______________________________________________________
জ্ঞানার্জনে পাঠের বিকল্প নেই। যে যত বেশি পড়বে সে তত শিখবে। জ্ঞানার্জনের যেমন কোনো বাঁধাধরা সময় নেই, তেমনি নেই দূরত্বের পরোয়া। ‘ইকরা’ শব্দ দিয়ে বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহ তায়ালা অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত কোরআন অধ্যয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) নিজে কোরআন অধ্যয়ন করতেন পাশাপাশি সব সাহাবা (রা.) কে শিখিয়েছেন। সাহাবারা এতবেশি কোরআন অধ্যয়ন করতেন যে প্রায়ই সারা রাত পার হয়ে ভোর হয়ে যেত। ইমাম মালেক (রা.) সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আছে যে, পাঠের নিমগ্নতায় বেখেয়ালে বাবার দেয়া এক গ্লাস কেরোসিন পান করেছিলেন অথচ উনি ধরতে পারেননি। বহুবিধ জ্ঞানার্জনের জন্য ইবনে বতুতা পৃথিবীব্যাপী চষে বেরিয়েছেন। মানুষের জানার, বোঝার ও শেখার কোনো সীমারেখা নেই, তেমনি পাঠের কোনো শেষ নেই। মানুষের দুই ধরনের ক্ষুধার সৃষ্টি হয়। একটি হলো দৈহিক ক্ষুধা, অন্যটি মানসিক ক্ষুধা। দৈহিক ক্ষুধার চাহিদা সাময়িক এবং সহজলভ্য। মানসিক ক্ষুধার চাহিদা এর সম্পূর্ণ উল্টো। এটা পূরণ করাও খুব কঠিন যেটা পাঠের মাধ্যমেই নিবারণ হয়। জানার জন্য পড়তে হবে। পড়ার মাধ্যমই বই। পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে যারা সফলতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত হয়েছে তাদের সফলতার মূলমন্ত্র ছিল অত্যধিক ও সঠিক পাঠ। পাঠের নিমগ্নতা তাদের কালজয়ী করে তুলেছে। বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পাঠে এতটাই নিমগ্ন থাকতেন যে, লাইব্রেরির কেয়ারটেকার প্রায়ই ভুলে উনাকে ভেতরে রেখেই তালাবদ্ধ করে চলে যেতেন! উনার অগাধ পা-িত্যের পেছনে একমাত্র অবদান ছিল অত্যধিক পাঠ। একটা ভালো বই আপনার জীবনকে আলোকময় করে তুলবে, যে আলোর ফোয়ারায় পৃথিবীর চারপাশ ঝলমল করে উঠবে। আবার একটা মন্দ বই আপনার বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে আপনাকে নিক্ষেপ করতে পারে পঙ্কিলতার অতল গহ্বরে। নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে আপনি হয়ে উঠবেন মানুষের পোশাকে একটা পশু মাত্র। বর্তমান সমাজে ধর্মহীনতার যে সয়লাব তার অন্যতম কারণ ভুল তত্ত্ব ও তথ্যে ভরপুর বইয়ের বিস্তৃতি। কাল্পনিক ও প্রমাণহীন তথ্যে ভরপুর বইকে সহজলভ্য করে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। সঠিক শিক্ষা না থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা সহজেই অবিশ্বাসের ফাঁদে পা দিয়ে ধর্মবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে সমাজ-রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
বইয়ের ভালো-মন্দ কী? ‘অ’-তে অজগর ওই আসছে তেড়ে পড়ে যে শিশু মনে অজগরের ভয় নিয়ে পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় তার মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ আর ‘অ’তে অজু করে নামাজ পড়ি শিখে যে শিশু মহান রবের পদতলে নিজেকে সমর্পণ করতে শিখে শিক্ষার হাতেখড়ি হয় তার বিকাশ কখনও এক হবে না। বর্তমান সামাজিক অস্থিরতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা, সম্মানবোধ ও সম্প্রীতির অভাব তরুণ সমাজের মাঝে ব্যাপক আকারে বিরাজ করছে তার অন্যতম কারণ, ভুল বই পড়ে ভুল শিক্ষা গ্রহণ। সঠিক শিক্ষার অভাবে আজকের তরুণ কাঁচা অর্থের লোভে বই ফেলে টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে যচ্ছে। কলম ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নিচ্ছে মরণঘাতী অস্ত্র। যুবসমাজের দৃঢ়তা আজ তলানিতে ঠেকেছে। অল্প সময়েই হতাশাগ্রস্ত হয়ে হাতে তুলে নিচ্ছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইনের মতো জীবনবিনাশী নেশাদ্রব্য, পরিবারে পরিবারে অশান্তির আগুন ক্রমেই বেড়েই চলেছে, অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। শিশু মস্তিষ্ক অনুধাবন ও সংরক্ষণ ক্ষমতায় পরিপূর্ণ থাকে, ফলে সে যা শিখে পরবর্তী জীবনে তার প্রতিফলন দেখা যায়। একজন ছাত্রের হাতে সঠিক বই তুলে দিতে ব্যর্থ হলে সে ভুল শিক্ষাকেই সত্য মেনে বড় হবে, যা পরবর্তী সময়ে সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হবে এটা অনস্বীকার্য।
সৎসঙ্গের মতো ভালো বইয়ের সঙ্গ আপনাকে আলোকময় করে তুলবে। ভালো বইকে নিত্যসাথী করতে হবে। শিশুর হাতে তুলে দিতে হবে ভালো বই। অশ্লীল বই বর্জন করতে হবে। কারণ ভালো বই যেভাবে আপনাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে, তেমনি অশ্লীল, অনৈতিক ও ধর্ম-কর্মহীন বই আপনাকে খারাপ বানাবে। মানবজীবনে ভালো বইয়ের বিকল্প নেই। ব্যক্তি ও পরিবারকে আলোকময় করার মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত, উন্নত ও সুখী করতে ভালো বই হয়ে উঠবে আলোকবর্তিকা। সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন হয়ে উঠবে আরও সমৃদ্ধ।
আলোকিত বাংলাদেশ। ১২/০২/১৬
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩০