মুভি রিভিউ দেয়ার বিশ্বকাপের ঠিক আগের এই সময়টার চেয়ে বাজে সময় আর বোধকরি নেই । ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নাম দু'টি ক্ষণে ক্ষণে উচ্চারিত না হলে লোকে এখন কথাই কানে তোলে না , সবুজ , হলুদ , নীল আর আকাশী রং ছাড়া অন্য রঙের দিকে মানুষ যেন ফিরেও তাকায় না । সে কথা মাথায় রেখেই ল্যাটিন ফ্লেভার সহযোগে এই মুভি রিভিউয়ের (অপ)প্রয়াস।
ব্রাজিলের অসাধারণ ৫ টি:
City of God
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি ব্রাজিলের সিনেমাকে নিয়ে গেছে অন্য রকম উচ্চতায় । বিশ্বের সর্বকালের সেরা সিনেমাগুলোর অন্যতম এই মুভিটি আবর্তিত হয়েছে রিও ডি জেনেইরোর শহরতলীতে অল্প বয়েসীদের অপরাধ জগতে ক্রমাগত জড়িয়ে পড়া এবং সে থেকে বিস্তৃত বিরাট অপরাধীদের জাল গড়ে ওঠার ঘটনাকে কেন্দ্র করে । মুভিটির ট্যাগলাইন "Fight and you'll never survive... Run and you'll never escape." সম্ভবত মুভিটি নিয়ে অনেককিছু বলে দেয় । অনন্য নির্মাণশৈলীর এই মুভিটি রইল আমার টপ চয়েসে।
Central Station
১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি বিখ্যাত তার অনন্য মানবিক আবেদনের জন্য । বর্ষীয়ান মহিলা ডোরার পেশা রিও-ডি-জেনেইরোর সেন্ট্রাল স্টেশনে বসে নিরক্ষর মানুষকে চিঠি লেখে দেয়া। ৯ বছরের বালক জোশুয়ার মা ডোরার কাছে নিয়মিত চিঠি লিখিয়ে নেয় , জোশুয়ার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে উদ্দেশ্য করে । একদিন ঘটে যায় মর্মান্তিক এক ঘটনা , বাস চাপায় মারা যান মা , জোসুয়া হয়ে গৃহহীন অনাথে । ডোরা এবার জোসুয়াকে সাথে করে নিয়ে চলে বেচে দেবার উদ্দেশ্যে , কিন্তু হঠাৎ করেই ভেতর থেকে বিবেক যেন তাকে চেপে ধরে । পরের গল্পগুলো শুধুই ছুঁয়ে যাবার..
Barren Lives
উত্তর পূর্ব ব্রাজিলের বিস্তীর্ণ বিরান ভুমিতে খাদ্য , আশ্রয়ের খোঁজে দিনের পর দিন চড়ে বেড়ায় একটি দরিদ্র পরিবার । বাবা ফাবিয়ানো , মা সিনহা , তাদের দু'সন্তান আর একটি কুকুর ছানা । কিন্তু ভাগ্য বিধাতা তাদের সহায় যেন হতেই চাইছেন না । ফিল্মটির বৈশিষ্ট্য হল এর সাইক্লিক নেচার । মুভিটি শেষ হয়ে যাবার পর আবার নতুন করে দেখতে শুরু করলে মনে হবে যেন ঘটনা এগিয়ে চলছে । ১৯৬৩ সালের সিনেমাটি আমার অন্যতম ফেভারিট।
Black God, White Devil
মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে , তবে ঘটনার প্রেক্ষাপট ১৯৪০ এর দশককে ঘিরে। ভাড়াটে বন্দুকধারী বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা আন্তোনিওর জবানীতে মুভির প্রধান চরিত্র দরিদ্র খামার কর্মী ম্যানুয়েল । বঞ্চনার প্রতিবাদে নিজের মালিককে হত্যা করে স্ত্রী সহ অপরাধ জগতে নাম লেখায় ম্যানুয়েল । ধীরে তারা হয়ে পড়ে আরও বৃহত্তর চক্রের অংশ।
Bus 174
২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া ডকুমেন্টারি ফিল্ম । একদল ডাকাত ডাকাতি প্রচেষ্টার পর ঘটনাক্রমে জিম্মি করে ফেলে একটি বাসের যাত্রীদের । ৪ ঘন্টার জিম্মিদশার ঘটনাপ্রবাহে উঠে আসে রিও-ডি জেনেইরোর বস্তিবাসী জীবনের চিত্র , ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থা ।
আর্জেন্টিনার অনন্য ২:
The Secret in Their Eyes
একেবারেই হাল সময়ের মুভি । ২০১০ এর অস্কার মঞ্চে হিসেবে জার্মানীর "দ্যা হোয়াইট রিবন" এবং ফ্রান্সের "দ্যা প্রোফেট" এর মত বাঘা বাঘা মুভিকে পরাভূত করে এটি ছিনিয়ে নেয় সেরা মুভির সম্মান ।১৯৯৯ সালে ফেডারেল জাস্টিস এজেন্ট বেঞ্জামিন এসপিতো অবসর জীবন কাটাতে উদ্যোগ নেন একটি উপন্যাস লেখার । উপন্যাসের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন ২৫ বছর আগের তার কর্মজীবনে কাছ থেকে দেখা অনুদ্ঘাটিত এক হত্যা রহস্যকে । সঙ্গীনি হিসেবে পেয়ে যান এক সময়ের ভালবাসার মানুষ এবং সহকর্মী আইরিনকে । হঠাৎ করেই যেন কেটে যেতে থাকে দীর্ঘদিনের ধোঁয়াশা । কোনদিকে তাহলে মোড় নিতে চলেছে ঘটনাপ্রবাহ ?
অসাধারণ একটি সিনেমা ..
The Motorcycle Diaries
মোটরসাইকেল ডায়েরিজ বইটি নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই । বিপ্লবী চে গুয়েভারাকে বিপ্লবের দীক্ষা দিয়েছিল যে দক্ষিণ আমেরিকা সফর , তাকে উপজীব্য করেই সেলুলয়েডের পাতায় এই মুভির আয়োজন । মুভির স্বল্প পরিসরে ডায়েরির খুঁটিনাটি উঠে না আসলেও , যতটা এসেছে ততটুকু আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে ।