চীন আমার, আরব আমার, ভারতও আমার নয়কো পর,
জগত জোড়া মুসলিম আমি, সারাটি জাহান বেঁধেছি ঘর।
চীন ও আরব হামারা— বিখ্যাত এই গীতিকাব্যের রচয়িতা হলেন কবি ইকবাল । বুর্জোয়া মৌলভি সমাজের চিন্তাধারা বদলে দিতে স্যর সৈয়দ আহমেদের মতো অনেকেই জোর কোশেশ করলেও কবি ‘শেকওয়া’ লিখে কবি ইকবাল যতটা ধাক্কা দিতে পেরেছিলেন, আর কারও দ্বারা সেটা সম্ভব হয় নি । যদিও অনেকের মতে— পরবর্তী সময়ে ‘জওয়াবে শেকওয়া’ লিখে ইকবাল মৌলভি সমাজকে খুশি করতে চেয়েছিলেন, যেহেতু তার সমাজ-বিচ্ছিন্ন হবার ভয় ছিলো । কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, ইকবাল ‘জবাব’টা প্রস্তুত রেখেই ‘অভিযোগ’ দাঁড় করিয়েছিলেন; যা তার সারা জীবনের অভ্যাস।
ইকবালের বিপ্লবী চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে ভারত ভেঙে পাকিস্তান গড়ে তুলেছেন তৎকালীন মুসলিম গোষ্ঠী । এ নিয়ে যুক্তিতর্ক যা-ই থাক, এতটুকু তো অন্তত মানতে হবে, পাকিস্তানের সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশিদের জন্যে পৃথক একটি রাষ্ট্র গড়া কখনোই সম্ভব ছিলো না। সর্বোচ্চ কাশ্মিরের মতো ঝুলে থাকতে পারতো ।
কিন্তু আমরা ভেবে পাই না— ‘চীন ও আরব হামারা’ লিখে যিনি সারাটি জাহান বেঁধে রাখার বাসনা করেছেন, তিনি কী করে ভারতবর্ষ ভাঙার ফিকির করতে পারলেন ? এমনকি ‘সারা জাহাঁ ছে আচ্ছা, হিন্দুসতাঁ হামারা’র মতো ভারতজোড়া জনপ্রিয় গীতটিইবা রচনা করলেন কোন মানসে ? এর উত্তর হয়তো কখনোই মিলবে না আমাদের ।
ইকবাল লিখেছেন—
কী মুহাম্মদ সে ওয়াফা তুনে, তো হাম তেরে হ্যায়,
ইয়ে জাহা চিজ হ্যায় কেয়া? লওহ কলম তেরে হ্যায়।
তার বিখ্যাত কাব্য ‘জওয়াবে শেকওয়া’র এই শেষ চরণটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কী দারুণ অনুবাদ করেছেন—
আল্লাহ্ কে যে পাইতে চায়, হযরতকে ভালবেসে,
আরশ-কুরসী, লওহ-কলম না চাহিতে পেয়েছে সে।
সন্দেহ নেই— ইকবাল পরবর্তী সময়ে কবি নজরুলসহ অধিকাংশ মুসলিম কবিই ইকবালের রচনায় প্রভাবিত হয়েছেন । কায়কোবাদ, ফররুখ, গোলাম মোস্তফা, শাহাদৎ হোসেন, বেনজির, আহসান হাবীব— সবাই । বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে ইকবালের ‘আসরারের খুদি’ (মান্নান সৈয়দ অনূদিত) ও ‘শেকওয়া-জওয়াবে শেকওয়া’ অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ।
কাশ্মিরি বংশোদ্ভূৎ ইকবাল জন্মগ্রহণ করেছেন শেখ নূর মোহম্মাদ নামের এক দর্জির ঘরে ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর । আর মৃত্যুবরণ করেন ২১ এপ্রিল ১৯৩৮ সালে; তখনও পাকিস্তান সৃষ্টি হয় নি । সুতরাং তাকে পাকিস্তানপন্থী কিংবা বাংলাদেশ-বিরোধী বলার আগে আরও ভেবে দেখতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮