সিক্সটীন উইথ থার্টীন, অথবা ক্লাসনাইন উইথ ক্লাসসিক্স|
এসময়ে অল্পবিস্তর সবাই প্রেমে পড়ে| এবং এটাই হয় প্রথম প্রেম তবে সচরাচর এর ব্যাপ্তি ঘটেনা|
আজ বলতে বসেছি আমার গল্প..।
চট্টগ্রাম বন্দর থানার একটি আলীয়া মাদ্রাসায় দাখিল/মেট্রিক পর্যন্ত পড়েছি|
আমাদের জীবনযাপন স্কুল স্টুডেন্টদের চেয়ে খুব আলাদা ছিলনা| অবশ্য ছাত্রদের সাধা পান্জাবী-পায়জামা ও ক্লাস নাইন থেকে নেকাব সহ বোরকা ছিল ছাত্রীদের ইউনিফর্ম|
একৈ কক্ষের দুইপাশে ছাত্রছাত্রীদের একসাথে পাঠদান করা হতো, এবং ক্লাসে শিক্ষকের(স্যার/মেডাম/হুজুর) অনুপস্থিতিতে মেয়েরা আলাদা একটি রুমে(কমনরুম) অবস্থান করতো|
২০০৯সাল, ক্লাস নাইন এর ছাত্র আমি তখন|
মাদ্রাসা থেকে আমাদের বাসার দুরত্ব ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার| অধিকাংশ সহপাঠির বাসস্থান মাদ্রাসার পাশের এলাকায় হৌয়ার কারনে ওখানকার একটি কোচিং সেন্টারে বাংলা, ইংরেজী এবং সাইন্সের সাবজেক্ট গুলো পড়তে যেতাম প্রতিদিন বিকেলে| সেখানে খুব মজা করতাম টিচার ভাইয়াদের সাথে| আমাদের ব্যাচটিতে স্থানীয় গার্লসস্কুল সহ অন্যান্য স্কুলের স্টুডেন্টও ছিল| তাছাড়া আরেকটি রুমে ঐসময়ে ক্লাস সিক্সের একটি এইরকম কম্বাইন্ড ব্যাচ পড়ানো হতো|
এই ব্যাচ থেকেই কাহিনি শুরু...
একদিন অত্যাধিক দুষ্টুমির একপর্যায়ে সন্জয় স্যারের ব্যাত পড়লো পিঠে টাশ্ করে| সাথেসাথে ইশ্ শব্দ হলো ঐ ব্যাচে| তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিল আফসুস কারিনি! বলিউডের আয়েশা টাকিয়ার মত দেখতে (তখন ওয়ান্টেড ফিল্মটি মুক্তি পেয়েছিল।)|
হৃদয় মোচড় খেল তার মুখ টিপুনি হাসি দেখে| এরপর দিলের ব্যাথাটাই মুখ্য হয়ে রৈল অনেক্ষন|
ক্লাসমেট মিজানকে বল্লাম- পিচ্চিটা কে রে?
-আমাদের মাদ্রাসায় পড়ে| নাজমুলের বোন|
(নাজমুল একটি ক্যাডেট মাদ্রাসায় পড়ে| সে প্রথম কিছুদিন আমাদের সাথে কোচিং করেছিল)
পরদিন মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্সে অনেক্ষন নজর রেখেও দেখা না পেলে নাস্তা করানোর শর্তে মিজান দেখিয়ে দিল|
স্কার্ফ পেঁছিয়ে মুখটাকে এতটুকুন করে রাখলে কার সাধ্য একফলক দেখে চেনা?
এরপর থেকে কোচিংএ আমার দুষ্টুমির মাত্রা দশ পার্সেন্টে নেমে এল| সাধ্যমত হ্যান্ডসাম হয়ে নিয়মিত কোচিংএ গিয়ে পুরোটা সময় মাথা, চোখ ও চোখের মনি লেফ্ট-রাইট আপ-ডাউন করেই কাটাতাম|
মাদ্রাসায় এতবড় পরিসরে তাকে খেয়াল করাটা কিছুটা কঠিন ছিল| তবু কিছু কাজ এখানেও হতো|
যেমন, তাদের ক্লাসের জানালা বরাবর টিউবয়েল ছিল| ক্লাস চলাকালিন সময়ে মাজেমধ্যে একনাম্বার দেখিয়ে কলের গোড়ায় গিয়ে পোলাপানরে কল চেপে মানবসেবার সাথেসাথে জানালায় চোখ রেখে দিলের সেবা করতাম!
মাদ্রাসায় তাকে কাছ থেকে দেখার আরেকটি দুর্লব সুযোগ ছিল|
আমাদের ক্লাসরুম বরাবর পেছনে একটু পরিষ্কার খালি জায়গা ছিল| টিফিন ছুটিতে ছেলেরা সামনের মাঠে, আর ছোট মেয়েরা পেছনে খেলাধুলা করতো| সেও মাঝেমধ্যে এখানে আসতো| তাই নাস্তা করতে গেলেও দ্রুত ফিরে এইসময়টা ক্লাসরুমে অবস্থান করতাম|
এভাবেই কেটে গেল প্রায় ৫মাস| বার্ষিক পরীক্ষা আসন্ন|
তাকে বুঝে উঠতে পারিনি তখনো| আমাকে দেখে কখনো মুখ টিপে হাসে আবার কখনো চরম বিরক্ত ভাব নেয়|
কত অখাদ্য কবিতা আর চিঠি রচনা করে পড়ার টেবিলের পাশে রাখা রিসাইকেলবিন ভর্তী করেছি তার ইয়ত্তা নেই|
একদিন সে কোচিংএ আসেনি| পরদিন শুক্রবার, তাদের কলোনিতে গেলাম সাজ্জাদ(ক্লাসমেট)কে নিয়ে| এটা মাদ্রাসার কাছেই| বাসার সামনে দিয়ে কয়েক রাউন্ড দিলাম| দেখা পেলাম্না| পরদিন মাদ্রাসায় আসার পথে কথা বলার প্লান করলাম|
শনিবার সকালে ঔৎপাতলাম| দেখা হবে কিনা, কথা বলতে পারবো কিনা, সে কথা বলবে কিনা, কেউ দেখবে কিনা, শুরুটা কিভাবে করবো ইত্যাদী ভাবছি আর আড়াল হয়ে থেকে তার বের হৌয়ার প্রহর গুনছি| মাদ্রাসার সময় হয়ে গেছে ইতিমধ্যে!
অবশেষে বের হল সে| খুব দ্রুত হাঁটছে| দেরি হৌয়ায় একটা লাভ হলো রাস্তায় আর কোনো ষ্টুডেন্ট দেখা যচ্ছেনা|..
অনেকটা পথ প্রায় দৌড়ে কাছে গিয়ে বল্লাম- ফারিহা ক্যামন আছো?
-(দাঁড়িয়ে গিয়ে)হাসান ভাই আপনি এখানে কি করছেন?
-পিটি শুরু হয়ে গেছে, হাটতে থাকো| পোরশু কোচিংএ যাওনি কেন?
-আমি ওখানে আর পড়বোনা|
খালি রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পড়ে যেতে যেতে দাড়িয়ে গেলাম|
-আপনি মাদ্রাসায় যাবেন্না?
-তুমি যাও|
ভাবছি আমার কারনেই নাকি কোচিং ত্যাগ করছে সে| কিন্তু ভালৈ তো কথা বল্ল আমার সাথে!
এরপর তার রুপগুনের প্রশংসা করে একটা চিরকুট লিখে আশিক(ক্লাসমেট) এর মারফতে দিলাম|
আমার অনুপস্থিতিতে কাগজটি তার হাতে দিয়ে আশিক বলেছিল,
-এটা হাসান তোমাকে দিয়েছে।
-হাসান ভাইয়া?
-হাসান তো শুধু তোমার ভাইয়া হয়ে থাকতে চায়না!
কোন উত্তর পাইনি তার|
পরীক্ষার দশবারোদিন বাকি থাকায় পড়ায় মনোযোগ দিলাম..|
১০নভেম্বর পরীক্ষা শুরু|
প্রথম তিনদিনে এক পলকও দেখিনি| তেরো তারিখে তাড়াতাড়ি হল থেকে বের হয়েও দেখা পাইনি| চৌদ্দ তারিখে বাংলা পরীক্ষা ছিল| একঘন্টা আগে গিয়ে দেখা পেলাম|
আসিফ(ক্লাসমেট) একটুকরো কাগজে "kমন আছো? ১টু হাসো!" লিখে আমাকে দিয়ে বল্ল ফারিহাকে দিতে| ঔতপেতে থাকলাম কমনরুমের পাশে| হৃৎপিন্ড ধুপধুপ করছিল| দীর্ঘক্ষন পর বের হৌয়া মাত্র পাশে গিয়ে 'এটা ধরো' বলে হাতে গুজে দ্রুত প্রস্থান করলাম|
সাক্ষাৎহীন আবারো ৩দিন গেল|
পরীক্ষার পর একমাসেরও বেশি সময় মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে| তাই ভাবলাম প্রপোজটা পরীক্ষা থাকতেই করতে হবে!
বৃহস্পতিবার রাতে একটা প্রস্তাবপত্র লিখলাম| লাভগুরু তরুন(ক্লাসমেট) পড়ে বল্ল এত ছোটমেয়ে এত কঠিন ভাষা বুঝতে পারবেনা| তবু সময় সংকটের কারনে আর এডিট না করার সিদ্ধান্ত নিলাম|
২১তারিখ শনিবার|
সেদিন ছিল আমার ইংরেজী পরীক্ষা| আর তার ছিল শেষ পরীক্ষা, গনিত|
পরীক্ষার দেড়ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হয়ে আধাঘন্টায় নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে গেলাম|
দুরে অথচ এমন জায়গায় দাড়ালাম যেখান থেকে বাসার গেইট দেখা যায় এবং যেখানে সচরাচর মানুষজন চলাফেরা করে|
ক্ষনেক্ষনে পুরাতন সস্তা হাতঘড়িটা দর্শন করছিলাম আর ভাবছিলাম ব্যাটারি লো হয়ে গেল কিনা|
পরীক্ষা আরম্বের আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকি| আমার অগোচরে চলে গেলো কিনা সেটাও ভাবছি| সময় যত ঘনিয়ে আসছে এই সন্দেহটা ভিত্তি পাচ্ছে|
ঠিক সাত মিনিট আগে শুভ্রপরীর দেখা পেলাম| আজো বাতাসের গতিতে চলছে| একটা তিনপথের মোড়ে গিয়ে একসাথ হলাম|
-আজ তোমাদের কি পরীক্ষা?
-অংক| আপনার?
- আমার ইংরেজী| আচ্ছা, আমি কি তোমাকে ডিষ্টার্ভ করি?
-কৈ, কে বলেছে?
-কেউ বলেনি| তোমার ডিস্টার্ভ হচ্ছে কিনা জেনে নিলাম|
(কিছু পথ নিরবে)
-পরীক্ষার পর কোথাও যাচ্ছো তোমরা?
-(মুচকি হেসে)হুম, গ্রামের বাড়ি(সন্দিপ) যাবো|
-কতদিন থাকবে ওখানে?
-একসপ্তাহের মতো|
(কিছু পথ নিরবে হাটলাম)
-তোমার জন্য একটি কবিতা লিখেছি| নিবে?
(আরো কিছু পথ নিরবে মাদ্রাসার কাছাকাছি এসে আবার বল্লাম)
-কি, নিবেনা?
-(কপাল কুঁচকে)আপনি না দিলে নিব কি করে?
তাড়াতাড়ি হাতে দিয়ে বল্লাম- কাউকে কিন্তু দেখাবেনা প্লীজ!
'আচ্ছা' বলে হেসে সে চলে গেল| আমি দশ মিনিট দেরি করে পরীক্ষা হলে গেলাম|
মাদ্রাসা ছুটির আটদিন পর একদিন বিকেলে গিয়ে দেখলাম ব্যাটমিন্টন খেলছে বাসার সামনে| আমাকে দেখে বাসায় ডুকে পড়েছে| কিছুক্ষন পর ছাদে এক ঝলক দেখা দিয়ে পালিয়েছে|
এরপর ক্লাস শুরু হৌয়ার আগে পর্যন্ত পাঁচদিন গিয়ে একবারও দেখা পাইনি|
২০০৯সালের শুরুতে একটা ডায়েরী কিনেছিলাম| প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা লিখতাম বলে তারিখ গুলো সঠিকভাবে বলতে পেরেছি|
কিন্তু ২০১০এর গল্পে দিনতারিখ ঠিক বলতে পারবোনা| ক্রমানুসারে বর্ননা করতে পারবো শুধু|
প্রথম ক্লাসে রেজাল্ট দেয়া হলো| ৩৮শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯নং রোল পেলাম| তার রেজাল্টের খবর জানতে চাইলে 'জানিনা' বলে চলে গেল|
মনে হচ্ছে প্রপোজলেটারের রেজাল্ট ভালোনা| পরদিন থেকে নতুন ক্লাসরুমে ক্লাস শুরু হলো|
বেশকিছুদিন পর্যন্ত দুএকদিন পরপর একমুহুর্তের জন্য দুর থেকে দেখা পেতাম|
অপেক্ষা করছিলাম, কখন সে নিজে থেকে মত জানাবে|
আর অপেক্ষা সৈলনা| একদিন ছুটির পর রাস্তায় একা পেয়ে জিগ্গেশ করলাম- আমার চিঠির কোনো উত্তর দিবেনা?
হুট করে দাড়িয়ে আমার দিকে ফিরে অনেকটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো- দেখুন আর যদি আমাকে ডিস্টার্ভ করেছেন তো আম্মুকে বলে মাদ্রাসায় নালিশ করাবো!
ভিষনভাবে মাথা ঘুরছিল| হেলেদুলে কোনরকমে একটু এগিয়ে একটা টং দোকানের বেন্চে বসলাম|
এরপর থেকে মাদ্রাসায় অনিয়মীত হলাম| মাদ্রাসায় গেলেও পুরোটা সময় ক্লাসে থাকতাম| বন্ধুরা আশেপাশে ওকে দেখলেই আমাকে 'টাকিয়া' (আয়েশা টাকিয়া) বলে খোচাতো| পড়ালেখায় মনোযোগি হতে খুব চেষ্টা চালালাম| ধীরেধীরে অনেকটা কাটিয়ে উঠছিলাম|
ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে একদিন টিফিনের সময় চাপাকলের ওখানে ফ্রেন্ডরা দুষ্টুমি করছিলাম| মাদ্রাসার পেছনের দিকে টিচারদের কোয়াটার একটা বেড়া দিয়ে আড়াল করা ছিল| একটি পিচ্চি মেয়ে বেড়ার পেছন থেকে এসে আমাকে বল্ল- আপনাকে ডাকছে|
গিয়ে দেখি ফারিহা দাড়িয়ে|
'এটা রাখুন' বলে একটা কাগজের টুকরো আমার হাতে দিয়ে চলে গেল|
চিরকুটে লেখা ""আমাকে ভালোবাসেন জেনে ভালো লাগলো| আমারো আপনাকে ভালো লাগে| LOV U""
আবার নতুন করে নাচাচ্ছে নাকি তাও ভাবছি| কিন্তু তাকে তো সত্যি এখনো আমার ভালো লাগে!
তবুও সাবধান ছিলাম| আগের মতো পাগলামী প্রকাশ করলামনা|
কিন্তু তার আকর্ষনের কাছে হেরে গেলাম|
ঘনঘন আমার সামনে পড়তে লাগলো| টিফিন ছুটিতে পেছনের খেলার জায়গাটিতে ক্লাসটেনের জানালা বরাবর এসে দাড়াতো| তাকালেই চোখ টিপতো| জিহ্বা দেখিয়ে, ঠোট ডানেবাঁয়ে মুচড়িয়ে ভেংগাতো|
একদিন ক্লাস চলাকালিন সময়ে আমি কলে পানি খেতে গেলাম| তখনি সে স্কেল আনার অছিলায় কমনরুমে গেল| ফেরার পথে করিডোরে সামনাসামনি হলে সে এমনভাবে নিজের ঠোটে কামড় বসিয়ে স্কেল দিয়ে আমাকে পিটানো দেখালো মারাক্তক হাসি পেল| এ দৃশ্য জীবনে ভুলবোনা!
এসব কার্যকলাপে আমি আবার আগের মতো দুর্বল হয়ে গেলাম|
টিফিনে একেঅপরকে এটাসেটা কিনে দিতাম|
১৪ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা|
একটি কাঠের কলমে MGHখোদাই করে লিখে তাকে দিলাম|
সে একটুপর খাইরুল(ক্লাসমেট)এর হাতে একটি জেলপেন দিল আমাকে|
কিছুদিন পর দেখি সে আবার আগের মত আমাকে এড়িয়ে চলছে| পাশ দিয়ে ডাক দিলে ফিরেও তাকায়না|
একদিন সামনে দাড়ালাম,
বল্ল- আব্বু এখন বাসায়(উনি সৌদি প্রবাসী ছিলেন)
আরেকদিন বল্ল- ভাইয়া তাকিয়ে আছে|
মার্চমাস থেকে তাকে আর মাদ্রাসায় আসতে দেখছিনা|
তার বান্ধুবী থেকে জিগ্গেশ করলে বল্লো- সে আর এখানে পড়বেনা| তার ভাইয়ের সাথে(ঐ ক্যাডেট মাদ্রাসায়) পড়বে|
একদিন সে ও তার বাবাকে মাদ্রাসায় দেখলাম|
কতদিন বাসার সামনে ঘুরলাম, দেখা পাইনি|
একদিন মেইন গেটে ডুকে দেখি(নিচতলায়) তাদের দরজায় তালা|
তালা দেখতে দেখতে একদিন তালা ছাড়া দেখলাম|
দরজায় টোকা দিলে এক মধ্যবয়সী লোক দরজা খুল্ল|
-নাজমুল আছে?
-এ নামে তো কেউ নেই এখানে|
-এটা নাসির(ফারিহার বাবা) আংকেলদের বাসা না?
-ও আচ্ছা, আমরা এখানে কিছুদিন আগে নতুন উঠেছি|
-আগের ওনারা কোথায় বাসা নিয়েছে বলতে পারেন?
-তা ঠিক বলতে পারবোনা|
-ওনাদের কোনো ফোন নং আছে?
-আচ্ছা দাড়াও|(ভেতরে গেল)
কিছুক্ষন পর এসে বল্ল-
নাহ্, আসলে ওনাদের সাথে তো আমাদের পরিচয় নেই|
'আচ্ছা ঠিকাছে' বলে চলে এলাম|
ফারিহারা দুইবোন একভাই| বড় বোনের প্রেমের বিয়ে হয়েছিল|
ঐ কোচিংসেন্টারের অদুরে তার বাসা ছিল|
ইসমাইল(ক্লাসমেট) তার প্রতিবেশি ফারুক(ফারিহার তালতো ভাই) থেকে ফারিহাদের ফোন নং নিয়ে দিল|
কিন্তু ঐ নাম্বারে ফোন করলে কখনো ফারিহা ধরেনি|
একদিন মাদ্রাসা ছুটির পর রোড পার হৌয়ার সময় রিকশায় ফারিহা ও তার দুলাভাইকে যেতে দেখে শর্টকাট রাস্তা দিয়ে দ্রুত তার বোনের বাসার ওখানে গিয়ে সামনে থেকে দেখা পেলাম তার| সন্ধা পর্যন্ত আর বের হয়নি|
সে এখন লং বোরকা পরছে| বোরকার রং ও ধরন দেখে নিলাম যাতে তার মাদ্রাসায় গিয়ে তাকে চিন্হিত করা সহজ হয়|
মাদ্রাসাটির দুরত্ব আমার বাসা থেকে প্রায় দশকিলো| ঐ মাদ্রাসার পাশেই ছিল তানভীর(ক্লাসমেট) এর বাসা| এব্যাপারে তানভীর আমাকে যথেষ্ট সংগ দিয়েছে|
প্রথমদিন মিজানও গিয়েছিল|
মাদ্রাসার একটু সামনে একটা মার্কেটের দুতলায় অবস্থান করার সুন্দর ব্যাবস্থা ছিল| সেখান থেকে ক্লাসরুম গুলোর ভেতর পর্যন্ত দেখা যেত|
নেকাব পরা সত্বেও আগের মাদ্রাসায় থাকতে পরতো এমন একটা স্কার্ফ পরেছিল বলে খুব সহজেই তাকে চিনে নিলাম|
এদিকে হুট করে নাজমুলকে ইশারা করে দেখা করে ফেল্ল মিজান|
'বাসা কোথায়' এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ায় নাজমুলের সাথে আর কথা বাড়াইনি|
আরেকদিন তাদের পিছু নিয়ে বাসা চিনে এলাম|
মিজানদের পাশের বাসার একটি ছেলে(নাইম) ফারিহার ক্লাসমেট| তার থেকে জানতে পারলাম, আর কিছুদিন পর মাদ্রাসার নিয়মানুযায়ী সকল দাখিল পরীক্ষার্থিকে মাদ্রাসার প্রধান শাখায়(ঢাকা) থেকে পড়ালেখা করতে হবে|
নাজমুল কিছুদিন পর চলে যাচ্ছে সো এর আগে আর ওখানে গিয়ে লাভ নেই|
একদিন ক্লাসে মিজান ও সাজ্জাদ বল্লো, ফারিহার নাম্বার নিবি?
-ওদের নাম্বার আছে তো আমার কাছে|
-এটা ফারিহার পারসোনাল|
-ধুর যা!
এমন রক্ষনশীল পরিবার তাকে মোবাইল দিবে তা কল্পনাতীত| যেখানে বাসারটাও রিসিভ করতে পারেনা সে|
আগ্রহ না দেখিয়ে উল্টো ঝাড়ি দেয়াটা বন্ধুদয় ভালোভাবে নিতে পারেনি মনে হলো| কতটুকু আগ্রহ থাকলে এভাবে ঝাড়ি মারে মানুষ সে সম্পর্কে ধারনাই ছিলনা তাদের|
আমি অপেক্ষা করছিলাম তারা যেন আরোকিছু বিশ্বাসযগ্য কারন দর্শায়|
ছুটির পর বাসায় গিয়ে উভয়কে ফোন দিলাম| উভয়ে বল্লো, নাম্বার নিতে হলে আমাকে তাদের কলোনিতে যেতে হবে|
লান্চ করেই চলে গেলাম| একটি এয়ারটেল নাম্বার পেলাম| পরে জানলাম নাইম থেকে নাম্বারটি নেয়া হয়েছে| নাইমের সাথে কথা বলে জানলাম নাম্বারটি ওখানকার আরো কিছু ছেলের কাছে আছে, এবং এই নাম্বারের সব কল ফারিহা ই রিসিভ করে|
ছেলেটার কনফিডেন্স দেখে ফারিহা ই রিসিভ করবে ভেবে রাতে ফোন দিলাম| সেকেন্ড রিং এই রিসিভ হলো| একটি চিকন বালিকা কন্ঠ 'হ্যালো' বল্লো|
ফারিহার কন্ঠস্বর মোটা ছিল, রানীমুখার্জির মত| জিগ্গেশ করলাম- ফারিহা আছে?
-আমি ফারিহা, আপনি কে?
হয়তো তার বোন অথবা অন্য কেউ ধরেছে ভেবে লাইন কেটে দিলাম|
পরদিন নাইম বল্লো আরে এইটাই ফারিহা| ফোনে আপনি কন্ঠ চিনতে পারেননাই|
রাতে আবার ফোন দিলাম| রিং না পড়তেই রিসিভ|
-তুমি ফারিহা?
-হুম, আপনি?
-আমাকে চিনতে পারছোনা?
-না|
-তোমার বোন কোথায়?
-বাসায় আছে, কেন?
-ভাই কি করছে?
-পড়ছে।
-আংকেল বিদেশে চলে গেছে?
-তা তো অনেকদিন হয়েছে|
-আজ মাদ্রাসায় গিয়েছো?
-গেলাম ত|
-তুমি এখন ক্লাস সেভেনে না?
-সব তো ঠিকাছে ভাই| আপনি কে তা তো বল্লেন্না!
ধাক্কা খেয়ে কেটে দিলাম লাইন|
(এখানেই শেষ নয়। পরে জানতে পারলাম এই ফারিহার গ্রামের বাড়িও সন্দীপ)
পরদিন নাইমকে ধরলাম| ভাই এইএই ঘটনা|
-ঠিকৈ ত| তার ছোট একটা ভাই ও একটা বোন আছে| ভাইটা আমাদের মাদ্রাসায় ক্লাস ওয়ানে পড়ে|
-এদের বাসা কোথায়?
-ওমুকব্লকে নিজের বাড়িতে থাকে|
-পুরো নাম জানো?
-হুম, রাহমাতুন ফারিহা|
-ফারিহা কি দুইটা তোমাদের ক্লাসে?
-আরেকটা তো ইশরাত, ইশরাত ফারিহা|
কাহিনি এখন দিনের আলোর মত ফকফকা আমার কাছে|
ঐ শ্রেনীতে আগে থেকে এক ফারিহা থাকায় এখানকার ফারিহা সেখানে সেকেন্ড নামে অর্থাৎ ইশরাত বলে পরিচিতি পেয়েছে| আর এখানেই যত গন্ডগোল| তবু এই নাম্বার থেকে আমার ফারিহার খোবর নিতে সুবিধা হবে, তাই ছেলেটাকে নাম্বারের জন্য ধন্যবাদ দিলাম|
কিন্তু ততক্ষনে তুলকালাম হয়ে গেছে রাহমাতুনের ওদিকে| তার এক ফুফাতো ভাই তাকে খুব পছন্দ করতো| সে তার মা কে সব বলায় তার মা ভেবেছে আমিই তার ফুফাতো ভাই| তিনি ঐ ছেলেকে বাসায় ডেকে এসব জিগ্গেশ করলে নাম্বারটি নিয়ে ছেলেটি আমাকে খুজে বের করার চ্যালেন্জ করলো|
এসব জানার আগে সেদিন রাতে রাহমাতুনকে ফোন করে মিসটেকের কারন বলে ইশরাতের খবর জিগ্গেশ করলাম| তার কথা শুনে মনে হলোনা যে সে আমার কথা বিশ্বাস করেছে| বরং তার সন্দেহ হলো তার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ আছে| কারন 'নাম্বার কোথায় পেয়েছেন' এই প্রশ্নের বিশ্বাসযগ্য উত্তর দিতে পারিনি আমি|
পরদিন বিকেলে একটি টিএনটি নাম্বার থেকে ফোন এল| রিসিভ করে চুপ থাকলাম|
-(যুবক কন্ঠ) হ্যালো, আপনি কি রেজা? (রাহমাতুনকে আমার এই নাম বলেছিলাম)
-হ্যাঁ, কে বলছেন?
-আমি ফয়সাল, ফারিহার ফুফাতো ভাই|
কাহিনি আঁচ করতে পেরে লাইন কেটে দিলাম|
আবার কল এল,
-(আমি বল্লাম)ভাই আপনি কোন ফারিহার কথা বলছেন?
-যাকে আপনি ভালোবাসেন|
-(হাসি শুনিয়ে) আরে ভাই আমার তো প্রেম করার বয়স হয়নি এখনো|
-দেখুন, আপনি যদি ফারিহার সাথে প্রেম করতে চান তবে আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন| আমার কাছ থেকে সব রকম সাহায্য পাবেন|
আবার লাইন কেটে দিলাম|
কিছুক্ষন পর এয়ারটেল নাম্বার থেকে কল এল,
-হ্যালো!
-জি ভাই, এটা আমার পার্সোনাল নাম্বার| যেকোনো প্রয়োজনে ফোন করতে পারবেন|
-ও| আপনি কিসে পড়েন?
-আমি ওমুক মাদ্রাসায় পড়ি, ক্লাসটেনএ|
-আপনি তো আমার ক্লাসমেট|
আমিও আমার মাদ্রাসার নাম বল্লাম|
-ফারিহাকে পেলেন কি করে?
-তাকে পেলাম কৈ?
-মানে তাকে দেখেছেন এবং নাম্বার পেয়েছেন কোথায়|
-ও আচ্ছা, তাহলে সে আপনাকে ধরিয়েছে?
-সে আমাকে আপনার নাম্বার দিয়ে বলেছে আপনি কে, দেখতে ক্যামন, কি করেন, কোথায় থাকেন এসব তাকে জানাতে|
-জানালে?
-এসব জেনে সে হয়তো আপনার সাথে প্রেম করবে কিনা সিদ্ধান্ত নিবে|
-ও আচ্ছা, ঠিকাছে আপনার সাথে পরে কথা বলবো| এখন রাখি|
পরদিন সকালে ছেলেটা ফোন করলো,
-কি খবর রেজা ভাই?
-জি ভালো|
-চলেন আজ আমরা দেখা করি কোথাও|
-(মারবে-টারবে নাতো)বিকেলে অমুক স্থানে আসলে আমাকে পাবেন|
-ওকে বাই|
-বাই..
বিকেলে আড়াল থেকে নির্দিষ্ট স্থানে নজর রাখছিলাম| একটু পর আমার চেয়ে হ্যাংলা একটা ছেলে এসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে মোবাইল কানে ঠেকাতেই আমার ফোনে ভাইব্রেশন হলো| প্রায় বিশ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখে পরিস্থিতি অনুকুল নিশ্চিত হয়ে তবে সামনে গিয়ে দাড়ালাম|
-আপনি ফয়সাল?
-হ্যাঁ|
-আমি রেজা|
কথা বলতে বলতে রহমাতুনদের বাসা পর্যন্ত গিয়ে সহিসালামতে ফিরে এলাম|
ছেলেটার কার্যকলাপ দেখে মজা পাচ্ছিলাম| তাকে তখনো সত্যি ঘটনা বলিনি|
এদিকে ইশরাত যে জানেনা আমার আরেক নাম রেজা, তা আমি জানতামনা| তাই রাহমাতুনকে যতৈ ইশরাতের কথা বলি সে তার কিছু বলেনা|
কিছুদিন পর নাজমুল ঢাকা চলে গেল জানতে পেরে একদিন সকালসকাল ফারিহাদের বাসার আশেপাশে দাড়ালাম| তার মা পৌছে দিল তাকে মাদ্রাসায়| আবার ছুটির সময় গিয়ে নিয়ে আসলো|
এমন হলে তো অহেতুক দৃষ্টিতে পড়া ছাড়া আর কিছুই হবেনা| কারন নেকাব পরা থাকায় তার ফেইস দেখতে পারছিনা বহুদিন|
তবু কিছু করার নেই| এভাবেই কিছুদিন পরপর নিজেকে দেখাতে ও তার ছায়া দেখতে যেতাম|
একদিন বিকেলে তরুন ও মিজানকে নিয়ে তাদের বাসায় গেলাম| নাজমুলের নাম্বার চাওয়াটা ওছিলা হিসেবে নিলাম|
দরজায় টোকা দিলে ফারিহা দরজা খুল্ল|
আমি নিজেই থতমত খেয়ে গেলাম| এত সহজে দেখতে পাবো ভাবিনি|
'ক্যামন আছো' জিগ্গেশ করতেই দরজা বন্ধ করতে গেল সে| পা দিয়ে দরজায় ঠেক দিয়ে বল্লাম- হয়েছে কি?
দরজা ছেড়ে সে ভেতরে চলে গেল| কিছুক্ষন পর তার আপু এলে সালাম দিয়ে বল্লাম- আমরা নাজমুলের ফ্রেন্ড| ওর কন্ট্রাক্ট নাম্বার আছে?
'আচ্ছা দাড়াও' বলে তিনি ভেতরে গিয়ে একটা নাম্বার লেখা কাগজের টুকরো এনে দিয়ে বল্লেন- ওর কাছে তো মোবাইল নেই| এই নাম্বারে ফোন করলে ওকে পাওয়া যায়|
'থ্যাংস' বলে চলে এলাম|
এরপর একদিন ছুটির পর দেখলাম ফারিহা একাএকা বের হচ্ছে মাদ্রাসা থেকে| তার বাসা ও মাদ্রাসার দুরত্ব এককিলোর চেয়ে কম| রিকশায় চড়ার দরকার হয়না|
বাসা এত কাছে হৌয়ায় কথা বলার সুযোগ কম| আবার বেশি দুরে হলেতো মাদ্রাসা থেকে রিকশায় উঠে বাসায় নামতো|
তো সেদিন একটু দুরত্ব বজায় রেখে পেছনে হাটছি| কতটুকু যাবার পর সে পেছনে ফিরে আমাকে দেখতে পেল| গলিতে প্রবেশ করার পর পাশ দিয়ে হেটে বল্লাম, কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে কথা বলনা কেন?
সেদিন সে কিছু বলেনি| বাসায় ডুকে গেল|
পরদিন সকালে সে একা বের হয়েছে বাসা থেকে|
-তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা?
-বাসায় গিয়েছেন কেন?
-তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখছনা| তোমাকে কতদিন পর দেখলাম সেদিন!
-আর দেখা লাগবেনা|
প্রধান সড়ক আসায় আর কথা বলতে পারিনি|
সেদিন তার মা নিতে এসেছে|
পরদিন ছুটির পর একা পেলাম|
-আমাকে এভয়েড করার কারন জানতে পারি?
-(নিরবে হাঁটছে..)
-একটু আস্তে হাটো প্লীজ| আমাকে সরাসরি বলে দাও তুমি কি চাও|
-আমার আপনাকে কিছু বলার নেই|
(বাসা চলে এল)
ডিসেম্বরে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হল| পরীক্ষার পরদিন গিয়ে ছুটির পর পিছু নিয়ে দেখলাম বাসা চেন্জ করেছে আবার| এবারেরটা দুর হলেও একটা কলোনির ভেতর দিয়ে শর্টকাটে যাচ্ছে সে|
-বাসা চেন্জ হয়েছে আবার?
-কেউ দেখলে সমস্যা আছে| আপনি যান|
-সবাই চেনে তোমাকে?
-(দাড়িয়ে আংগুল তুলে)আপনি আর এক পা এগুলে আমি মানুষ ডাকবো!
পাস করলেও টেষ্ট পরীক্ষা খুবি খারাফ হয়েছে| এভাবে চলতে থাকলে ফাইনাল পরীক্ষায় ডাব্বা পেতে হবে| একসপ্তাহের মধ্যে এই দুটানা পরিস্থিতির অবসান চাই|
ফারিহা(রাহমাতুন) কোনটা, আমাকে দেখানোর জন্য একদিন ফয়সাল ছুটির সময় আমার সাথে ছিল| এ্যশ কালার বোরকা পরা একটা মেয়েকে দেখিয়ে বল্ল- ঐটা ফারিহা|
সেদিন ফয়সালকে সব সত্য ঘটনা বলে আশ্চার্য করে দিলাম|
এফোর সাইজের চার পাতায় আমি কখন কি করলাম, এই পর্যন্ত কিভাবে এলাম অর্থাৎ তার অনুপস্থিতীতে আমার সব কর্মকান্ড লিখলাম| শেষলাইন ছিল, "তোমাকে এতকিছু বলতে হবেনা| শুধু আমাকে বল, আমার দোষটা কি..।
একদিন ইসমাইল সংবাদ নিয়ে এলো সামনের শুক্রবার ভাগিনার আকিকা উপলক্ষে ফারিহা বোনের বাসায় আসবে।
সেই শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত (দুপুরে ১ঘন্টার জন্য বাসায় গিয়েছিলাম) চিঠিটি পকেটে নিয়ে তার বাসার সামনে অবস্থান করে মাত্র একবারের জন্য এক পলক দেখা পেয়েছিলাম।
এরোপর দুইদিনে চারধপা পেছনে ঘুরলাম| চিঠিটাও নিচ্ছেনা, কোনো কথারও জবাব দিচ্ছেনা| পড়ালেখা তো দুরে থাক ঘুম-খাওয়ারও ঠিক নেই আমার|
একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম| একটা অন্যায় করবো| নিজের ভালোর জন্য করবো| থাকবো নাহয় পাকবো| চিন্তামুক্ত হৌয়াটাই জুরুরী|
নিজেনিজে তরকো করছি-
-এটা ভালোবাসার অবমাননা|
-শুরুটা সে করেছে|
-সে এখন তোমায় ভালোবাসেনা|
-আমি কারনটা জানতে চাই|
-কোনো কারন নেই। / ওমুক কারনে|
-অকারনে আমাকে কষ্ট দেয়ার শাস্তি দিব| / কারনটি মিথ্যা হলে বুঝিয়ে বলবো, সত্য হলে ক্ষমা চাইবো, ক্ষমার অযগ্য হলে ফিরে আসবো|
এটা হবে আমাদের শেষ দেখা, অথব শুরু|
ভালোবাসি যাকে তার সাথে এমন আচরন করতে মন সায় দিচ্ছিলনা| কিন্তু আমি যদি পরীক্ষায় খারাফ করি তবে কে আমায় ভালোবাসবে?
একটা কয়েন নিয়ে টস করলাম| টস সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পক্ষে গেল|
সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছি| সকালে তার জন্য জমানো চিঠি ও তার দেয়া কলমটি নিয়ে কর্মস্থলে গেলাম|
কোথায় কতটুকু এলে কিভাবে কি করবো তার চক কষে রাস্তাটি মুখস্থ করে নিলাম|
দুপুরে এখানে তেমন মানুষ থাকেনা, সো ছুটির পর অপারেশন হবে|
এই মোড়ের দোকানদারটি অনেকবার আমাকে ফারিহার পিছু নিতে দেখেছে| একে ম্যানেজ করতে হবে কিভাবে তাও ভেবে নিলাম|
ক্ষনেক্ষনে বুকের দুপদুপানি বাড়ছে| তানভিরের হাত নিয়ে বুকের উপর ধরে বল্লাম- কি হচ্ছে?
-ঢোল বাজছে!
আজ কপালে যে কি অপমান আর অসম্মান আছে, আল্লামালুম|
ছুটির পর নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে পিছু নিলাম| দোকানটির কাছাকাছি আসতেই দ্রুত তাকে পাস করে তার সামনে হেটে দোকান পার হয়ে গলিতে ডুকে আবার তাকে সামনে দিলাম| কলোনির গেটে ডুকতেই পেছন থেকে দুই বাহু ধরে ঘুরিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বল্লাম- সমস্যা কি তোর এবার আমায় বল|
-ছাড়ুন বলছি, নয়তো চিতকার করবো|
মুখ থেকে নেকাব সরিয়ে দিয়ে বল্লাম- চিতকার করে বল এবার, কেন আমার সাথে এমন করছিশ?
-ছাড়ুন, নয়তো মামলা খাবেন|
-এখন না বল্লে এখনি তোদের বাসায় যাবো|
-আপনাকে কি বলেছি কি দিয়েছি, এসব ভাইয়াকে বলেছেন কেন? (পরে জেনেছি এটা মিজানের কাজ| সে ভেবেছিল এতে আমি আরো সুবিধা পাবো)
-(দুরে গিয়ে দাড়ালাম)তোমার ব্যাপারে নাজমুলের সাথে আমি কখনো কথা বলিনি| কেন এসব আমি তাকে বলতে যাবো? এটা বিশ্বাস করার আগে আমাকে জিগ্গেশ করতে পারতে!
-(কাদতে কাদতে) এজন্য বাসায় আমার গায়ে হাতও তুলেছে!
-বিশ্বাস কর ফারিহা| এমন কাজ আমি করিনি|
-(নেকাবের সিপ্টিপিন খুজছে) আর বিশ্বাস করাতে হবেনা| আপনি কি করতে পারেন তা এখন দেখিয়েছেন তো|
-তাহলে আর আমাকে ভালোবাসনা?
-(নেকাবে সিপ্টিপিন লাগাচ্ছে) তার তো প্রশ্নৈ আসেনা| বরং আপনার কি ক্ষতি করি দেখবেন!
-(চিঠি-কলম তার সামনে ছুড়ে ফেলে) "তবে ফেলে দিলাম সব স্মৃতি| আজ বিকেল থেকে সন্ধা পর্যন্ত তোমার বাসার সামনে থাকবো| কি দেখাবে দেখিও"- বলে চলে এলাম বাসায়|
বিকেলে তাদের বাসার সামনের দোকানে বসে সন্ধ্যা পর্যন্ত হেডফোনে গান শুনে কাটিয়ে এলাম|
পরদিন ছুটির সময় আবার গেলাম মাদ্রাসায়| ছুটির পর দেখলাম সে তার দুই বান্ধুবি(রাহমাতুন ও বিনতি)কে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে কথা বলছে আর হাসছে|
কিছুক্ষন পর আমি চলে গেলাম বাসায়|
চুল কেটে এসে গোসল করে ঘুম দিলাম|
ফাইনাল পরীক্ষার আর দুই মাস বাকি| বইপুস্তুক গুছিয়ে রুটিন তৈরী করে কোচিং শুরু করলাম|
যথারিতি পরীক্ষা এল| ফয়সাল ও আমার হল একৈ মাদ্রাসায় পড়ায় দেখা হতো| বিভিন্ন গল্প করতাম| এখন সে আমার ভালো বন্ধু|
পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে এক নামকরা কলেজে ভর্তী হলাম|
একদিন ফারিহা কল করে বল্ল- আপনার সাথে দেখা করবো| কাল এদিকে আসবেন?
-চেষ্টা করবো|
পরদিন মনে ছিলনা| দুপুরে এক কাজে দুরে গিয়েছিলাম| ফারিহা কল দিলে বল্লাম- আজ একটু কাজ ছিল| কাল আসবো?
-আপনাকে আর কখনো আসতে হবেনা| খোদা হাফেজ|
|সমাপ্ত|
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩