somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাজিদুল হাসান ইমন
আমি মাজিদুল হাসান ইমন । বরিশাল সরকারী বিএম কলেজে মার্কেটিং এ বিবিএ করছি । লেখালেখির অভ্যাস বা যোগ্যতা তেমন একটা নাই তবে আগ্রহ আছে অনেক । মৃত্যুর আগে পরিবার , সমাজ ও পৃথিবীবাসির জন্য কিছু করতে চাই । সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন।

অন্যরকম ঈদ-একটি নিম্ন মানের ছোট গল্প

০৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্যরকম ঈদ

মজিদ ৮ রাকাত নফল নামাজ মানত করে ছিল । কিন্তু খুশিতে সে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে ফেলল । সে একটু পরপরই আপন মনে " আলহামদুলিল্লাহ্‌ - আলহামদুলিল্লাহ্‌ " বলে উঠছে । খুশি খুশি মুখ নিয়ে সে সবাইকে সালাম দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে তার বাসার দিকে । মজিদের এত আনন্দের কারণ, আজ ঈদের চাঁদ দেখা যায় নাই , মানে কাল ঈদ হচ্ছে না । ঈদের আগে আরেকদিন সময় পাওয়া গেল ; ছেলে মেয়েদের জন্যে কিছু কেনার । কাল আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করেই দেবেন ।
মজিদ একজন রিক্সা চালক । তার নিজের রিক্সা নাই । রোজ ১৮০ টাকা ভাড়ায় হাফিজের গ্যারেজ থেকে রিক্সা নিয়ে চালায় । খাটতে পারলে ভাড়া দেবার পরও ২০০ টাকা থাকে । যে দিন কম হয় সেদিনও ১০০ টাকা থাকবেই । গত সপ্তাহ খানেক সে জ্বরে ভুগেছে । নইলে ছেলে মেয়েদের কেনাকাটা অনেক আগেই শেষ করে ফেলত । শহরের একটু বাইরে ভেরি বাঁধের বাইরে চরে তার বাসা । জোয়ারের সময় ওখানে যাবার রাস্তায় পানি হাঁটুরর উপরে উঠে যায় । রাস্তা নিচু হলেও তাদের বাসা যেখানে সে জায়গাটা বেশ উঁচুই বলা যায় । বছর খানেক হয় সে এখানে বাসা করেছে । এর মধ্যে আল্লাহর রহমতে একবারও পানি ঘরে ঢোকে নাই ।
মজিদের পরিবার বলতে তার দুই সন্তান আর সে নিজে । মেয়ে দিনা সামনের বছর ফোরে উঠবে । ছেলেটাকেও সামনের বছর ভর্তি করবে , মজিদ ইদানীং ছেলেটার নাম প্রায়ই মনে করতে পারে না ; এইযে এখনও মনে পরছে না ; খুবই অসস্থিকর । তাদের মা গত বছর গ্রামে থাকতে কি এক রোগে মারা গেল । বয়স থাকলেও মজিদ আর বিয়ে করবে না বলে ঠিক করেছে ।
ভেরি বাঁধের ছোট দোকানটায় দিনা তার ভাইকে নিয়ে বাবার জন্যে অপেক্ষা করছিল । মজিদ আস্তেই তারা দু’জন উঠে দাঁড়াল । দিনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু বলতে চায় , কিন্তু সাহস পাচ্ছে না ।
মজিদঃ কিছু বলবি ? [ সন্তানদের সাথে মজিদ যথাসম্ভব শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করে , এতে তাদের ভাষাও সুন্দর হবে ]
দিনাঃ ইছুফ মেয়ার খিদা লাগছে । একটা রুডি চায় ।
মজিদের এখন সব মনে পরছে । তার স্ত্রী ছেলের নাম রাখছিল ইউসুফ । ছেলে দেখতে অনেক সুন্দর তাই ইউসুফ নবীর নামে নাম ।
মজিদঃ রুডি কি? ক রুটি । আর তোমার ভাইর নাম ইউসুফ মিয়া । বল ভাইর নাম কি ?
দিনাঃ ইছুফ মেয়া ।
দোকানে বসে থাকা এক বুড়া ফিক করে হেসে দিল । মজিদের অনেক রাগ হলেও সে কিছু বলল না ।
ছোট হলেও দোকানটায় চা থেকে চাল সবই পাওয়া যায় । মজিদ ১ কেজি চাল , আধা কেজি আলু , ৫টাকার মরিচ আর একটা ৩ টাকার রুটি কিনে সন্তানদের নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল ।
বাসায় গিয়ে মজিদ রান্নার যোগাড় করতে বসল । দিনা আর ইউসুফ রুটি ভাগ করে খাচ্ছে ।
সন্তানদের নিয়ে রান্না শেষে ভাল , আলুভর্তা খেয়ে মজিদ শোবার যোগাড় করতে লাগল । ঘরে একটা ছোট চৌকি সেখানে দিনা আর তার ভাই গুমায় । মজিদ মেঝেতে ই ব্যবস্থা করে নেয় ।
মজিদ এশার নামাজ শেষ করে মেঝেতে পাটি বিছচ্ছে এমন সময় দিনা উঠে শোয়া ঠেকে উঠে বসল ।
মজিদঃ কিরে ? এখনও খুমাও নাই ?
দিনাঃ ইছুফরে ঈদে এক জোড়া স্যান্ডেল দিয়েন ।
মজিদঃ তোর কি লাগবে ?
দিনাঃ মেন্দির প্যাকেট দিয়েন একটা ।
মজিদঃ জামা লাগবে না ?
দিনাঃ পারবেন ?
মেয়ে বাবার আর্থিক সামর্থ্যের প্রতি সন্দেহ করছে ! মজিদ অবাক হল , রাগও হল একটু । কিন্তু একটু পরেই সে বুঝল , অভাবের ঘরে থাকতে থাকতে ছোট দিনাও আজ বাস্তবতা শিখে গেছে । মজিদের চোখে বিন্দু বিন্দু পানি জমতে লাগল । অন্ধকারে সে অশ্রু দিনা দেখল না । মজিদও অশ্রু থামাবার কোন চেষ্টাই করল না । দিনা আবার নীরবতা ভাঙ্গল ।
দিনাঃ আব্বা ?
মজিদ কোন উত্তর দিচ্ছে না । সে তার কান্নার শব্দ গোপন করতে ব্যস্ত । কিন্তু দিনা কিভাবে যেন টের পেয়ে গেল ।
দিনাঃ আব্বা আমনের কি শরীল খারাপ করছে ? কি হইছে ?
বলতে বলতে সে কেরোসিনের কপিটা জ্বালাল...
মজিদ খুবই অপ্রস্তুত অন্য দিন ফিরে দিনাকে ধমক দিল,
মজিদঃ ল্যাম জ্বালাইছ ক্যা? নিবা ।
দিনা সাথে সাথে কপি নিভিয়ে ফেলল ।
দিনাঃ আব্বা , আমার কিছু লাগবে না । খালি ইছুফের এক জোরা…
দিনার কথা থামিয়ে মজিদ বলে উঠল
মজিদঃ তোর লাগবে না মানে ? অবশ্য লাগবে । কতা বেশি হিকছ তুই । ঘুমা । [ রাগলে মজিদের শুদ্ধ বলার হুস থাকে না ]
মজিদ উঠে বাইরে ওজু করতে গেল , নামাজ পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে । তিনিই একটা ব্যবস্থা করে দেবে ।

পর দিন সকালে বাচ্চাদের জন্য রান্না করে মজিদ হাফিজের গ্যারেজের দিকে রওনা দিল । কাল সেহেরী খাওয়া হয় নি তার । তবুও সে রোজা ছারে নি ।
রিক্সা নিয়ে সে যখন বের হল তখন সকাল প্রায় ৮ টা । লঞ্চঘাটের দিকে যাচ্ছে সে , একটু পর লঞ্চ আসলে ওখানে একটা নিশ্চিত ট্রিপ পাবে এই আশায় । কিন্তু তার আগেই এক তরুণ তার দিকে হাত তুলে ইশারা করল ; তরুণের পাশে সুন্দরী এক তরুণী দাঁড়ানো । মনে হচ্ছে তারা স্বামী স্ত্রী ।
তরুনঃ চাচা , বিকাল পর্যন্ত ঘুরাবেন । পারবেন তো ?
মজিদঃ পারোন না পারোন আল্লাহর হাতে । উনি চাইলে পারমু , নাইলে পারমু ক্যামনে ?
তরুনঃ তা ঠিক , নিবেন কত ?
মজিদঃ ঈদের আগে ! দিয়েন বিবেক কইরা ।
তরুণ দম্পতী রিকশায় চাপিয়ে মজিদ প্যাডেল দেয়া শুরু করল ।
ঘণ্টা খানে চালানোর পরই মজিদ ক্লান্ত হয়ে পরল । এমনি তো রোজা , তার মধ্যে রোদের তাপও কম না ।
- চাচা , একটি নদীর দিক চলেন তো ।
মজিদ রিক্সা নিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছে । রিক্সায় তরুণ তরুণী নানা বিষয়ে আলাপ করছে , হাসছে , রাগ করছে । মজিদের হঠাত তার স্ত্রীর কথা মনে মনে পরল । তারও ঘোরার খুব সখ ছিল ।
আসবের দিকে মজিদ তাদের বাসায় নামিয়ে দিল । মজিদও মনে মনে খুশিই । অন্তত ২৫০ টাকা তো দেবেই । এতে ইউসুফের জুতা আর দিনার মেন্দি কেনা তো যাবেই । মজিদ বসে আছে বাসার সামনে , ছেলেটা টাকা আনতে বাসায় ভিতরে গেছে ।
তরুনঃ চাচা , খুচরা নাই । পুরোটাই রেখে দিন ।
বলতে বলতে ছেলেটি একটি ১০০০ তাকার নোট তার দিকে বারিয়ে দিল ।
মজিদ পুরই স্তব্ধ হয়ে গেল । সে নোটটা হাতে নিয়েই বলে উঠল আলহামদুলিল্লাহ্‌ । খুশি , অনেক খুশি । কথা গুল বলার সময় সে চকচকে নোট দিকে তাকিয়েই ছিল কিন্তু সে দেখতে পাচ্ছিল তার সন্তানদের ঈদ । সে রওনা করল মসজিদের দিক । আসরের নামাজের পর সে দিনার জন্য জামা , মেন্দি ; ইউসুফের জন্য জুতা আর জামা প্যান্ট । নিজে একটা লুঙ্গী কিনতে চেয়েছিল । কিন্তু তাইলে ঈদের দিনও ডাল , আলু ভর্তা খেতে হবে ভেবে তা আর কেনা হল না । সন্ধ্যায় ইফতারের পর কেজি খানে চাষের কৈ আর ১ কেজি পোলাওর চাল কেনে নিলো । ছেলে মেয়ে দুটি ভাল খাবার খায় না অনেক দিন ।

কাল ঈদ , মজিদ হাসি মুখে সন্তানদের সামনে বসে আছে । দিনা জামা পেয়ে খুবই খুশী । সে বার বার জামার উপরের প্রজাপতির দিক তাকিয়ে “ কি সুন্দর , কি সুন্দর” বলে উঠছে । ইউসুফ জুতা পরে গজরে বার বার চক্কর দিচ্ছে , তার মুখে মিচকি মাসি মাখা । মজিদ মুগ্ধ চোখে সন্তানের আনন্দ দেখছে । মজিদের চোখে পানি এসে যাচ্ছে । সে উঠে অজু করতে গেল । আল্লাহ্‌র কাছে সুক্রিয়া আদায়ের জন্য শোকরানা নামাজ পরবে সে । ভেরি বাঁধের উপরে এক দল ছেলে মেয়ে চ্যাঁচামেচি করছে । দিনা ও সে দিকে যাচ্ছে । তার ভাইও তার পিছন পিছন যাচ্ছে । ছেলে মেয়ে রা “ ঈদ ঈদ” বলে চেঁচাচ্ছে । কাল ঈদ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×