১। বাসার সামনের ফাকা যায়গায় বাগান করার শখ আমাদের। সেবারও বাগান করা হলো। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল বাগান। কি ফুল নেই? গাদা ডালিয়া গোলাপ সূর্যমুখী জিনিয়া বেলি জবা। সেবার ফুল একটু বেশীই ফুটেছিল। সবাই আমাদের বাড়িকে জান্নাতের বাড়ি বলতো। ফুল দেখে বিস্মিত হয়ে যেতো এতো ফুলও ফুটতে পারে!
২০ ফেব্রুয়ারি আছরের নামাজের পর থেকে আব্বা চেয়ার নিয়ে বাগানে অবস্থান নিলেন। একটু পরপর একটা করে গ্রুপ ফুল চুরি করতে আসে আর আব্বার বকা খেয়ে দৌড়ে পালায়। ভাই বোন সবাই মিলে ১২ পর্যন্ত জেগে থাকলাম। আব্বা ফজরের কাছাকাছি এলে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে ভেবে তাহাজ্জুত পড়তে ঘরে আসলেন। ফজরের আজান হলে নিশ্চিন্তে মসজিদে চলে গেলেন। এসে দেখলেন বাগানে একটা ফুলও নেই ! কি পরিমান ফুল ছিল তার একটা ধারনা দেই, শুধু ডালিয়া ছিল ৬০ টার উপরে!!
তারপর আর কি! সবাই মিলে একটু পরপর বাগানে যাই আর কাদি। আব্বা আম্মার কষ্টটাই ছিল বেশী। সন্তানের মতই বীজ থেকে আদর যত্ন করে লালন পালন করেছিলেন।
২। বাসার পাশের মাঠে কলা গাছ পুঁতে শহীদ মিনার বানানো হলো। সবাই মিলে সকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি হানা দিতে শুরু করলাম ফুলের সন্ধানে। ঝাড়ঝুপ, বাগান থেকে চেয়ে-চুয়ে ফুল এনে লতাপাতা মিলিয়ে মালা টালা বানিয়ে কলা গাছের গলায় ঝুলিয়ে দিতাম। তারপর পাশের গ্রামে দোড়ে যেতাম তাদের কলা গাছে ফুল কতগুলি জমেছে দেখার জন্য। চারপাশ থেকে ভেসে আসতো "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি " ভেসে আসতো। কেমন যেনো মুগ্ধতা ছিল সুরে, মায়ায় জরিয়ে সালাম রফিক জব্বার মনে ধারন করতে চাইতাম। ছেলেপিলে সবার মাঝে সাজসাজ রব পরে যেত দিবস উদযাপনের।
৩। বাংলা ভাষা মায়ের মুখের বোল। বাবার আদর শাসন, ভায়ের স্নেহ বোনের মমতা প্রিয়ার চিঠির পরতে পরতে লেখা থাকে অ আ ক খ। ভাষা কারো সম্পত্তি নয়। বাংলায় কথা বলে এমন সকলের ভাষার অধিকার। ভাষাকে যারা লালন করে বলে প্রচার করে তারাই ভাষার সর্বোচ্চ বিকৃতরুপ তরুণ সমাজে প্রচার প্রসার করছে। পরবর্তী প্রজন্ম ভাষার শুদ্ধরুপ শুধু বইয়ে পাবে। অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতে শিখছে প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।সমাজ যাঁদের মুল্ল্যা মুন্সি বলে টিটকারি দেয়, যাদের মনে করা হয় ভাষার শত্রু তারাই মনেপ্রাণে ধারন করে চলছে ভাষার অবিকৃতরুপ। আগামী প্রজন্মকে ভাষার শুদ্ধরুপ খুঁজতে বইয়ের পাশাপাশি এইসব মুল্ল্যা মুন্সীদের কাছেই আসতে হবে।
৪। সকালে ঘুম ভাংলো সানামরে গানের সুরে। অরিজিতের গাওয়া এইগানটা মার্কেটে খুব চলছে। দূরের কোন মাইক থেকে ভেসে আসছে এই সুর। সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়ক গান শুনার জন্য। এখন শুনা যাচ্ছে কিছুটা। কতক্ষণ চলবে কে জানে?
৫। হপ্তা খানিক আগের ঘটনা। দাদাগিরি, সৌরভ গাঙুলী পরিচালিত উভয় বাংলায় মোটামুটি জনিপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান। বাচ্চাদের একটা এপিসোড চলছে। প্রশ্ন আসলো আমরা কোন দিন কে ভাষা দিবস পালন করি? ২১ ফেব্রুয়ারি / ৪ মার্চ/ ৩ এপ্রিল। বাচ্চা উত্তর দিল ৪ মার্চ। সৌরভ গাঙুলী বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস পালন করা হয়!!!
বাংলা ভাষার জন্য বাংলাদেশিদের অবদান ইচ্ছাকৃত ভুলে গেলো কিনা কে জানে? ভুলতেও পারে! একান্ত কাছের বন্ধু বলে কথা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২০