সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ যে কয়টি মৌলিক চাহিদার প্রয়োজন অনুভব করেছে তাঁর অন্যতম হচ্ছে বস্র । লজ্জাস্থানের হেফাজত ,শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি , আভিজাত্য ও পরিবেশের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে মানুষ আদিকাল থেকেই পোশাকের স্বরনাপন্য হয়েছে ।আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মাতা হাওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয়তানের প্ররোচনায় যখন জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার উপক্রম হয়েছেন তখন এই প্রক্রিয়ার শুরু টাই ছিল উনাদের শরীর থেকে জান্নাতি আবরণ সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে যা উনারা সাথে সাথেই অনুভব করেছে গাছেল পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করেছেন ।কোর’আনে আল্লাহ এরশাদ করেন , হে বনী আদম ! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি ৷ আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম ৷ এই আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে (সূরা আ’রাফ ২৬)।
উনারা স্বামী-স্ত্রী থাকার পরও একে অপরকে ল্পজ্জা করেছেন ও আড়ালে অবস্থান নিয়েছেন । একটা সুন্দর ও পরিমিত পরিচ্ছেদ একজন মানুষের জন্য অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে তখন থেকেই বিবেচিত হয়ে আসছে ।
পোশাক বিবির্তনের ইতিহাস অনেক লম্বা । আজকের আধুনিক পোশাক ভাবনায় আসতে লেগেছে দীর্ঘ সময় ।একসময় গাছের চামরা , বিভিন্ন গাছের পাতা এ পশু চামরাই ছিল মানুষের লজ্জা নিবারণের একমাত্র মাধ্যম । তখনো মানুষ সুতা বুনে কাপড় বানাতে শিখে নাই । মানুষ একসময় তুলা ব্যাবহার করে কাপড় বুনতে শিখলো । সেই কাপরে রং লাগিয়ে তৈরি হল আজকের আধুনিক পোশাক ধারণা ।এই ধারণা পুরুষের পোশাকের ধরন আর মহিলাদের পোশাকের ধরনের মাঝে নিয়ে এসেছে বিস্তর ফরাক । পুরুষের জন্য রেশম , উজ্জ্বল রঙের পোশাক হারাম করা হয়েছে । মানুষ সহজলভ্য , মোলায়েম, আরামদায়ক ও দামে সস্তা বলে কাপড় তৈরির জন্য তুলার ব্যাপক ব্যাবহার শুরু করে । আল্লাহ তায়ালার হাজারো সৃষ্ট মাখলুকের অন্যতম শেষ্ঠ নেয়ামত এই তুলা গাছ ।তুলা গাছথেকে উৎপন্ন হয় তুলা যা কাপড় তৈরির অন্যতম উপাদান সুতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহার হয় ।বিশ্বের প্রায় শতভাগ মানুষ পোশাক হিসেবে তুলা দিয়ে বানানো সুতি কাপড় পরতে পছন্দ করে ।
প্রাচীনকাল থেকেই চীন, ভারত ও মিশরে তুলার ব্যবহার হয়ে আসছে।তুলার বৈজ্ঞানিক নাম Gossypium (genus)। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ তুলা বস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহূত হয়। বাকি ২৫ শতাংশ কার্পেট, পর্দা, গৃহস্থালির রকমারি জিনিস তৈরির জন্য এবং অবশিষ্ট তুলা শিল্পের বিভিন্ন কাজে ব্যবহূত হয়ে থাকে। তুলার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। তুলা গাছের কাঠ নরম, হালকা, টেকসই নয়। দিয়াশলাই বাক্স ও কাঠি তৈরিতে এ কাঠ ব্যবহূত হয়। এছাড়া প্যাকিং বাক্স, খেলনা, নিম্নমানের পেনসিল ইত্যাদি তৈরিতে তুলা গাছ ব্যবহূত হয়।
পৃথিবীর প্রধান তুলা উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও মিশর উল্লেখযোগ্য। তুলা উৎপাদনে চীন পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চীনের তুলা তেমন উন্নতমানের নয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলা খুবই উন্নতমানের। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় প্রচুর উচ্চমানের তুলার চাষ হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে প্রায় ১১,৭৬৩ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়। দেশে বার্ষিক উৎপন্ন তুলার পরিমাণ প্রায় ২১,২৯৫ মে টন যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার মাত্র ১৬% মেটায়। তুলা চাষের দায়িত্বে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এ সংস্থা চাষিদের ভাল বীজ ও তুলা চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ যোগানের জন্য তিনটি বীজ উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনা করে, তবে বেশির ভাগ চাষিই নিজ ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করে।
একজন মানুষের অভিজাত্য অনেকংশেই নির্ভর করে তাঁর পরিধেয় পোশাকের উপর। নামাজের অন্যতম অনুষঙ্গ সতর ডাকা যা পোশাকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে ।তুলা আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নেয়ামত যার উত্তম ব্যাবহার , উৎপাদন নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব ।হালাল জীবিকা উপার্যনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠতে পারে তুলা চাষ ও এর বিবিধ ব্যাবহার ।
লেখকঃ প্রকৌশলী
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৭