somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবু রিকশা চাই

২৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা মহানগরীর সকলেরই কমবেশি যানজটের বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। গাড়ি ব্যাবহারকারীরা জোরেশোরে রিকশা কমানো বা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের যুক্তি, দ্রুতগামী মোটরযানের সঙ্গে ধীরগতির রিকশা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অশিক্ষিত রিকশাওয়ালারা ট্রাফিক আইন মানে না। কিন্তু শিক্ষিত গাড়ি ও বাস চালকেরাও যে আইন খুব মানে এমন বলা যায় কী? আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে এদেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা বিদ্যমান। কিন্তু মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলাটাও কোনো যুক্তির কথা হতে পারে না। আর তাই আমার এ লেখা রিকশার পক্ষে।

ঢাকার প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মসলিন, মসজিদ এবং বর্ণময় অলংকৃত রিকশা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ঈদের ছুটিতে বা হরতালের দিনের আনন্দময় রিকশা চড়ার অভিজ্ঞতা অনেকে মজা করে গল্প করেন। ঢাকা ঘুরে গেছেন এমন কোনো বিদেশীর কাছে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি অবশ্যই রিকশা চড়ার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। এ সম্পর্কে নোবেল বিজয়ী জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের কথা মনে করা যেতে পারে। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে রিকশাকে উপেক্ষা করা যায় না।

উপরন্তু রিকশা একটি পরিবেশবান্ধব যান। ইহা বায়ু ও শব্দ দূষিত করে না। শুধু এ কারণে হলেও রিকশা থাকা উচিত। উন্নত দেশগুলো যান্ত্রিক যানবাহনের অপকারিতা অনুধাবন করে এখন মোটরবিহীন যানবাহন বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরিবেশবান্ধব যান রিকশা নিউইয়র্কেও দেখা যায়। লন্ডনে এ জাতীয় বাহনকে পেডিক্যাব ও টেক্সাসে বাইক ট্যাক্সি বলে। বাহনের পরিসর বিচারেও রাস্তায় মোটরগাড়ীর তুলনায় রিকশার যাত্রীধারন কার্যদক্ষতা বেশী দেখা যায়।

এবার মানবিক দিকটা বিবেচনায় নেয়া যাক। ২০০৫ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (রিকশা তৈরি, যন্ত্রাংশ সরবরাহ ইত্যাদি) রিকশা চালকদের আয়ের উপর নির্ভরশীল (সূত্র: ওয়ার্ল্ড কেয়ারফ্রি নেটওয়ার্ক )। অন্যদিকে রিকশা চালকদের জীবনধারন অনেক কষ্টকর। তারা বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে; তাছাড়া রাস্তায় তারা সবচেয়ে নিন্ম শ্রেণীর। ফলে তারা প্রায়ই ট্রফিক পুলিশ, গাড়ির চালক, যাত্রী, বাসের চালক ও সাহায্যকারীদের নির্যাতনের স্বীকার হয়। ট্রাফিক পুলিশ প্রায়ই তাদের শারিরিকভাবে আঘাত করে। ট্রাফিক আইনে এধরনের কোনো বিধান থাকার কথা নয়, এটা সরাসরি মানবাধিকারের লঙ্গন। বিবিসি’র এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রিকশা চালকদের গড় আয়ু ৪৫ বছর, যেখানে বাঙ্গালির গড় আয়ু পঁয়ষট্টির বেশী। এরপরও এই কঠর পারিশ্রামি রিকশাওয়ালাদের জীবিকার বিরুদ্ধে একতরফা ক্যাম্পেইন কতটা সঙ্গত?

সবশেষে আসি বাস্তব দিকটায়। অনেকে হয়ত বলবেন, হাঁটা স্ব্যাস্থের জন্য ভাল। কিন্তু কখনো সময়ের অভাবে আবার কখনো পারিপার্শ্বিক কারণে হাঁটা সম্ভব হয় না। শহরের যেখানেই বা ফুটপাথ আছে তার বেশির ভাগ ছোট ছোট দোকান, বাসের টিকিট কাউন্টার, ডাস্টবিন ও সিকিউরিটি চেকপোস্টের দখলে। আবার কেউ কেউ জ্যাম এড়াতে মোটর সাইকেল তুলে দেন ফুটপাতে, কেউবা গাড়ি পার্ক করেন; তাছাড়া যেকোনো সময় কান্ডজ্ঞাহীন বাসযাত্রীদের থুথুর শিকার হওয়ার আশংকা তো রয়েছেই। কখনো কখনো ছিনতাইকারী ও বখাটে ছেলেদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতেও অনেককে রিকশায় চড়তে হয়। অন্যদিকে আছে সিএনজি চালিত স্কুটার। মিটার চালু থাকলে বেশী ভাড়া আসে না। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই চালকরা মিটারে যেতে রাজি হয় না, বিশেষ করে দূরত্ব কম হলে। যেমন গুলশান থেকে বারিধারা, এমন দূরত্বে সিএনজি-চালকরা ৮০ বা ১০০ টাকার কমে যেতে রাজি হয় না। স্বাভাবিকভাবে নগরবাসীদের মধ্যে ৪৯% যাতায়াতের জন্য রিকশার উপর নির্ভরশীল; সিলেট, কুমিল্লা ও রংপুরের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৭৮%, ৮০% ও ৫৫%(সূত্র: বাংলাপিডিয়া )। এর বিপরীতে ঢাকা মহানগরীর মাত্র নয় ভাগ মানুষের গাড়ি আছে। এ পরিসংখ্যানও রিকশা বন্ধের পক্ষে যায় না।

ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-এর অধীনে মিরপুর ডেমনস্ট্রেশন করিডর প্রজেক্টের উপর গবেষণা করে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে মিরপুর রোডকে রিকশা(non-NMT/ নন-মোটরাইজড ভেহিকল) মুক্ত করার ফলাফল হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়, সার্বিক বিবেচনায় সেগুলো রিকশা বন্ধের পক্ষে যায় না। ফলাফলগুলো এরকম-
• উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে আগের তুলনায় অধিক সময় ধরে, বিশেষ করে পিক আওয়ারে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
• মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদের বিকল্প কোনো যানবাহন নেই।
• কিছুক্ষেত্রে রিকশা ভাড়া ও সময় বেশি নেয়।
প্রতিবেদনে এও উল্লেখ করা হয় যে উক্ত প্রেক্ষাপট রিকশা নেটওয়ার্ক অপসারনের পক্ষে পর্যাপ্ত বিবেচনার অভাব প্রতীয়মান করে।

পরিশেষে বলতে চাই, রিকশা বন্ধ বা চলাচলের পরিধি সীমিত করে খুব বেশি লাভ হবে, জোর দিয়ে এ কথা বলা যাবে না। যানজট সমাধানের জন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্পমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করা উচিত। আশা করছি নীতি নির্ধারকরা নগর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×