গ্র্যাডস্টুডেন্ট জাকারি ফেভার্স মোবাইলের জন্য সিলিকন প্রোটোটাইপ ব্যাটারি তৈরি করেছে। এই ব্যাটারি বালিতে রাখলে তা চার্জ হবে এবং বর্তমানে মোবাইলে ব্যবহৃত ব্যাটারির থেকে তিনগুণ বেশি সময় পর্যন্ত কাজ করবে বলে দাবী করেছে জাকারি ফেভার্স।
সিগারেটের ফিল্টার থেকে মোবাইলে চার্জ : সিগারেট টেনে ফিল্টার এখানে-সেখানে ফেলে দেন অনেকেই। আর এই ফেলে দেওয়া এই সিগারেটের ফিল্টারকে কাজে লাগিয়ে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার উপযোগী উপাদানে রূপান্তর করতে কাজ করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকেরা। সিগারেটের ফিল্টার সুপারক্যাপাসিটরের ইলেকট্রোডে কোটিং হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে এমন উপাদান রয়েছে, যা থেকে বিদ্যুৎশক্তি ধরে রাখার উপযোগী উপাদান তৈরি করা সম্ভব। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জংহপ ইয়ি বলেন, ব্যবহৃত সিগারেটের ফিল্টারকে সাধারণ একটি প্রক্রিয়াতেই উচ্চক্ষমতার কার্বনভিত্তিক উপাদানে পরিণত করা যায়।
মাইক্রোওয়েভ থেকে মোবাইল চার্জ : জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ওশিহিরো কাওয়াহারা ও তাঁর দল খাবার গরম করার মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে মোবাইল চার্জ দেওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। গবেষকরা জানান, মাইক্রোওয়েভ যখন খাবার গরম করার কাজে ব্যবহার করা হয় তখন অনেক শক্তি কাজে লাগে না। আর এ শক্তিকে মোবাইলের ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার জন্য বিশেষ যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। যন্ত্রটিতে অ্যানটেনা থাকবে, যা মাইক্রোয়েভের অতিরিক্ত শক্তি সংগ্রহ করবে এবং মোবাইলের চার্জার হিসেবে কাজ করতে পারবে। এই প্রক্রিয়াটি এখনও উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে হয়ত মিলবে।
চিনি থেকে মোবাইল চার্জ : চিনি দিয়ে চলবে মোবাইল। ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা চিনির রস ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের বায়ো ব্যাটারি তৈরি করেছেন। এই ব্যাটারি একই ওজনের লিথিয়াম ব্যাটারির তুলনায় দশগুণ ভাল কাজ করতে পারে বলে দাবী গবেষকদের। ব্যাটারিটির শক্তি সঞ্চয়কারী ঘনত্ব ৫৯৬ অ্যাম্পিয়াম প্রতি ঘণ্টা। এই নতুন ব্যাটারিতে রয়েছে ইলেক্ট্রো বায়ো-কেমিক্যাল যন্ত্রাংশ, যা চিনির রস থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করবে। অর্থাৎ চিনির রস থেকে প্রাপ্ত রাসায়নিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হবে।
হেডফোন থেকে মোবাইল চার্জ : সৌরশক্তিতে চলা হেডফোন দিয়েই চার্জ করা যাবে মোবাইল ফোন। এ ধরনের হেডফোন উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক অ্যান্ড্র অ্যান্ডারসন। ‘অনবিট’ নামের এই হোডফোনটির ব্যান্ডে বসানো হয়েছে বিশেষ নমনীয় সোলার সেল। এটি সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে সেটিকে চার্জে রূপান্তর করবে। আর সে চার্জটিই রূপান্তরিত হয়ে মোবাইল ফোনের চার্জ হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে হেডফোনের সঙ্গে যুক্ত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে জমা থাকবে চার্জ। শিগগিরই হেডফোনটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপদান করা হবে বলে জানা গেছে।
আঙুলের স্পর্শ থেকে মোবাইল চার্জ : টাচস্ক্রিন ফোনে মানুষের আঙুল ঘষার কারণে কিছু শক্তি উৎপন্ন হয় এবং এই শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর করে মোবাইল ফোনে চার্জ দেয়া যায় কিনা, তা নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্টের জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা। এই গবেষণা সফল হলে একদিকে যেমন স্মার্টফোনে চার্জ দেওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে, তেমনি সাশ্রয় হবে বিদ্যুৎও।
তথ্যসূত্র : বিভিন্ন ওয়েবসাইট
লেখাটি পূর্বে একটি মিডিয়ায় প্রকাশিত।